Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে দুশ্চিন্তা, বাজার এখনই ফিরবে না পুরনো জায়গায়

কঠিন একটি সপ্তাহ পার করে এলাম আমরা। অবাধ পতন দেখা গেল শেয়ার বাজারে। ফের ২৬ হাজারের দিকে নামছে সেনসেক্স। ভাল রকম পড়েছে ছোট-বড় বহু শেয়ার। বাজার শোধরালেও পুরনো জায়গায় ফিরতে অনেক শেয়ারেরই বেলা বয়ে যাবে।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

কঠিন একটি সপ্তাহ পার করে এলাম আমরা। অবাধ পতন দেখা গেল শেয়ার বাজারে। ফের ২৬ হাজারের দিকে নামছে সেনসেক্স। ভাল রকম পড়েছে ছোট-বড় বহু শেয়ার। বাজার শোধরালেও পুরনো জায়গায় ফিরতে অনেক শেয়ারেরই বেলা বয়ে যাবে।

ইকুইটির এতটা পতনে ন্যাভ ভাল রকম পড়েছে অনেক মিউচুয়াল ফান্ডের। অন্য দিকে, ডলারের দাম বাড়ায় এই পতনে কার্যত সামিল হয়নি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। এদের কারও কারও দাম বরং বেড়েছে গত কয়েক দিনে। অন্য দিকে, দাম কমার কারণে চাহিদা বাড়ায় এবং শেয়ার বাজারে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় সোনার দামে কিছুটা উত্থান দেখা গিয়েছে গত সপ্তাহে।

চিন তার মুদ্রা ইউয়ানের দাম কমানোয় বিশ্ব জুড়েই আর্থিক ব্যবস্থায় টালমাটাল অবস্থা। রফতানি ধরে রাখতে চিন মুদ্রার দাম আরও কমালে অন্য দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। স্বার্থরক্ষায় একই পথে হাঁটবে। এতে বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় গোলোযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। পাশাপাশি, তিনি এখনই সুদ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেননি। এই পরিস্থিতিতে বাজার বেশ হতাশ হয়ে পড়ে সপ্তাহের শেষের দিকে। নতুন করে সৃষ্টি হয় অনিশ্চয়তা। ক’দিনে এই অবস্থা কাটবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

মাসের শেষে প্রকাশিত হবে আর্থিক বৃদ্ধির হার সংক্রান্ত তথ্য। তা প্রত্যাশা মতো বাড়লে শক্তি ফিরে পাবে সূচক। তবে, কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে আসছে করমুক্ত বন্ড। এ বছরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ৪০ হাজার কোটি টাকার করমুক্ত বন্ড ইস্যুর অনুমতি পেয়েছে। বন্ডে এত বেশি লগ্নি হলে টাকার জোগান কমবে শেয়ার বাজারে। অর্থাৎ বাজারের জন্য এটি ভাল খবর নয়। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী করমুক্ত বন্ডে সুদ মিলতে পারে বার্ষিক ৭.১৫% থেকে ৭.৩৫%। সংশ্লিষ্ট সংস্থার রেটিং অনুযায়ীই তা স্থির হবে। উঁচু হারে করদাতারা অবশ্য করমুক্ত বন্ড বাজারে আসার জন্য দিন গুনছেন।

এ দিকে, মাছ-সব্জির বাজারে আগুন। সরকারি হিসাব বলছে পাইকারি ও খুচরো, মূল্যবৃদ্ধির দুই সূচকই নেমেছে অনেকটা। তবে তা হয়েছে মূলত জ্বালানি তেলের দাম কমায়। তাতে অবশ্য বাস, ট্যাক্সির ভাড়া কমেনি। নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ রোজগেরে ও সুদ-নির্ভর মানুষের। কারণ, সুদ বেশ কিছুটা কমায় তাঁদের আয় কমেছে। বাংলা বানভাসি হলেও সারা ভারতে সমান ভাবে ভাল বৃষ্টি হয়নি। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম কমার সুযোগ কম। অর্থাৎ আমজনতার দুর্দশা কাটার তেমন কারণ দেখা যাচ্ছে না।

অবশেষে দিনের আলো দেখল বন্ধন ব্যাঙ্ক। সপ্তাহ শেষে বাংলার কাছে এটি ছিল গর্বের বিষয়। অনেক সংস্থা যখন গরিবদের টাকা নয়ছয় করছে, তখন বন্ধন ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা হিসেবে অসংখ্য দরিদ্র মানুষকে ছোট ছোট আকারে ঋণ দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। ভারতে মাত্র যে-দুটি সংস্থাকে ব্যাঙ্ক তৈরির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, বন্ধন তার অন্যতম। ভাল কাজের জন্য চতুর্দিক থেকে শুভেচ্ছা পাচ্ছেন আশা জাগানো নতুন এই ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর ঘোষ। তাঁর থেকে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আশা করা যায়, এর কাজকর্ম অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের থেকে কিছুটা আলাদা হবে। বন্ধন ব্যাঙ্কে টাকা রেখে পরোক্ষ ভাবে মানুষ অংশ নিতে পারবেন সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কাজে। সুদের হারও ঘোষণা করেছে নতুন এই ব্যাঙ্ক, যা অন্য অনেক ব্যাঙ্কের তুলনায় একটু হলেও বেশি।

২০০১ সালে বন্ধনের জন্ম হয়েছিল এনজিও হিসেবে। ২০০৯ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে এনবিএফসি (ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক সংস্থা) হিসেবে স্বীকৃতি পায় তারা। বন্ধনের দেওয়া অসংখ্য ছোট ছোট ঋণের মোট পরিমাণ ৬,০০০ কোটি টাকারও বেশি। অনেক ব্যাঙ্ক অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় চাপের মধ্যে থাকলেও এত ছোট ছোট ঋণ দিয়ে বন্ধন কিন্তু লাভজনক সংস্থা। যাঁদের ঋণ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে আছে ছোট দোকানদার, হকার। রয়েছে কুটিরশিল্প, ছোট এবং অতি ছোট বাণিজ্যিক উদ্যোগ, ছাপাখানা, জেরক্স, বই বাঁধাই ইত্যাদির মতো ব্যবসা। পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হলেও বন্ধন ছড়িয়ে আছে ভারতের বহু ছোটবড় গ্রাম-শহরে। প্রথম বছরেই বন্ধন খুলতে চায় ৬০০টি শাখা। অর্থের প্রয়োজন বাড়লে ভবিষ্যতে হয়তো আমরা বন্ধনকে জনগণের জন্য শেয়ার ছাড়তে এবং শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হতে দেখব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE