—প্রতীকী চিত্র।
আজ সোমবার ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথমার্ধ শেষ হচ্ছে। এই ক’মাসে শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরা দারুণ রিটার্ন পেয়েছেন। সেনসেক্স ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ শেষ করেছিল ৭৩,৬৫১ পয়েন্টে। পরবর্তী ছ’মাসে ৩০ শেয়ার সম্বলিত সূচকটি ৮৫,৫৬৮ অঙ্কে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, মাত্র ছ’মাসে দৌড়েছে প্রায় ১২,০০০ পয়েন্ট। এই স্বপ্নের দৌড় প্রায় সব শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালুতে (ন্যাভ) ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শতাংশের হিসাবে অনেক ফান্ডই রিটার্ন দিয়েছে ১৫%-২০%। এমনকি, কোনও কোনও ফান্ড তার চেয়েও বেশি। সেই সঙ্গে একের পর এক সংস্থা বাজারে নিয়ে আসছে প্রথম শেয়ার (আইপিও)। সেগুলির চাহিদাও চমকে দেওয়ার মতো!
অতিমারির প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সেনসেক্স ৪২,৫৯৭ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছিল। তার পর চার বছরের কম সময়ে সূচকটি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বাজার আশাতীত রিটার্ন দেওয়ায় ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে বহু মানুষ ঢুকে পড়েছেন শেয়ার ও ফান্ডের দুনিয়ায়। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট এবং ফান্ডের লগ্নিকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। শুধু অগস্টেই খোলা হয়েছে ৪০ লক্ষ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটিরও বেশি। অন্য দিকে, ফান্ডের লগ্নিকারীর সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৫ কোটিতে। তাঁদের ফোলিয়োর সংখ্যা ২০ কোটি পার করেছে। ফান্ডে লগ্নি করা মোট সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে পৌঁছেছে ৬৬.৭০ লক্ষ কোটি টাকায়। গত আট মাসে যোগ হয়েছে প্রায় ১৬ লক্ষ কোটি। ফান্ডের মাধ্যমে বাজারে পুঁজি ঢোকাও সূচকের ফুলে ফেঁপে ওঠার অন্যতম কারণ। গত শুক্রবার বিএসই-তে নথিভুক্ত সমস্ত শেয়ারের মোট মূল্য ছিল ৪৭৭.৯৩ লক্ষ কোটি টাকা। একই দিনে নথিবদ্ধ লগ্নিকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯.২৩ কোটি।
তবে শুধু শেয়ার বাজারই নয়, ভরা জোয়ার চলছে নতুন ইসুর বাজারেও। প্রত্যেক সপ্তাহ এবং প্রত্যেক মাসে ঝাঁকে ঝাঁকে নতুন ইসু আসছে। অনেকগুলিতে আবেদন জমা পড়ছে প্রয়োজনের তুলনায় বহু গুণ। ফলে এই সব শেয়ার যখন বাজারে নথিভুক্ত হচ্ছে, তখন দামও উঠছে ইসুর দামের তুলনায় অনেক উপরে। সম্প্রতি এমন একটি বড় ইসু ছেড়েছিল বজাজ হাউসিং ফিনান্স কোম্পানি। আগামী দিনগুলিতেও ইসুর জোয়ার চলবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি সংস্থা হুন্ডাই মোটরস, এনটিপিসি গ্রিন, সুইগি, এইচডিবি ফিনান্স, হিরো ফিনকর্প এর অন্যতম। প্রত্যেকটি ইসুর আকারই বেশ বড় হবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে নামী ইসু হওয়ার ফলে আবেদন করলেই পাওয়া যাবে এমনটা নয়। বিগত কয়েকটি ভাল আইপিও-র ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের বড় অংশের সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
হুন্ডাই মোটরসের ইসুটি সম্ভবত দেশে এ যাবত বৃহত্তম ইসু হতে চলেছে। আকার হতে পারে ২৫,০০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই সেটি সেবির অনুমোদন পেয়েছে। এখনও পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম ইসু ২০২২ সালে বাজারে আসা এলআইসির আইপিও। যার আকার ছিল ২০,৫৫৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালে বড় ইসু নিয়ে হাজির হয়েছিল পেটিএম। তার আকার ছিল ১৮,৩০০ কোটি। কোল ইন্ডিয়ার ১৫,১৯৯ কোটি। তৈরি খাবার পৌঁছে দেওয়ার সংস্থা জ়্যোম্যাটোর আইপিও সফল হওয়ার পরে এ বার বাজারে আসতে চলেছে একই ধরনের আর এক সংস্থা সুইগির আইপিও। তারা ১১,৬০০ কোটি টাকা তুলতে চায়। এই শেয়ারটি নিয়ে মুম্বইয়ের সিনেমা জগৎ এবং ক্রীড়া জগতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এরই মধ্যে। বস্তুত, ইসুটি বাজারে আসার আগেই সংস্থার শেয়ার কিনে বসে আছেন অমিতাভ বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত, কর্ণ জোহর, রাহুল দ্রাবিড়, জ়াহির খান, রোহন বোপান্নার মতো তারকারা। এর থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ইসুটি কতটা জনপ্রিয় হতে চলেছে। এ ছাড়া বড় আইপিও আনতে চলেছে এনটিপিসি গ্রিন। যার আকার হতে পারে ১০,০০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, মানুষ ইসুর বাজারে টাকা ঢালা সত্ত্বেও শেয়ার বাজারে কিন্তু নগদের জোগানের অভাব হচ্ছে না। সমান তেজি ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে শেয়ারের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বাজারে। আগামী দু’মাসের মধ্যে বাজারে দেখতে পাওয়া যাবে কয়েকটি নামী ইসুকে। এ ছাড়াও ছোট ও মাঝারি মাপের বহু সংস্থা (এসএমই) নাগাড়ে বাজারে নতুন শেয়ার নিয়ে আসছে।
শেয়ার বাজার যখন তুঙ্গে, তখন সেবির তরফে ফিউচার এবং অপশনের লেনদেনকারীদের সাবধান করা হচ্ছে। ঝুঁকি কমাতে এই লগ্নিক্ষেত্রে কড়াকড়ির ভাবনা চলছে। সেবির একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এই ধরনের ৯১% লেনদেনকারীকে গড়ে ১.২ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy