সপরিবার: বার্ষিক সাধারণ সভায় (ডান দিক থেকে) মুকেশ অম্বানী, স্ত্রী নীতা, মেয়ে ইশা এবং দুই ছেলে অনন্ত ও আকাশ। শুক্রবার মুম্বইয়ে। এই প্রথম সভায় শেয়ারহোল্ডারদের সামনে মঞ্চে উঠলেন আকাশ ও ইশা। রয়টার্স
‘বিধ্বংসী পরিবর্তন’। আবারও।
গত কয়েক মাসে টেলি পরিষেবার নক্শা আমূল বদলানোর পরে এ বার অস্তিন থেকে ‘ফ্রি ফোনের’ তাস বার করলেন রিলায়্যান্স কর্ণধার মুকেশ অম্বানী। লক্ষ্য, সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের ফোনে নিজেদের ৪জি পরিষেবা পৌঁছনোর রাস্তা পাকা করা। ঠিক যে ভাবে এর আগে চমকে দেওয়া দরে নেট পরিষেবার মাধ্যমে ‘ডেটাগিরি’র কথা বলেছিলেন তিনি। বা কয়েক দশক আগে যে ধাঁচে ব্র্যান্ড ‘বিমল’-এর হাত ধরে দেশে কাপড় ব্যবসায় ‘বিধ্বংসী পরিবর্তন’ এনেছিলেন তাঁর বাবা তথা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই অম্বানীও।
শুক্রবার রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় মুকেশের দাবি, তাঁদের ফিচার ফোন কিনতে হবে না। ১,৫০০ টাকা জমা রাখলেই মিলবে। তিন বছর জিও-র পরিষেবা ব্যবহারের পরে সেটি ফেরত দিলে, ফিরিয়ে দেওয়া হবে আগে জমা রাখা টাকা। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কত সস্তায় ‘ডেটা’ দেবেন, সে কথাও ফের ফলাও করে বলেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘোষণা খানিকটা সুনামির মতো। যা দেখে তার মধ্যে আগমার্কা অম্বানী-ছাপ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। বলছেন, এক সময় পেল্লাই স্বপ্ন, বড় লগ্নি আর নিখুঁত বিপণনের মন্ত্রে দেশে কাপড়ের ব্যবসার চালু ধ্যান-ধারণা বদলে দেন ধীরুভাই। তৈরি হয় ব্র্যান্ড ‘বিমল’। এখন একই ভাবে নেটে তথ্য (ডেটা) আদানপ্রদানে দাদাগিরি (ডেটাগিরি) কায়েমকে পাখির চোখ করছেন মুকেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই যুদ্ধে বড় অস্ত্র হতে পারে এই ‘ফ্রি’ ফোন।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই হ্যাঁচকা টানে একসঙ্গে অনেকগুলি দরজা খুলে ফেলল রিলায়্যান্স। যেমন—
• ৪জি পরিষেবা এনে এর আগে ৩জি-র বাজার অনেক ছোট করে দিয়েছে তারা। এ বার কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দিল টুজি-কেও।
• এত দিন যাঁরা হ্যান্ডসেটের অভাবে ৪জি পরিষেবা ব্যবহার করতেন না, সুযোগ খুলল তাঁদের পকেটেও সেঁধিয়ে যাওয়ার। সংস্থার নিজের হিসেবেই সেই সংখ্যা প্রায় ৫০ কোটি।
• সপ্তাহে ৫ লক্ষ ফোন আনার কথা বলেছেন মুকেশ। জানিয়েছেন, তা তৈরি হবে দেশে। অনেকের প্রশ্ন, ফোন তৈরির ব্যবসাতেও কি তবে বড় শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে তারা?
• আগামী দিনে নেট মারফত কেব্ল পরিষেবায় পা রাখার ইঙ্গিতও এ দিন দিয়ে রেখেছে রিলায়্যান্স।
আরও পড়ুন: দেখে নিন কী কী সুবিধা মিলবে জিওর ‘বিনা পয়সা’র ফোনে
সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের অবশ্য দাবি, এই ফোন আসলে ‘ফ্রি’ নয়। জিও-র ডেটা ভরার বাধ্যবাধকতা থাকবে। তা ছাড়া, ফোন পিছু ১,৫০০ টাকা হিসেবে মোট যে অঙ্ক সংস্থার ঘরে তিন বছর জমা থাকবে, তাতে মোটা সুদও পাবে রিলায়্যান্স। কিন্তু এ দিন পুরো বিষয়টি বিপণনের এমন নিখুঁত সুতোয় মুকেশ গেঁথেছেন, যে তা আছড়ে পড়েছে সুনামির মতো।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের চ্যালেঞ্জের দিনে অম্বানী পরিবারের তিন প্রজন্মের কোলাজও তৈরি হয়েছে সভায়। প্রতি বারের মতো এ বছরও মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের সামনে এসেছেন মুকেশ। কিন্তু এ বার মঞ্চে তুলেছেন ছেলে আকাশ ও মেয়ে ইশাকে। বলেছেন জিও-তে তাঁদের নেতৃত্বের কথা। ‘মঞ্চ ছেড়ে দিয়েছেন’ বাবা ধীরুভাইকে। পর্দায় ফুটে উঠেছে রিলায়্যান্সের চার দশকের পথ চলা। ধীরুভাইয়ের ব্যবসা-দর্শনও।
অনেকের মতে, মুকেশের জিও নিয়ে ব্যবসা-কৌশলে ধীরুভাইয়ের ছাপ স্পষ্ট। এর পরিকাঠামোয় বিপুল লগ্নি করেছে সংস্থা। বিপুল মুনাফার পেট্রোকেম ব্যবসা না-থাকলে, যা হয়তো সম্ভব ছিল না। মুম্বইয়ের কাছে
তৈরি নতুন অফিসে ফি সপ্তাহে হেলিকপ্টারে আসেন মুকেশ। ইউ -টিউবে দেখা যায়, এই অফিসে মুকেশের চেম্বার নেই। দেশের ধনীতম শিল্পপতি কাজ করছেন বাকি কর্মীদের সঙ্গে বসে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এর পুরোটাই বিপণনের প্যাকেজ। বরাবর যাতে আস্থা রাখতেন ধীরুভাইও।
মুকেশের দাবি
•
সেপ্টেম্বরে আসছে জিও ফোন
•
কেনার খরচ কার্যত নেই
•
শুরুতে জমা ১,৫০০ টাকা
•
৩৬ মাস পরে ফোন জমা দিলে পুরো টাকা ফেরত
•
বুকিং শুরু ২৪ অগস্ট
•
কথা বলার ‘খরচ নেই’
•
মাসে ডেটা প্যাক ১৫৩ টাকার
•
দু’দিনে ২৩ টাকা ও সপ্তাহে ৫৩ টাকার ‘স্যাশে’-ও
•
জিও ফোন জুড়ে দিয়ে সেই নেটে টিভি দেখার সুবিধা
•
এই সুবিধা ধন ধনা ধন প্রকল্পের ৩০৯ টাকার রিচার্জেও
•
লক্ষ্য, সপ্তাহে ৫০ লক্ষ জিও ফোন আনা। ভারতে তা তৈরিরও
আগামী
•
অতীত হতে পারে টুজি ফোন
ও পরিষেবা
•
টেলি পরিষেবায় দামের লড়াই আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা
•
‘ফ্রি’ ফোনের টোপ টানতে পারে নতুন গ্রাহক। সঙ্গে খুলবে ফোরজি-র বিপুল বাজারও
•
এক ঝটকায় ফোরজি হ্যান্ডসেট পৌঁছতে পারে সমাজের সব স্তরে। প্রতিযোগিতার মুখে কম দামি মোবাইল নির্মাতারাও
•
নেট মারফত সেঁধিয়ে যাওয়া টিভির পর্দাতেও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy