শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। —ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুমের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমজনতার আশঙ্কা চড়া মূল্যবৃদ্ধির জাঁতাকল। তবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) আশা, সেপ্টেম্বর থেকেই মাথা নামা নামাতে শুরু করবে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি। শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের দাবি, গ্যাসের দাম কমানো এবং চাল-ডাল-আনাজপাতির দর কমাতে কেন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফল মিলবে এ মাস থেকেই। সেই সম্ভাবনা যে রয়েছে তা মানছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তবে তাঁদের সতর্কবার্তা, বিরূপ আবহাওয়া ও অন্য কোনও কারণে জোগান-শৃঙ্খল ধাক্কা খেলে ফের সমস্যা বাড়তে পারে।
দাম রাশ টানতে গত বছর থেকে টানা ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছিল আরবিআই। মাঝে কমলেও গত জুনের ৪.৮৭ শতাংশের তুলনায় জুলাইয়ে এক ধাক্কায় খুচরো মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছেছে ৭.৪৪ শতাংশে। যা ১৫ মাসের সর্বাধিক। মূলত অত্যাবশ্যক খাদ্যপণ্যের চড়া দামই যার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষা আগেই বলেছে, অন্তত আরও কিছু মাস মূল্যবৃদ্ধির হার শীর্ষ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যের (৬%) উপরেই থাকবে।
আর কয়েকদিন পরে অগস্টের মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান বেরোবে। তবে সম্প্রতি শক্তিকান্ত জানান, গত মাসের সেই মূল্যবৃদ্ধি চড়া থাকারই আশঙ্কা। তাঁর দাবি, জুলাইয়ে চড়া মূল্যবৃদ্ধি সকলকে অবাক করেছে ঠিকই। কিন্তু বাজারে আনাজ-সহ বিভিন্ন পণ্যের যে দাম দেখা যাচ্ছিল, সেটা খানিকটা প্রত্যাশিতও ছিল। তবে তিনি বলছেন, টোম্যাটোর দর ইতিমধ্যে মাথা নামিয়েছে। অন্যান্য আনাজের দরও পড়তির দিকে। কেন্দ্র সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যের দামে রাশ টানতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা বসেছে। কমানো হয়েছে রান্নার গ্যাসের দাম। তাঁর কথায়, ‘‘সেপ্টেম্বর থেকে জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করবে বলে আশা করছি।’’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনতে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছিলেন। কারণ, জিনিসের দাম মাথা তুললে চাহিদা ধাক্কা খাবে। সে ক্ষেত্রে তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে আর্থিক বৃদ্ধিতে। পরের বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে যা মোদী সরকারের কাছে চিন্তার।
আর এই প্রসঙ্গেই আবহাওয়া-সহ নানা কারণে জোগানের সমস্যাকে তুলে ধরছেন আইআইএম, কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক পার্থপ্রতিম পাল। তাঁর বক্তব্য, এটা ঠিক যে নানা পদক্ষেপের হাত ধরে বাজারে জোগান বাড়ায় খুচরো মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামানোর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, কৃষি ও উৎপাদন শিল্পের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয়নি। ফলে চাহিদা কতটা বাড়বে, তা স্পষ্ট নয়। সেই সঙ্গে বিরূপ আবহাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে ফের জোগান ধাক্কা খেলে এবং চাহিদা না বাড়লে অর্থনীতিতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই এখন মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা মাথা নামালেও জোগান-শৃঙ্খল নিশ্চিত না করতে পারলে ফের তা মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা থাকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy