E-Paper

তুরস্কের ‘হাতযশে’ দু’হাজার ছুঁইছুঁই! মধ্যবিত্তের পাত থেকে উধাও হওয়ার পথে পোস্ত

ব্যবসায়ী মহলের দাবি, ভারতের চাহিদার অর্ধেক পোস্তই আসে তুরস্ক থেকে। তবে সরকারি নিয়মে তা বিদেশ থেকে অন‍্য পণ্যের মতো আমদানি করা যায় না।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৫ ০৭:২৪
ভারতকে পোস্ত জোগানে স্বনির্ভর করতে বছর দুই আগে আমদানি কার্যত বন্ধ করে কেন্দ্র।

ভারতকে পোস্ত জোগানে স্বনির্ভর করতে বছর দুই আগে আমদানি কার্যত বন্ধ করে কেন্দ্র। —প্রতীকী চিত্র।

ঝুঁকির মুখে মধ্যবিত্ত বাঙালির পোস্ত প্রীতি। কারণ, তার কেজি প্রতি দাম এক লাফে ৪০০-৬০০ টাকা বেড়ে় ২০০০ টাকা ছুঁইছুঁই। ফলে সব কিছুর বেড়ে যাওয়া খরচ সামলাতে গিয়ে নাকাল বহু মানুষের পাত থেকে প্রায় উধাও হতে বসেছে পোস্ত।

ব্যবসায়ী মহলের দাবি, ভারতের চাহিদার অর্ধেক পোস্তই আসে তুরস্ক থেকে। তবে সরকারি নিয়মে তা বিদেশ থেকে অন‍্য পণ্যের মতো আমদানি করা যায় না। নির্দিষ্ট কিছু সংস্থা সেই অনুমতি পায়। যে কারণে আমদানির একটা বড় অংশ হয় চোরাপথে। মধ‍্যপ্রদেশের এক পাইকারি পোস্ত ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘মূলত বেআইনি ভাবে যে পোস্ত আসে, তার দ্বারাই বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। তুরস্ক দিয়ে আফগানিস্তান হয়ে মালয়েশিয়া ঘুরে ভারতে চোরাপথে তা ঢোকে।’’ তাঁর দাবি, একে তো ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের পরে সীমান্ত বন্ধ থাকায় অন্যান্য বহু পণ্যের মতো পোস্তও ঢুকতে পারছে না। তার উপর তুরস্ক ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়ানোয় নয়াদিল্লি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তাতেও আটকে গিয়েছে তুরস্কের রফতানি। সব মিলিয়ে জোগান কমায় দাম বাড়ছে।

এক মাস আগেও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্ত ১৪০০-১৬০০ টাকা ছিল। বাঁকুড়ার সঙ্গীতশিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় ২০০০ কী ভাবে হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।” কেশিয়াকোলের মুদি ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “বিক্রি অনেক কমেছে।” বাঁকুড়ার অন্যতম পোস্ত বিক্রেতা দেবেন্দ্র আগরওয়াল জানান, মূলত মধ্যপ্রদেশ থেকে তাঁরা পণ্য আনেন। দর বৃদ্ধির কারণ, সেখানকার ব্যবসায়ীদের ‘বয়কট তুরস্ক’ নীতি। ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটি-র চেয়ারম্যান ব্রিজমোহন আগরওয়ালও বলেন, “জঙ্গিবাদকে সমর্থন করায় তুরস্ককে বয়কটের ডাক দিয়েছি।’’ তা ছাড়া, এ বছর মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানে কেন্দ্র অনুমোদিত পোস্ত চাষের জমিও কমেছে। উল্লেখ্য, দেশে শুধু এই তিন রাজ্যে পোস্ত চাষের অনুমতি রয়েছে। তা-ও সীমিত জমিতে।

মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী, মহারাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কীর্তি রানার মতে, ‘‘উৎসবের মরসুম আসছে। চাহিদা থাকায় দর আরও বাড়ছে।’’ রাজস্থানের সীমানা লাগোয়া মধ্যপ্রদেশের নিমাচের ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, বিভিন্ন দেশের পোস্তও তুরস্ক হয়েই এ দেশে আসে। কিন্তু বছর খানেক আগে তুরস্ক থেকে তা আমদানির সীমা বেঁধে দিয়ছিল নয়াদিল্লি। তার পরেও চোরাপথে পোস্ত ঢুকছিল। তাতে জোগানের ঘাটতি মিটছিল অনেকাংশে। কিন্তু এখন পুরো বন্ধ। বেআইনি ভাবে ঝাড়খণ্ড ও মণিপুরেও পোস্ত চাষ হত। মণিপুরে অশান্তির জেরে তা প্রায় বন্ধ। খারাপ আবহাওয়ায় এ বছর ঝাড়খণ্ডেও চাষ মার খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জোগান বাড়িয়ে দাম কমাতে সরকারি নজরদারিতে রাজ্যে পোস্ত চাষ শুরুর সওয়াল করছেন বাঁকুড়া বণিকসভার সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা।
তবে এ নিয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো কাজ হবে, জনিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা।

পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ আগরওয়াল জানান, পোস্তা বাজারে এক মাসে কেজি প্রতি পাইকারি দাম ১২০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬০০ টাকা। যদিও খুচরো দাম ২০০০ টাকা ছুঁয়েছে। রাজস্থান বিকানেরের এক ব্যবসায়ীর মতে, দেশের চাষ শুধু দক্ষিণ ভারতেই লেগে যায়। মোট পোস্তের ৬৫%-৭০%। বাকি অংশের জন্য আমদানি করতে হয়। কিন্তু এই নিয়ে কড়া নিয়ম থাকায়, চোরাপথে অনেকটা পোস্ত দেশে ঢোকে। সেটা বন্ধ। তাই দাম বাড়ছে।

ভারতকে পোস্ত জোগানে স্বনির্ভর করতে বছর দুই আগে আমদানি কার্যত বন্ধ করে কেন্দ্র। ছাড়পত্র দেওয়া হয় কিছু সংস্থাকে। তথ্য‍ বলছে, ২০১৬-১৭ সালে ১৮,০৬৭ টন পোস্ত আমদানি হয়েছিল তুরস্ক ও চিন থেকে। ২০১৮-১৯-এ তা মাত্র ১৮.১৮১ টন। তবে ৮০ শতাংশই তুরস্কের। সূত্রের খবর, বর্তমান আমদানিও ২০১৮-১৯ সালের আমদানির প্রায় ৬০%-৬৫%।

তথ্য সহায়তা: অঙ্কুর সেনগুপ্ত

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Poppy Seeds Poppy Seed

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy