সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের বসন্তকালীন বৈঠকে বিশ্ব অর্থনীতির রূপরেখা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমএফ। অর্থনীতির বিশ্লেষকেরা জানাচ্ছেন, যে কথাটি বারবার প্রতিবেদনে ঘুরেফিরে এসেছে, তা হল ‘অনিশ্চয়তা’। অথচ মাত্র তিন মাস আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। ছবিটা বদলে গিয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দফায় দফায় আমদানি শুল্ক নীতি ঘোষণা এবং তার পরিবর্তনে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির কর্ণধারের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে সারা বিশ্বে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার হতে পারে যথাক্রমে ২.৮% এবং ৩%। ইউরোর জিডিপি বাড়তে পারে যথাক্রমে ০.৮% এবং ১.২% হারে। তিন মাসে আগে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল, সেখানে এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির অনুমান ছিল ৫০ বেসিস পয়েন্ট বেশি। ইউরোর ক্ষেত্রে তা ২০ বেসিস পয়েন্ট। ভারতের ক্ষেত্রেও চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫% থেকে ৬.২ শতাংশে নামানো হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে পূর্বাভাস এতটা বদলে গেল কী ভাবে?
আইএমএফ জানাচ্ছে, এখনকার অনুমানেরও যে তেমন অনিশ্চয়তা আছে এমন নয়। জুলাইয়ে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ফের বদলে গেলে অর্থনীতি কোন দিকে হাঁটা দেবে তার আন্দাজ দেওয়া অসম্ভব। গত অক্টোবরে বিশ্ব বাণিজ্য অনিশ্চয়তা সূচক যে জায়গায় ছিল, এখন তা রয়েছে তার সাত গুণ উপরে। এমনকি, অতিমারির সময়ের চেয়েও বেশি। ফলে ‘কখন কী ঘটে যায় কিচ্ছু বলা যায় না’।
গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপরে বিপুল হারে আমদানি শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। ভারতের ক্ষেত্রে যা ছিল ২৬%। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে সেই নীতি বদলে দু’টি ঘোষণা করেন তিনি। এক, ন্যূনতম ১০% শুল্ক রেখে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা বাড়তি শুল্ক স্থগিত। বাণিজ্যে বোঝাপড়ার চেষ্টা। দুই, চিনের উপরে ১৪৫% শুল্ক প্রয়োগ। এই ঘোষণার পরে শেয়ার বাজার উঠতে থাকায় ট্রাম্প উচ্ছ্বসিত। কিন্তু আইএমএফের বক্তব্য, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ আসলে রয়েছে ট্রাম্পের পরবর্তী নীতির গর্ভে। এখন যদি উঁচু শুল্কও থাকত, তা হলেও সংস্থাগুলি নির্দিষ্ট ব্যবসার নির্দিষ্ট কৌশল তৈরি করতে পারত। সাজাতে পারত জোগানশৃঙ্খল। কিন্তু কৌশলের প্রশ্নে তাদের কার্যত হাত গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে। ক্রেতাদের ক্ষেত্রেও অবস্থা প্রায় এক। ফলে অনিশ্চয়তা আসলে কমার বদলে বেড়ে চলেছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)