কিছুতেই থামছে না পতন। গত ১৩টি লেনদেনের মধ্যে সোমবারের ৫৮ পয়েন্ট উত্থান বাদ দিলে বাকি দিনগুলিতে সেনসেক্স নেমেছে মোট ২৯৬০। পতন অবশ্য শুরু হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর সূচকটি সর্বোচ্চ (৮৫,৮৩৬) হওয়ার পর দিন থেকেই। তার পরে পাঁচ মাসে ১০,৫২৫ খুইয়ে নেমেছে ৭৫,৩১১-এ (১২.২৬%)। নিফ্টি ২৬,২১৬ থেকে ১৩.০৫% পড়ে ঠেকেছে ২২,৭৯৬-এ। বাজারে মোট শেয়ার মূল্যের নিরিখে মাঝারি (মিডক্যাপ) এবং ছোট (স্মলক্যাপ) সংস্থার শেয়ার সূচক দু’টির ক্ষতি হয়েছে আরও বেশি। এই সময়ে শেয়ার বা ফান্ডের বেশির ভাগ লগ্নিকারীই লোকসান গুনেছেন।
পতন আটকাতে পারেনি বাজেটে কেন্দ্রের বিপুল করছাড় এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পাঁচ বছরে প্রথম বার ঋণে সুদ ছাঁটাইও। আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হয়তো আমেরিকায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতীয় পণ্যে চড়া আমদানি শুল্ক না বসানোর ব্যাপারে রাজী করাতে পারবেন। কিন্তু তা তো হয়ইনি, উল্টে ট্রাম্প চটেছেন ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি সংস্থা টেসলা ভারতে কারখানা গড়তে পারে জেনে। ফলে সব মিলিয়ে বাজার দুর্বল।
যত দিন অর্থনীতি মজবুত ছিল তেজী ছিল বাজার। ঢিমে ভাব শুরু হয় উৎসবের মরসুমে চাহিদা ধাক্কা খাওয়ায়। অর্থনীতি যে ঝিমিয়ে পড়ছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। তার পরেই ভারতে শেয়ার বেচতে শুরু করে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। পতন রোখা যাচ্ছে না দেশীয় লগ্নি সংস্থাগুলি লাগাতার পুঁজি ঢাললেও। অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব দেখা না দেওয়া পর্যন্ত সূচকের তেড়েফুঁড়ে মাথা তোলার আশা নেই। ফলে ‘বুল’রা এখন গভীর ঘুমে। চুটিয়ে রাজত্ব করছে ‘বেয়ার’রা।
এই পড়তি বাজার কম দামে ভাল শেয়ার কেনার বিরাট সুযোগ। তবে অনেকে ভরসা পাচ্ছেন না। কেনার পরেও পতন বহাল থাকার আশঙ্কায় তাঁরা লগ্নি থেকে হাত গুটিয়ে আছে। অতীত অভিজ্ঞতা যদিও বলছে, এখন সাহস করে ভাল শেয়ার কিনে রাখলে ভবিষ্যতে লাভ হবে। শুধু সাবধানে শেয়ার বাছতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। লগ্নি করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে। শুধু শেয়ার নয়, এখন কিস্তিতে লগ্নি শুরু করা যায় ভাল ফান্ডেও। অতীতে ভাল রিটার্ন দেওয়া বেশ কিছু ফান্ডের ন্যাভ অনেকটা নেমেছে। লগ্নির ইচ্ছে থাকলে এখনই ফান্ড বাছাই শুরু করতে হবে। শেয়ারে আস্থা কমলে ‘মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড’ বা ‘ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড’ বাছা যায়।।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোয় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যাঙ্ক বাড়ি, গাড়ি সমেত বিভিন্ন ঋণে সুদ ছেঁটেছে। তবে ব্যাঙ্কের নগদে টান থাকায় এখনও আমানতে তেমন ভাবে সুদ কমানো শুরু হয়নি। বন্ড ইল্ডও স্থির রয়েছে। এই অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি আরও মাথা নামালে এপ্রিলে ফের সুদের হার কমতে পারে। সুদ কমতে পারে আমানতেও।
আগামী অর্থবর্ষে করদাতাদের একাংশের হাতে বেশ খানিকটা বাড়তি টাকা থাকবে। পড়তি বাজারে তা লগ্নির পরিকল্পনা এখনই শুরু করে দেওয়া যায়। নতুন কর কাঠামোয় কর বাঁচতে পারে ১,১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। চাকুরে এবং পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেস বাবদ অতিরিক্ত ৪% ধরলে মোট সাশ্রয় হবে আরও অনেকটা বেশি। অন্য দিকে যাঁরা পুরনো ছেড়ে নতুন কর কাঠামোয় আসবেন, তাঁদের আর কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে ১.৫ লক্ষ টাকা লগ্নি করতে হবে না। ফলে হাতে প্রতি মাসে অনেকটাই বাড়তি নগদ থাকবে। এই টাকার একটি বড় অংশ যদি এসআইপি-র পথে নিয়মিত মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করে যাওয়া যায়, তা হলে লম্বা মেয়াদে তা বড় সম্পদ গড়ে দিতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)