বহু দিন ধরে অভিযোগ উঠছে, অর্থের অভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু আবাসন প্রকল্প আটকে। বিশেষত যেগুলি তুলনায় কম দামের। ফলে সমস্যায় পড়েছেন অসংখ্য সাধারণ ক্রেতা। অভিযোগ, তাঁদের টাকা তো আটকে গিয়েছেই। সেই সঙ্গে একাংশ হারাতে বসেছেন মাথা গোঁজার আস্তানা। এ বার সেই সমস্ত প্রকল্পের জট ছাড়িয়ে নির্মাণ সম্পূর্ণ করার জন্য কেন্দ্রকে একগুচ্ছ পরামর্শ দিল সুপ্রিম কোর্ট। জানাল, এই সমস্যার নীরব দর্শক হিসেবে থাকতে পারে না সরকার। বরং কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।
পরামর্শগুলির মধ্যে রয়েছে—
- অর্থের অভাবে যে সব প্রকল্প আটকে, সেগুলি শেষ করতে বিশেষ তহবিল গড়ুক কেন্দ্র।
- মধ্যবিত্তের সাধ্যের আবাসন সংক্রান্ত তহবিলের পরিসর বাড়িয়ে তার আওতায় নির্মাণ সম্পূর্ণ করা যায়।
- মধ্যবিত্তের আবাসন সংক্রান্ত তহবিলের টাকা ঠিক মতো খরচ হচ্ছে কি না, তা দেখতে সিএজিকে দিয়ে অডিট করানো হোক।
- প্রকল্পগুলিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় এনে সম্পূর্ণ করা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখুক।
- কোম্পানি ট্রাইবুনাল কিংবা সম্পদ পুর্নগঠন সংস্থার মতো সংগঠন গড়তে পারে সরকার, যারা থমকে থাকা আবাসন শেষ করার ব্যবস্থা করবে। অন্তত মানুষের অভিযোগ জানানোর জায়গা থাকবে। এ জন্য দেউলিয়া আইনকে ব্যবহার করা যায়।
সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তা নিয়ে তিন মাসে রিপোর্ট দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তাদের পরামর্শ, চাইলে কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ করে দায়িত্ব দিতে পারে কেন্দ্র।
বিচারপতি জে বি পার্দিওলা এবং বিচারপতি আর মাধবনের বেঞ্চের মতে, নির্মাতারা যাতে ক্রেতাদের সঙ্গে ছলচাতুরি করতে না পারে, সে দিকে নজর রাখা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কেউ মানুষকে নিজস্ব আস্তানার স্বপ্ন দেখিয়ে তা মাঝপথে আটকে দিলে, তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত। সময়ে প্রকল্প শেষ করে ক্রেতাকে হস্তান্তর জরুরি। আদালতের পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি যেন তাই রেরা-কে (আবাসন আইন) ‘নখদন্তহীন’ সংগঠন বানিয়ে না রাখে। সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা, পরিকাঠামো থাকা উচিত।
এই সংক্রান্ত রায়ে বিচারপতিরা জানিয়েছেন, মধ্যবিত্ত বহু মানুষ নিজস্ব বাড়ির স্বপ্ন দেখে তাতে সারা জীবনের সঞ্চয় ঢেলেছেন। তার পরেও সময়ে তা হাতে পাচ্ছেন না অনেকে। কিন্তু হয়তো এক দিকে ঋণের কিস্তি এবং অন্য দিকে মাসিক ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এই অবস্থা তৈরি হয় কোনও কারণে তাঁদের প্রকল্প শেষ না হওয়ায়। ফলে এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)