Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আচ্ছা বাবু, রিকশা ভাড়া বাড়বে তো?

এ কি আর নোট ব্যান নাকি? যে চট বুঝে যাবে। এরে কয় জিএসটি। মোবাইলে নেট অন করে জাল ফেলো। দেখো, কী উঠে আসছে। গুগল নাকি সব জানে! কম যায় না সোশ্যাল মিডিয়াও। কিন্তু রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে নেপুদাও যে নেটে জড়াবে কে জানত!

গৌরব বিশ্বাস ও সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০৩:৫৭
Share: Save:

তাহলে হাতে রইল মোবাইল!

—ইয়ার্কি হচ্ছে? হাতে তো পেনসিল ছিল।

—আহা, সে তো সুকুমার রায়ের হযবরল-তে। এ তো অন্য কেস! এবং সেটা জন্ডিস। জ্বরও বলতে পার।

—অ, তাহলে সেই জ্বরেই বুঝি সক্কলে কাঁপছে।

—না, মানে এখনও জ্বর সে ভাবে আসেনি। তবে আসবে। সেই আসবে আসবে ভেবেই এমনটা হচ্ছে। এ-ও এক ফোবিয়া বলতে পারো। নামও দিতে পারো—কামোফোবিয়া!

—তা হলে মোবাইল কেন?

—আহা, নাহলে জালে জড়াবে কী করে?

—প্রথমে ক্যালকুলেটার। হিসাবে কষতে হবে কর কী ছিল, আর কী হল!

—কী রকম?

—হিসেবটা সেই কাকের মতো। সাত দু’গুণে চোদ্দো শোনার পরে সেই কাকটা বলেছিল, ‘তখনও পুরো চোদ্দো হয়নি। তখন ছিল, তেরো টাকা চোদ্দো আনা তিন পাই। আমি যদি ঠিক সময়ে বুঝে ধাঁ করে ১৪ লিখে না ফেলতাম, তাহলে এতক্ষণে হয়ে যেত চোদ্দো টাকা এক আনা নয় পাই।’

—কিছুই তো বুঝলাম না!

—হ্যাঁ, তাহলেই বুঝবে ঠিক পথে এগোচ্ছো। এ কি আর নোট ব্যান নাকি? যে চট বুঝে যাবে। এরে কয় জিএসটি। মোবাইলে নেট অন করে জাল ফেলো। দেখো, কী উঠে আসছে।

গুগল নাকি সব জানে! কম যায় না সোশ্যাল মিডিয়াও। কিন্তু রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে নেপুদাও যে নেটে জড়াবে কে জানত!

পাশ থেকে অঙ্কের শিক্ষক প্রশান্তবাবু বললেন, ‘‘ভায়া, নেপুদার মতো বেশিরভাগ আম পাবলিক এখন আম কিনতেও ভয় পাচ্ছে। ভাবছে, ল্যাংড়ার নামে দোষ, হিমসাগরে বোধহয় জিএসটি লাগু হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি একেবারে ঘেঁটে ঘ।’’

কথাটা কথার কথা নয়। ট্রামে, ট্রেনে, চাতালে, পাতালে, মাচায়, ধাবায়, বাসে, রিকশায়, চায়ের দোকান, মায় কলেজ ক্যাম্পাস, একটাই আলোচনা—জিএসটি। টুং-টাং লেগেই রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়ায়।

অন্তর্জালের বার্তা নিয়ে আর কে কবে ঠিক-ভুল বিচার করেছে। অতএব, সকাল সন্ধ্যা চায়ের কাপে তুফান। কখনও পায়রাকে ছোলা খাওয়ানো গল্পের উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে জিএসটি। কখনও জিএসটি-র ফুল ফর্ম—গয়া সুখ তুমহারা। কারও দাবি, অচ্ছে দিন এল বলে। কারও পাল্টা—অচ্ছে দিন শেষ। এ বার অচ্ছে রাত! পাশ থেকে কারও ফোড়ন—ও সব থাক, জিএসটি-ই এখন আসলি বাত!

রিকশায় উঠে মোবাইলেও সেই এক ঘ্যানরঘ্যানর। বেশ জোর গলায় কথা বলছিলেন এক যুবক। চালক সে সব মন দিয়েই শুনছিলেন। কিন্তু বিশেষ কিছুই বুঝতে পারেননি। শুধু ভাড়াটা গুনে নেওয়ার সময় কপালের ঘাম মুছে এক বার জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘তা বাবু, জিএসটি চালু হলে রিকশার ভাড়াটা বাড়বে তো?’’ —বোঝো কাণ্ড!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

GST Rickshaw
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE