E-Paper

আরও কমল খুচরো মুদ্রাস্ফীতি, জুনে কি আরও কমবে সুদ? চাঙ্গা হবে অর্থনীতি?

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫% করে টানা দু’বার রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) কমানোয় দেশ এখন ঋণ এবং জমা, দু’ক্ষেত্রেই কম সুদের জমানায় ঢুকে পড়েছে।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ০৬:৩১

—প্রতীকী চিত্র।

সম্প্রতি মেয়াদি জমায় ফের ২০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। এপ্রিলে প্রথম দফায় কমিয়েছিল ২৫ বেসিস পয়েন্ট। জমায় সুদ কমানোর পথে হেঁটেছে এইচডিএফসি এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক-সহ আরও কেউ কেউ। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫% করে টানা দু’বার রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) কমানোয় দেশ এখন ঋণ এবং জমা, দু’ক্ষেত্রেই কম সুদের জমানায় ঢুকে পড়েছে। খুচরো মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামানোয় তা আরও কমার সম্ভাবনা।

সুদ শব্দটা ছোট হলেও, সমাজ, শিল্প, সরকার, শেয়ার বাজারের কাছে তার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রয়োজন মত এর হেরফের ঘটিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে টাকার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে সুদ বাড়ায়। কারণ, ঋণে সুদ বাড়লে তার চাহিদা কমে। জমায় সুদ বাড়লে মানুষ টাকা খরচের তুলনায় তা জমাতে বেশি আগ্রহী হয়। ফলে বাজারে টাকার জোগান এবং পণ্যের চাহিদা কমে। চাহিদা কমলে পণ্যের দাম কমে। উল্টোটা হয় পণ্যমূল্য কমলে। এখন যেমনটা হচ্ছে। দাম কমলে আরবিআই সুদ কমায়। ফলে টাকার জোগান বাড়ে। চাহিদা বাড়ে ঋণের। সুদ কমে আসায় শিল্প উপকৃত হয়। দেশে নতুন লগ্নি বাড়ে। অর্থনীতির বৃদ্ধির পথ চওড়া হয়। অন্য দিকে জমা টাকাতেও সুদ কমে। ফলে মানুষ জমানোর থেকে খরচ করতে বেশি আগ্রহী হয়। যে কারণে জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়ে। শিল্প চাঙ্গা থাকে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ কম সুদের জমানা অর্থনীতির পক্ষে মঙ্গলজনক।

অনেক দেশই চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে হালে কিছুটা রাশ টানতে পেরেছে। যে কারণে ভারত, চিন, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে কিছুটা সুদ ছেঁটেছে। সুদ কমতে থাকলে অর্থনীতিতে সাধারণত যে সব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তা হল—

  • পণ্য উৎপাদনের খরচ কমে। ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে। তাই সেগুলির চাহিদা বাড়ে, যা শিল্পের উৎপাদন বহাল রাখে।
  • শিল্পে লাভ বাড়ে, যা নতুন লগ্নি টানে। নতুন শিল্প হলে কর্মসংস্থান বাড়ে। অর্থনীতি এগোয়।
  • ঋণের চাহিদা বাড়লে ব্যাঙ্কের ব্যবসা বাড়ে। চড়ে লাভের অঙ্ক। চাঙ্গা হয় ব্যাঙ্ক শেয়ার।
  • শিল্পের উপর সুদ বাবদ চাপ কমে। অন্য দিকে, ব্যবসার উন্নতি হওয়ায় কমে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ। ব্যাঙ্কের মাথাব্যাথা কমে। ফলে লাভ বাড়ে।
  • বাড়ি, গাড়ি ও মেয়াদি ভোগ্যপণ্যের ঋণে সুদ কমলে গ্রাহকের ঋণ শোধের মাসিক কিস্তি (ইএমআই) খাতে খরচ কমে। ফলে সবক’টি শিল্পেই চাহিদা বাড়ে। বাড়ি বিক্রি করলে চাহিদা বাড়ে সিমেন্ট, ইস্পাত, রং, আসবাব, বৈদ্যুতিন পণ্য ইত্যাদির। গাড়ি বিক্রি বাড়লে চাহিদা বাড়ে ইস্পাত, রং, টায়ার, ব্যাটারি, আলো, এসি, বৈদ্যুতিক, প্লাস্টিক, যন্ত্রাংশ ইত্যাদির। ফলে চাঙ্গা হয় এতগুলি শিল্প।
  • সুদ কমলে বহু সংস্থার ব্যবসার উন্নতি হয়। চাঙ্গা থাকে শেয়ার বাজার।
  • বন্ড ইল্ড কমার প্রবণতা দেখা দেয়। বাজারে বন্ডের দাম বাড়লে তবেই ইল্ড কমে সুদের কাছাকাছি আসে। অর্থাৎ তাতে বন্ড ও বন্ড ফান্ডের লগ্নিকারীরা লাভবান হন। ভারতে সুদ কমতে থাকায় বন্ড ইল্ড এর মধ্যেই ৭% থেকে ৬.২ শতাংশে নেমেছে।
  • ইল্ড কমলে কম সুদে সরকার বন্ড ছাড়তে পারে বাজারে। ফলে সুদ বাবদ খরচ কমে। একই পথে খরচ কমে বন্ড বাজারে ছাড়া বিভিন্ন সংস্থারও।
  • শেয়ার ও বন্ড বাজার চাঙ্গা থাকলে লগ্নিকারীর ভিড় বাড়ে। বিকোয় বেশি মিউচুয়াল ফান্ড। বাজারে প্রথম শেয়ার ছেড়ে তহবিল তুলতে (আইপিও) নামা সংস্থাগুলিও সাফল্য পায়।
  • আরবিআই সুদ কমালে ঋণের সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলি জমাতেও সুদ কমায়। সুদ কমে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে। এতেও সরকারের খরচ কমে।
  • ঋণে সুদ কমলে ব্যক্তিগত ঋণ এবং উচ্চ শিক্ষা ঋণে সুদ কমে। ফলে স্বস্তি পান সাধারণ ঋণগ্রহীতা ও পড়ুয়ারা।
  • জমায় সুদ কমতে থাকলে অবশ্য বিপাকে পড়েন সুদ নির্ভর অসংখ্য মানুষ, বিশেষত অবসর নেওয়া প্রবীণ নাগরিকেরা। তবে ভোগ্যপণ্যের দাম কমলে তাঁদের সুদ বাবদ ক্ষতি কমে।

অর্থাৎ কম সুদের জমানায় বেশি লাভ দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা এবং বেশির ভাগ মানুষের। আগামী দিনে সুদ যেহেতু আরও নামতে পারে, তাই মেয়াদি জমায় লগ্নি করতে চাইলে দ্রুত তা সেরে ফেলা ভাল। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি বৈঠক ৪-৬ জুন। আপাতত সুদ আরও কমার আশায় বেশির ভাগ মানুষ সেই দিকেই তাকিয়ে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Interest Economy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy