ইতিহাসের অন্যতম তিক্ত ও দীর্ঘ কর্পোরেট লড়াইয়ে সাইরাস মিস্ত্রি এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে জয়ী হল টাটা গোষ্ঠী। ২০১৬ সালে সাইরাসকে আচমকা টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর যে সিদ্ধান্তকে দমনমূলক তকমা দিয়েছিল এনসিএলএটি, শুক্রবার তাকেই সঠিক বলে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে ওই পদে মিস্ত্রিকে পুনর্বহালের যে নির্দেশ দিয়েছিল এনসিএলএটি, তা খারিজ করেছে প্রধান বিচারপতি এসএ বোবডে, বিচারপতি এএস বোপান্ন এবং ভি রামসুব্রহ্মণ্যনের বেঞ্চ। বলেছে, ‘‘...আইনের সমস্ত প্রশ্নের উত্তরই আবেদনকারী টাটা গোষ্ঠীর পক্ষে গিয়েছে। তাই তাদের আবেদন মঞ্জুর করা হল এবং খারিজ করা হল শাপুরজি পালোনজি (এসপি) গোষ্ঠীর দাবি।’’ এনসিএলএটি-র নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল টাটারা।
রায় ঘোষণার পরে বর্তমানে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমেরিটাস রতন টাটা টুইট করেছেন ‘‘এটা জেতা বা হারার বিষয় নয়। আমার সত্যের প্রতি নিষ্ঠা এবং গোষ্ঠীর নৈতিক আচরণের উপর লাগাতার আক্রমণের পরে, এই বিচার সত্য প্রতিপন্ন করল টাটা সন্সের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাকেই, গোষ্ঠী সব সময় যে নীতি মেনে চলে। এই রায় আমাদের বিচার ব্যবস্থার শক্তি এবং সত্যতাকেও তুলে ধরেছে।’’
টাটা সন্সে তাদের অংশীদারির মূল্য বুঝে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার জন্য সাইরাসের এসপি গোষ্ঠী যে আবেদন জানিয়েছিল, তা-ও খারিজ করেছে বেঞ্চ। উল্টে বলেছে, ‘‘বর্তমান অবস্থায় এবং এই আদালতে আমরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণের রায় দিতে পারি না। এটা দু’পক্ষের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি।’’ আইনি পথে সেই দাবি বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাদের বক্তব্য, এসপি গোষ্ঠীর অংশীদারির মূল্য নির্ভর করছে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত টাটা সন্সের শেয়ার মূল্য, স্থাবর এবং অন্যান্য সম্পত্তির দামের উপরে। মিস্ত্রি পরিবার এর আগে টাটায় তাদের অংশীদারির মূল্য দেখিয়েছিল ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও টাটাদের দাবি ছিল, টাটা সন্সে এসপিদের ১৮.৩৭% অংশীদারির মূল্য ৭০,০০০ কোটি থেকে ৮০,০০০ কোটি টাকার মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, আগামী দিনে কি তা হলে টাটা-মিস্ত্রির ছাড়াছাড়ির আর্থিক দেনা-পাওনা নিয়ে নতুন আইনি লড়াই দেখবে দেশ? বিশেষত মিস্ত্রিদের যেখানে অভিযোগ, নিজেদের শেয়ার বন্ধক রেখে টাকা তোলার যে পরিকল্পনা করেছিল এসপি গোষ্ঠী, তা আটকাতেই শীর্ষ আদালতে গিয়েছে টাটারা। উদ্দেশ্য, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাদের মতো সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারের অধিকার জোর জবরদস্তি ছিনিয়ে নেওয়া।
সাইরাসের অভিযোগ ছিল, তাঁকে সরানো ‘পেছন থেকে আক্রমণ’ এবং কর্পোরেট নীতিতে পরিচালনার নিয়ম লঙ্ঘন। টাটাদের সংস্থায় স্বচ্ছতা এবং সংস্কার আনার চেষ্টা করেছিলেন বলেই এ ভাবে তাঁর কাজের মেয়াদ ছাঁটা হয়েছে। তবে বরখাস্ত হওয়ার পরের দিনই মেল পাঠিয়ে সংস্থার পরিচালন ব্যবস্থা এবং ডিরেক্টরদের দোষারোপ করা আর সেই মেল সংবাদমাধ্যমের হাতে পৌঁছে যাওয়া নিয়ে এ দিন মিস্ত্রির উদ্দেশে তোপ দেগেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রশ্ন তুলেছে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং ব্যর্থতার দায় নিতে না চাওয়া নিয়েও।
দিনের শেষে বিবৃতিতে টাটা সন্সের দাবি, ‘‘সংস্থার অবস্থান যে ঠিক, প্রমাণ হল। এই রায়ে স্পষ্ট হল, টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসা পরিচালনার মান যথার্থ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy