E-Paper

মূল্যবৃদ্ধিতে আশা, তেল কমবে কবে

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারত যে বাস্কেট থেকে তেল আমদানি করে, নভেম্বরে তার দর ব্যারেল প্রতি কমে ৮৩.৯৩ ডলার হয়েছে। যা অক্টোবরে ৯০.০৮ ডলার ছিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৮
An image of Crude Oil

—প্রতীকী চিত্র।

গত দু’মাস ধরে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ফের মাথা নামাচ্ছে। অক্টোবরে তা নেমেছে ৫ শতাংশের নীচে। যে ৪ শতাংশে মূল্যবৃদ্ধিকে এখন নামিয়ে আনতে চাইছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক, তার আরও কাছাকাছি। পাশাপাশি, গত কয়েক দিন যাবৎ বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দামেও উত্তাপ কিছুটা কম। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে মূল্যবৃদ্ধির উপরে চাপ আরও কমতে পারে বলে আজ দাবি করা হল অর্থ মন্ত্রকের এক রিপোর্টে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের প্রশ্ন, বিশ্ব বাজারে দাম কমার সুবিধা এ বার কি অন্তত সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দেবে কেন্দ্র? অন্য অংশের দাবি, হঠাৎ অশোধিত তেলের দাম কমার কথা বলে মূল্যবৃদ্ধির মাথা নামানোর বার্তা তাৎপর্যমূলক। বিশেষত ভোটের আগে। কারণ, এখন ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেল ৮০-৮১ ডলার। অথচ গত সপ্তাহেই তা ৭৭ ডলারে নেমেছিল। মাস খানেক আগে পর্যন্ত দীর্ঘ দিন ঘোরাফেরা করছিল ৭০-৭৫ ডলারে। বিরোধী শিবিরের অনেকে বলছেন, লোকসভা ভোটের মুখে তেলের দাম কমিয়ে নাম কেনার সুযোগ হয়তো হাতছাড়া করতে চায় না মোদী সরকার। ঠিক যে ভাবে বিপুল চড়ে থাকা রান্নার গ্যাসের দাম মাত্র ২০০ টাকা কমিয়েই এক দফা ঢাক পেটানো হয়েছে, পেট্রল-ডিজ়েলেও তেমনটা হবে না বলা যাচ্ছে না।

সেপ্টেম্বরের ৫.০২% থেকে অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার আরও কমে ৪.৮৭% হয়েছে। পাইকারি বাজারে তা দীর্ঘ দিন ধরে শূন্যের নীচে। শুধু তা-ই নয় সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারত যে বাস্কেট থেকে তেল আমদানি করে, নভেম্বরে তার দর ব্যারেল প্রতি কমে ৮৩.৯৩ ডলার হয়েছে। যা অক্টোবরে ৯০.০৮ ডলার ছিল। আজ সন্ধ্যায় ব্রেন্ট ক্রুড ঘোরাফেরা করেছে ৮১.৭৫ ডলারের আশপাশে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তেল সংস্থাগুলির খরচ যে কমেছে সেটা স্পষ্ট। যে কারণে অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টেও বলা হয়েছে, বিশ্ব বাজারে ক্রমশ কমতে থাকা জ্বালানির দর এবং খাদ্য-জ্বালানি বাদে মূল্যবৃদ্ধির হার (কোর ইনফ্লেশন) কমার ফলে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির উপরেও চাপ কমতে পারে। কোর ইনফ্লেশন সেপ্টেম্বরের ৪.৫% থেকে কমে অক্টোবরে ৪.৩% হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, খাতায়-কলমে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলেও খাবারদাবার, বিশেষ করে আনাজপাতির দামে এখনও সন্ত্রস্ত সাধারণ রোজগেরে মানুষ। বাজারে কখনও তা একটু কমছে তো পর মুহূর্তে চড়ে যাচ্ছে। লাগাতার সুদ বাড়িয়েও (২৫০ বেসিস পয়েন্ট) যে মূল্যবৃদ্ধিকে এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি, তা মেনে নিয়ে কড়া নজরদারি এবং প্রয়োজনে যে কোনও পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে খোদ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদদের অনেকে বারবার এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে চেষ্টা করার সওয়াল করেছেন। তবু এ বছর এখনও সে রাস্তায় হাঁটেনি কেন্দ্র। ২০২১ সালের নভেম্বর এবং ২০২২ সালের মে মাসে পেট্রল এবং ডিজ়েলের শুল্ক ছেঁটে দাম কমানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। তার পর থেকে দুই পেট্রোপণ্য একই জায়গায় থমকে। মাঝে অশোধিত তেল ৭০-৭৫ ডলারে নামার সুবিধাও পায়নি ভারত। জ্বালানি নিয়ে বিরোধীরা ক্রমাগত আক্রমণ শানিয়ে চলেছে মোদী সরকারের উদ্দেশে। এখন তাই প্রশ্ন উঠছে, সরকার তবে কি লোকসভা নির্বাচনের আরও কাছাকাছি পৌঁছে আস্তিন থেকে সেই তাস বার করবে কেন্দ্র? আচমকা কেন্দ্রের মূল্যবৃদ্ধির মাথা নামানোর বার্তা তারই প্রস্তুতি কি না, সেই কৌতূহলও দানা বেঁধেছে।

খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে ঝুঁকির কথা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এবং অর্থ মন্ত্রক আগেও তাদের রিপোর্টে বলেছে। শীর্ষ ব্যাঙ্ক ইঙ্গিত দিয়েছে, দামের অবস্থার অবনতি হলে ফের ঋণনীতির মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে তাদের। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, পরিবহণ জ্বালানির দাম কমলে খাদ্যপণ্য-সহ বিভিন্ন পণ্যের দামের উপরেই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যা স্বস্তি দিতে পারে দেশবাসীকে। কিন্তু তার জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, সেটাই দেখার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Crude Oil Price Hike World Market Global market Indian Economy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy