Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অর্থনীতি বেহালই, জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক || বৈঠকে বসবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা

অর্থনীতিতে ঘুণ ধরার এই ছবিটা জানাই ছিল।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অর্থ মন্ত্রকে কার্যত কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অর্থ মন্ত্রকে কার্যত কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১১
Share: Save:

মোদী জমানায় বেকারত্ব আগেই ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হার ছুঁয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার ছ’বছরে এত তলানিতে নামেনি। শিল্পে নতুন লগ্নি নেই। তাই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের প্রয়োজন কম পড়ছে। বাজারে কেনাকাটার উৎসাহ নেই। দামি জিনিসপত্র কিনতেও আমজনতা আগের মতো ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হচ্ছে না।

অর্থনীতিতে ঘুণ ধরার এই ছবিটা জানাই ছিল। বিরোধীরা অভিযোগ করছিলেন, অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে নজর ঘোরাতেই মোদী সরকার নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি নিয়ে এসেছে। কিন্তু নজর সরানো গেল না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আজ জানাল, অর্থনীতির করুণ দশার ফলে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণের বোঝা আগামী এক বছরে বাড়তে পারে। ২০২০-র সেপ্টেম্বরে তা ৯.৯ শতাংশে পৌঁছবে। একই সঙ্গে অর্থনীতির মূল্যায়নকারী সংস্থা ইক্রা-র আশঙ্কা, ব্যাঙ্কের ঋণের বৃদ্ধির হার ৫৮ বছরের রেকর্ড ভেঙে তলানিতে নামতে চলেছে।

আগামিকাল ব্যাঙ্ক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার আগে আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অর্থ মন্ত্রকে কার্যত কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ‘ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি রিপোর্ট’-এ বলেছে, দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির দু’টি ইঞ্জিন—বাজারের কেনাকাটা ও লগ্নি চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জ বহাল থাকছেই। জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাজারে চাহিদা আরও কমেছে। সেই জন্য বৃদ্ধির হার আরও কমেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও এই দু’টি চ্যালেঞ্জের কথা আলাদা করে উল্লেখ করেছেন। অর্থনীতির চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে সরকারি খরচ বাদ দিলে বাকি থাকে শুধু রফতানি। সেখানেও আশার খবর শোনাতে পারছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক বাজারে ঝিমুনির ফলে ভারতের রফতানি ঝোড়ো হাওয়ার মুখে পড়তে পারে। তাই আগামী দিনে, বাজারের কেনাকাটা ও লগ্নিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের ধাক্কা এসে লাগছে কি না, সেই বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: অর্থনীতির শ্লথ গতির প্রভাব আইপিওয়

কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ অর্থনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘মোদীজি বোঝাতে পারছেন না, অর্থনীতির বেহাল দশা কী ভাবে হল। বোধহয় উনি নিজেও বোঝেন না, কী ভাবে হল।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য শিমলায় দাবি করেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে ঝিমুনির সাময়িক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মোদীজি, নির্মলা সীতারামনজি এর মোকাবিলায় রাতদিন লড়াই করছেন। আমার বিশ্বাস, ভারতের অর্থনীতি বিশ্বে সকলের আগে ঝিমুনি থেকে বেরিয়ে আসবে।’’

কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি, ঋণের বৃদ্ধি কমে যাওয়ার ধাক্কায় ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণ বা এনপিএ ২০২০-র সেপ্টেম্বরে ৯.৯ শতাংশ ছোঁবে। যা ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে ৯.৩ শতাংশে ছিল। অর্থ মন্ত্রকের মতোই আর্থিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শেয়ার বাজারে এর জেরে ধস নামতে পারে। কেয়ার রেটিংস-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ মদন সবনভিসের মতে, এ থেকে স্পষ্ট, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে রাহুর দশা এখনও কাটেনি। শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীরা এর ফলে সাবধানী হয়ে পড়তে পারেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর এইচ আর খানের মতে, ‘‘ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি না পেলে স্বাভাবিক যে এনপিএ-র হার বাড়বে।’’

মূল্যায়নকারী সংস্থা ইক্রা-র অনুমান, চলতি অর্থ বছরে ব্যাঙ্কের ঋণ বৃদ্ধির হার মাত্র ৬.৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে আটকে থাকবে। গত বছরেও যা ১৩.৩ শতাংশ ছিল। তা সত্যি হলে ১৯৬২-র পরে ঋণ বৃদ্ধির হার এই প্রথম এতটা নীচে নামবে। সে বছর ঋণের বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৪ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও আজ জানিয়েছে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা মোটেই ভাল নয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বারের সেপ্টেম্বরে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির হারও কমের দিকে, মাত্র ৮.৭ শতাংশ। রাহুলের কটাক্ষ, ‘‘এখন প্রধানমন্ত্রীর যে কাজ, সেটা উনি করতে পারছেন না। কেউ কিছু কিনছেন না। কারখানা বন্ধ। অর্থনীতি কঠিন বিষয় নয়। আগে বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ ছিল, এখন ৪ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। তা-ও নতুন পদ্ধতিতে মেপে। পুরনো পদ্ধতি হলে বৃদ্ধির হার মাত্র ২.৫ শতাংশ। গরিব মানুষ একটাই প্রশ্ন করছেন— রোজগার কী ভাবে মিলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE