লক্ষ লক্ষ টাকার বুকিং বাতিলে ফিরল কোভিডের স্মৃতি! বড় ধাক্কা পর্যটনে

লক্ষাধিক টাকা নষ্ট হতে বসেছে বহু পর্যটকের। কারণ, কাশ্মীরের পরে এ বার লেহ-লাদাখ, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, পঞ্জাব-সহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও বেড়াতে যাওয়া কার্যত বন্ধ হয়ে গেল। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে এই সব জায়গাগুলি ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে। ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হানার নিশানা হতে পারে। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিরীহ পর্যটকেরা নিহত হওয়ার পরে আর ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই নেই। তবে গোটা পরিস্থিতিতে প্রবল ধাক্কা খেয়েছে পর্যটন ক্ষেত্র। কারণ, এই সময়টা স্কুলে স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে। বাড়ে পাহাড়ে যাওয়ার হিড়িক। সেই মতো গাড়ি-হোটেলের বুকিং হয়ে যায় অনেক আগে। পর্যটন সংস্থাগুলির দাবি, পুরোটাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। একাংশের বক্তব্য, ২০২০-র মার্চ-এপ্রিলে কোভিড হানার সময়ের ছবিটা যেন ফিরে এসেছে। একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে। সাধারণ মানুষ গুনছেন লোকসান। পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।

‘ইন্ডিয়ান অ‍্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটর্স’-এর রাজ‍্য সভাপতি দেবজিৎ দত্ত বলেন, “কোভিডের পরে এত বড় ধাক্কার মুখে পড়িনি। শুধু দেশীয় পর্যটক নয়, বিদেশিরাও মুখ ফিরিয়েছেন। কাশ্মীর তো বটেই, লেহ-লাদাখ, হিমাচল, রাজস্থান সর্বত্র বুকিং বাতিল হচ্ছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে জানা নেই। কাজ বলতে শুধু অপেক্ষা।”

দেবজিৎ জানিয়েছেন, বুকিং বাতিল করলে পর্যটককে তাঁরা ক্রেডিট নোট দিচ্ছেন। অনেক সংস্থা টাকা ফেরাচ্ছে। কসবার বাসিন্দা চার্লি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০ মে পরিবার নিয়ে কাশ্মীর-লেহ-লাদাখ যাওয়ার কথা ছিল। কাশ্মীরের বুকিং বাতিল করেছেন আগেই। লেহ-লাদাখ নিয়ে দু’তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর দাবি, লেহ বিমানবন্দর বন্ধ বলে খবর। ফলে এখন লক্ষাধিক টাকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে।

ভ্রমণ সংস্থা কুণ্ডু স্পেশ্যালের সৌমিত্র কুণ্ডুর বক্তব্য, গত ২২-২৩ তারিখ যা ছিল না, সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। শুক্রবার কমপক্ষে ৭-৮ টি পরিবার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। সিংহভাগই লেহ-লাদাখ, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ। আপাতত কাশ্মীরের সব বুকিং বাতিল হচ্ছে। পর্যটকদের পুরো টাকা ফেরত দিচ্ছেন তাঁরা। অন‍্য দিকে, ৭ ও ১৪ মে-র লেহ-লাদাখের বুকিং বাতিল হয়েছে। ২১ ও ২৮ তারিখ নিয়ে দিন তিনেকের মধ‍্যে সিদ্ধান্ত হবে। এই ক্ষেত্রে ৩৬০০ টাকা কেটে তারপর পর্যটকদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। দেবজিৎ বলেন, ‘‘এপ্রিল-জুনই সারা বছরের ব্যবসার ৪০-৪৫ শতাংশ দেয়। তা উধাও হল।’’

সৌমিত্র যদিও আশাবাদী আগামী মাসে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। অন‍্য দিকে অরবিট ট‍্যুরিজমের কর্ণধার অমিতাভ সরকার জানিয়েছেন, কাশ্মীর, লেহ-লাদাখ, হিমাচল, পঞ্জাব, রাজস্থানের মোটামুটি সব বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তাঁরাও গ্রাহকভেদে টাকা ফেরত দিচ্ছেন কিংবা ক্রেডিট নোট দিচ্ছেন। যদিও তাঁর মতে, সকলেই অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। ফলে বাতিল কিংবা টাকা ফেরত নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কোনও ঝামেলা নেই। অনেকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে চার্জও দিচ্ছেন। সোদপুরের ভারতী রায় পরিবার নিয়ে রাজস্থান যাবেন বলে ঠিক ছিল। গন্তব্য বদলে কেরল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমার এজেন্ট কোনও ঝামেলা করেননি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকেই বিষয়টি মানবিকতা দিয়ে বুঝতে হবে।”