Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জীবাণু জুজুতে বিলেত পান-বিমুখ, সঙ্কটে চাষি

রফতানি সংস্থাগুলির বক্তব্য, ‘সালমোনেলা’ নামে ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণুই এ জন্য দায়ী। পানপাতা আশ্রয় করে ওই জীবাণু পেটের নানা রোগ বাধায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাই আর বাংলার পান আমদানি করছে না। থমকে গিয়েছে কয়েক কোটি টাকার রফতানি ব্যবসা।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৩
Share: Save:

তরল পান করা ইউরোপের রোজকার অভ্যাস। পাতা পানেও আসক্তি কম নয়। কিন্তু কিছু দিন ধরে দ্বিতীয়টির প্রতি তাঁদের বিরাগ দেখা যাচ্ছে। আর তাতেই মাথায় হাত বাংলার পানচাষিদের। কারণ পাঁচ মাস ধরে ইউরোপে বাংলার পান রফতানি বন্ধ।

রফতানি সংস্থাগুলির বক্তব্য, ‘সালমোনেলা’ নামে ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণুই এ জন্য দায়ী। পানপাতা আশ্রয় করে ওই জীবাণু পেটের নানা রোগ বাধায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাই আর বাংলার পান আমদানি করছে না। থমকে গিয়েছে কয়েক কোটি টাকার রফতানি ব্যবসা।

আর এতেই অশনি সঙ্কেত দেখছে সংশ্লিষ্ট শিল্প মহল। বাংলার পানের বৃহত্তম রফতানির বাজার বাংলাদেশ। কিন্তু ওই জীবাণুর জন্য সেটাও টিকবে কি না, রফতানিকারীরা তা নিয়ে সংশয়ে। ও-পার বাংলাও এ-পারের পান কেনা বন্ধ করলে রফতানি সংস্থাগুলির সঙ্গে সঙ্গে মার খাবেন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের চাষিরাও।

সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, প্রতিদিন এ রাজ্য থেকে বাংলাদেশে ২৫-৩০ টন পান রফতানি হয়। বছরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার লেনদেন। বাংলাদেশে মাথা পিছু পানের ব্যবহার অনেক বেশি। সেই জন্য ও-পারের বাসিন্দাদেরও এ-পার বাংলার পানের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। জীবাণু জটের আগে ইউরোপে বছরে ৭২০ টন পান রফতানি হত। টাকার অঙ্কে প্রায় ৫০ কোটি। সেই রফতানি এখন বন্ধ। পানের আর এক বিড়ম্বনা ‘হেমচিতি’ রোগ (হেমন্তকালে পানের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা কালো দাগ ধরা)। ওই রোগের জন্য বছরখানেক আগে বাংলার পান নেওয়া বন্ধ করেছে তাইওয়ান। তার পরে এই সালমোনেলার উপদ্রব।

শিল্প মহল জানাচ্ছে, বরজ থেকে পান তোলার পরে চাষিরা পান ধুচ্ছেন পচা জলে। চাষের সময়েও ব্যবহৃত হচ্ছে সেই দূষিত জল। ওই জলের সঙ্গেই পানে মিশছে সালমোনেলা। পাশাপাশি, যে-সব প্যাকেজিং হাউসে মোড়কবন্দি পান রফতানি করা হত, সেগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না বলে অভিযোগ।

সালমোনেলা কী

সালমোনেলা এক ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণু। এই প্রজাতির প্রায় ২৩০০ রকমের জীবাণু আছে। জল বা খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে বাসা বাঁধে তারা। পাকস্থলীতে নানা ধরনের রোগ বাধায় এই জীবাণু।

কেন্দ্রের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি উন্নয়ন পর্ষদের কলকাতা শাখার অন্যতম কর্তা রণজিৎকুমার মণ্ডল সতর্ক করেছেন, ‘‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখনই প্যাকেজিং হাউসের পরিকাঠামো গড়া জরুরি। না হলে বাংলার পান রফতানির ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হতে থাকবে।’’

এই অবস্থায় মুশকিল আসানে মাঠে নেমেছে রাজ্য। উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিজ্ঞানীকে নিয়ে সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি জায়গায় যান আধিকারিকেরা। চাষিদের পরিষ্কার ও ক্লোরিনযুক্ত জলে পান ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দাঁতনে আধুনিক প্যাকেজিং হাউস তৈরির পরিকল্পনা করছে রাজ্য।

ব্রিটেনে প্রচুর বাঙালির বাস। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানিতেও সংখ্যাটা কম নয়। তাঁদের একটা বড় অংশই বিশেষ করে বাংলার ‘কালী পানের’ জন্য পথ চেয়ে বসে থাকেন। কিন্তু রাস্তা কেটে দিচ্ছে উটকো জীবাণু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Export Betel Leaf Europe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE