নোট বাতিলের ধাক্কা এখনও হিসেবের মধ্যেই আসেনি। তথ্য নেওয়া হয়েছে বড়জোর অক্টোবর পর্যন্ত। আর তাতেই চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার মোদী সরকারের জমানায় সব থেকে কম হতে চলেছে বলে পূর্বাভাস দিল খোদ কেন্দ্র।
শুক্রবার পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, আগাম অনুমান অনুযায়ী এই অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৭.১% হতে পারে। যেখানে গত বছর (২০১৫-’১৬) ওই হার ছিল ৭.৬%। অনুমান সত্যি হলে তা হবে এই সরকারের আমলে সবচেয়ে কম বৃদ্ধির হার। কিন্তু আশঙ্কা সেখানেই শেষ নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসলে বৃদ্ধি নেমে যাবে আরও অনেকখানি নীচে। কারণ, নোট নাকচের প্রভাব এই অনুমানে ধরা হয়নি। তথ্য নেওয়া হয়েছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত। ফলে ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার জের যখন শেষ দুই ত্রৈমাসিকে পড়বে, তখন বৃদ্ধির হার আরও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। যেমন, এসবিআই রিসার্চের মতে তা হতে পারে ৬.৭%।
মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ টি সি এ অনন্ত বলেন, ‘‘যা তথ্য ছিল, তার ভিত্তিতেই অনুমান কষা হয়েছে। যে বিষয়ে তথ্য নেই, তার কতখানি প্রভাব পড়বে, তা বলা মুশকিল।’’
অবশ্য অক্টোবর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতেই যে ছবি সামনে এসেছে, তা তেমন আশাপ্রদ নয়। কল-কারখানায় উৎপাদন কমছে। খনন সঙ্কুচিত। ফল তেমন ভাল নয় পরিষেবাতেও। কিছুটা মুখ বাঁচিয়েছে কৃষি। সেখানে উৎপাদন বাড়ার কথা চোখে পড়ার মতো। আর ফল ভাল প্রশাসন-প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। তার মানে কৃষিতে আগের দু’বছর খরার পরে এ বার বৃষ্টি ভাল হওয়ার সুফল কুড়িয়েছে কেন্দ্র। আর প্রশাসন-প্রতিরক্ষায় বেড়েছে সরকারি ব্যয়। কেন্দ্র এত ঢাকঢোল পেটানোর পরেও বেসরকারি বিনিয়োগ এখনও মাথা তোলেনি। গতি ফেরেনি কারখানার চাকায়। খননের অবস্থা তথৈবচ। তারই মধ্যে সামান্য সুখবর এ বার দেশে মাথাপিছু আয় বছরে ১ লক্ষ টাকা পেরোনোর সম্ভাবনা। যদিও গত বারই তা ছিল ৯৩ হাজার টাকার বেশি।
অর্থনীতিবিদ এম গোবিন্দ রাওয়ের কথায়, ‘‘৭.১% বৃদ্ধির আশা দাঁড়িয়ে সরকারি, বেসরকারি ও আমজনতার খরচের উপর। কিন্তু নোট বাতিলের ফলে তাতে কোপ পড়েছে। ফলে বৃদ্ধি ৭.১ শতাংশের থেকে কম হতে বাধ্য।’’ প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ ভিরমানির যুক্তি, ‘‘প্রায় সব ক্ষেত্রের পরিসংখ্যানই কমতির দিকে।’’ তার উপর আশঙ্কা হল, এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই আগামী বাজেটের অঙ্ক কষবে অর্থ মন্ত্রক। নভেম্বর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ধাক্কা খাওয়ায় কর আদায় কমতে শুরু করেছে। ফলে এই অনুমানের ভিত্তিতে রাজকোষ বা রাজস্ব ঘাটতির হিসেব করা হলে, তা অবাস্তব হবে বলে গোবিন্দ রাওয়ের ধারণা।
কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাসের অবশ্য যুক্তি, নোট বাতিলের পরে দিশা কী হবে, আর্থিক সমীক্ষা ও বাজেটেই তা স্পষ্ট করা হবে। কিন্তু নোট নাকচের জেরে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার অনেকটাই নানা ঘটনার ভিত্তিতে। তার কোনও বাস্তব পরিসংখ্যান নেই। বরং তথ্য বলছে, নভেম্বরে প্রতিটি রাজ্যের ভ্যাট আদায় বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রার থেকেও বেশি রাজস্ব আয় হবে বলে তাঁর দাবি। শক্তিকান্তবাবু বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে মন্দার ছায়া। তা-ও সে তুলনায় এ দেশের ছবিটা অনেক উজ্জ্বল।’’
সাধারণত ৭ ফেব্রুয়ারি জিডিপি-র আগাম অনুমান পেশ করা হয়। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে অঙ্ক কষা হয়। কিন্তু এ বার বাজেট এগোচ্ছে। তাই এগিয়েছে অনুমানের সময়ও। কিন্তু শেষমেশ তা মিলবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy