গত সপ্তাহে এক দিকে যখন স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ বাড়ার খবর কিছুটা হলেও হাসি ফোটাল সাধারণ মানুষের মুখে, অন্য দিকে তখন বাজারের হঠাৎ করে তলিয়ে যাওয়া কাপুঁনি ধরাল লগ্নিকারীদের মনে। যার জেরে সপ্তাহ শেষ হল দোলাচলের মধ্যে দিয়ে।
বহু দিন পরে সুদ নির্ভর মানুষকে স্বস্তি দিয়ে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ বাড়ানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। নতুন হার চালু হবে ১ অক্টোবর থেকে। অনেকেরই আশা, সুদ বাড়ায় পুরনো আকর্ষণ ফিরে পাবে জনপ্রিয় কিছু প্রকল্প। যেমন, ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্প, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, পিপিএফ, এনএসসি ইত্যাদি।
পুজোর মুখে এই বৃদ্ধি খুশি করেছে বহু মানুষকে, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিকদের। প্রবীণদের প্রকল্পে সুদ বেড়ে হয়েছে ৮.৭%। প্রকল্পটিতে সর্বাধিক লগ্নি করা যায় ১৫ লক্ষ টাকা। সুদ দেওয়া হয় তিন মাস অন্তর। প্রকল্পটির মেয়াদ ৫ বছর হলেও শেষের দিকে তা আরও তিন বছর বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
এই খবরে যখন আশার আলো দেখছেন সাধারণ মানুষ, ঠিক তখনই লগ্নিকারীদের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে শেয়ার বাজার। টানা তিন দিন পড়ার পরে শুক্রবার বাজার খুলেছিল বেশ খানিকটা উপরে। খুশি ছিলেন লগ্নিকারীরা। কিন্তু দুপুর হতেই তা বদলে যায় আতঙ্কে। কারণ, গৃহঋণ সংস্থা ও অন্যান্য কয়েকটি ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফসি) নগদ ফুরিয়ে আসছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। ফলে তারা ঋণ মেটাতে পারবে না বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। ইতিমধ্যেই আইএল অ্যান্ড এফএসের এই রকম অবস্থা চলায়, তা চিন্তা বাড়ায় অন্যান্য কিছু সংস্থার আর্থিক হাল সম্পর্কেও। ফলে লগ্নিকারীরা দ্রুত ওই সব সংস্থার শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। ফলে দাম পড়ে অন্যান্য সংস্থারও। বড় ধস নামে বাজারে। এক সময় সেনসেক্স তলিয়ে যায় ১,১২৮ পয়েন্ট।
তবে এই পতন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ভূমিকম্পের মতোই বাজারকে কয়েক মিনিট কাঁপিয়ে স্তব্ধ হয়। দিনের শেষে সেনসেক্স ২৮০ পয়েন্ট নেমে বন্ধ হয় ৩৬,৮৪২ অঙ্কে। সারা দিনে সূচক ওঠাপড়া করে ১,৪৯৬ পয়েন্ট।
এই আতঙ্কে সবচেয়ে বেশি পড়েছে দিওয়ান হাউসিং ফিনান্সের শেয়ার। এক সময় প্রায় ৬০% খুইয়ে তা নেমে এসেছিল ২৪৬ টাকায়। পরে সংস্থার তরফে আশা জাগানো বিবৃতি দেওয়া হলে দর কিছুটা ওঠে। কিন্তু তা-ও পতন ৪২%। এই ঘটনার পরে শনিবার সব ঋণ প্রকল্পের রেটিং পর্যালোচনা করিয়েছে সংস্থাটি। মূল্যায়ন সংস্থা কেয়ার জানিয়েছে, সব প্রকল্পেরই পুরনো রেটিং বহাল আছে।
এই খবরের পাশাপাশি লগ্নিকারীদের স্বস্তি দেবে মিউচুয়াল ফান্ডে খরচ কমানো নিয়ে সেবির নির্দেশ। এর ফলে ফান্ডে টাকা ঢালতে গেলে পকেট কম হালকা হবে তাঁদের। তবে লাভ কমবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলির। যে কারণে ইতিমধ্যেই তাদের শেয়ারের দাম কিছুটা নেমেছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)