E-Paper

আয়করে ছাড় থেকে জিএসটি কাঠামোর পুনর্বিন্যাস, একাধিক ‘ওষুধেও’ চাঙ্গা হচ্ছে না বাজার

প্রশ্ন উঠছে মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে এত কিছু পেয়েও বাজার কেন তেমন চাঙ্গা হচ্ছে না। সেনসেক্স সর্বোচ্চ শিখরে (৮৫,৮৩৬) উঠেছিল প্রায় এক বছর আগে, ২৬ সেপ্টেম্বর।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৪
সেনসেক্স  এখন দাঁড়িয়ে ৮০,৭১১ অঙ্কে।

সেনসেক্স এখন দাঁড়িয়ে ৮০,৭১১ অঙ্কে। —প্রতীকী চিত্র।

জিএসটির চারটি হারের মধ্যে দু’টি তুলে দেওয়া এবং পণ্যের পুনর্বিন্যাস ছিল গত সপ্তাহের বড় খবর। নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু জিনিসে কর অনেকটা করে কমায় নিম্ন এবং মধ্যবিত্তেরা বেজায় খুশি। চলতি বছরের গোড়ায় বড় মাপের ছাড় মিলেছিল প্রত্যক্ষ করে (আয়কর)। ছ’মাস যেতে না যেতেই আকর্ষণীয় ছাড় পরোক্ষ করেও (ব্যয়কর)। অথচ এত বড় সংস্কারের খবরে বাজার তেমন ভাবে তেতে ওঠেনি। একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে আয়করে বড় ছাড় এবং তার পরে তিন দফায় মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাইয়ের পরেও।

প্রশ্ন উঠছে মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে এত কিছু পেয়েও বাজার কেন তেমন চাঙ্গা হচ্ছে না। সেনসেক্স সর্বোচ্চ শিখরে (৮৫,৮৩৬) উঠেছিল প্রায় এক বছর আগে, ২৬ সেপ্টেম্বর। ১ অক্টোবরের পরে সব থেকে বেশি ওঠে (৮৪,০৫৯) ২৭ জুন। এক সময়ে নেমেও গিয়েছিল ৭৩ হাজারের ঘরে। এখন দাঁড়িয়ে ৮০,৭১১ অঙ্কে। তথ্য বলছে, এর একটি প্রধান কারণ বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির লাগাতার শেয়ার বিক্রি। যে কারণে মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে মোটা টাকা ঢালা সত্ত্বেও সূচক উঠছে না। এখন দেখার জিএসটি কমার পরে শিল্প এবং বাজারে কতটা প্রাণ ফেরে। ভারতের উপরে আমেরিকার ৫০% শুল্ক চাপানো এবং দু’দেশের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তাও শেয়ার বাজারে ঝিমুনির কারণ।

সম্প্রতি জিএসটি পরিষদের বৈঠকে তুলে নেওয়া হয়েছে ২৮% এবং ১২% করের স্তর। থেকে গিয়েছে শুধু ১৮% এবং ৫%। ২৮% থেকে বেশির ভাগ পণ্য নেমে এসেছে ১৮ শতাংশে। ১২ শতাংশে থাকা অনেক কিছুতে কর কমে হচ্ছে ৫%। কিছু পণ্য-পরিষেবা থেকে জিএসটি পুরো উঠে গিয়েছে। কর কমে যাওয়া পণ্যের তালিকা বিরাট। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ওষুধ, সিমেন্ট, বিমার প্রিমিয়াম, ছোট গাড়ি, টিভি, এসি, জুতো, বিভিন্ন খাদ্যপণ্য এবং নিত্য ব্যবহারের পণ্য। তবে ক্ষতিকর কিছু পণ্যে কর ৪০%। তামাক, সিগারেট ছাড়াও এতে রয়েছে চিনি মিশ্রিত কিছু নরম পানীয়। কোন পণ্যে কতটা দাম কমতে পারে তা নিয়ে হিসেব চলছে। নতুন হার চালু হবে নবরাত্রির প্রথম দিন অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। ক্রেতা তাকিয়ে সেই দিকে।

পণ্যের দাম কমলে চাহিদা বাড়তে পারে। এতে উপকৃত হবে বহু শিল্প। যেমন, সিমেন্ট এবং গাড়ির দাম কমলে লাভ তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইস্পাত, রং, রবার, প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিক, বৈদ্যুতিনের মতো শিল্পের। ৭৫০০ টাকা পর্যন্ত হোটেলের ঘরে জিএসটি কমায় সুদিন দেখবে পর্যটন। শিল্পপণ্যের চাহিদায় যে ভাটা এক বছর ধরে চলছিল, তার কিছুটা সুরাহা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অনুমান, জিএসটি সংস্কারে ৪৭,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। এতে সমস্যা হতে পারে কি? একদমই না। কারণ, ছাড়ের অঙ্ক জিএসটি সংগ্রহের ২.১৩%। বিক্রি বাড়লে সেটা পুষিয়ে যাওয়ারও আশা। গত অর্থবর্ষে এই খাতে আয় হয়েছিল ২২.০৯ লক্ষ কোটি টাকা। একাংশের মতে, রাজস্ব আদায় এত বেড়ে ওঠায় দেশবাসী এবং শিল্পের স্বার্থে অনেক আগেই কর কমানো উচিত ছিল। এখন প্রশ্ন, জিএসটি কমলেও সেই অনুপাতে দাম কমবে তো? সরকারকে দেখতে হবে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে রেখে সুবিধাটুকু যেন শুষে না নেন। অনেক ব্যবসায় খরচ বাবদ করের কিছু টাকা ফেরত (ইনপুট ক্রেডিট) মেলে। জিএসটি কমলে তা কমবে। তাই দাম যতটা কমবে মনে হচ্ছে, ততটা না-ও হতে পারে। তবে মূল্যবৃদ্ধি আরও নামতে পারে। তাতে তৈরি হবে সুদ আরও কমানোর জায়গা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

GST price share

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy