Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Unemployment

চাকরির চিন্তায় উদ্বিগ্ন সমীক্ষাও 

প্রশ্ন উঠতেই পারে, শুধু নিয়মিত বেতন/মজুরির কাজের পরিসংখ্যান রয়েছে এখানে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৪
Share: Save:

চাকরির সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে ছ’বছরে মেরেকেটে ১৯% কথা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী! কিছুটা তেমনই কি ইঙ্গিত দিল আর্থিক সমীক্ষা?

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর মসনদের দাবিদার হিসেবে ভোটে মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে প্রতি বছর গড়ে ২ কোটি কাজের সুযোগ তৈরি করবেন। শুক্রবার আর্থিক সমীক্ষা প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে সুব্রহ্মণ্যন জানালেন, ২০১৭-১৮ পর্যন্ত সাত অর্থবর্ষে নিয়মিত বেতন বা মজুরির কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে ২.৬২ কোটি। অর্থাৎ, ফি বছর ২ কোটি কাজ তৈরির কথা ছিল, হয়েছে ৭ বছরে ২.৬২ কোটি। এর প্রথম দুই অর্থবর্ষ আবার ইউপিএ-জমানার। হিসেব কষলে দেখা যাচ্ছে, ফি বছর এ ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে প্রায় ৩৭.৪ লক্ষ। যা কিনা প্রতিশ্রুতির ২ কোটির মোটে ১৮.৭% (প্রায় ১৯%)!

প্রশ্ন উঠতেই পারে, শুধু নিয়মিত বেতন/মজুরির কাজের পরিসংখ্যান রয়েছে এখানে। দ্রুত পাল্টাতে থাকা অর্থনীতিতে এর বাইরেও তৈরি হওয়া অজস্র কাজের সুযোগকে (অ্যাপ-ক্যাব চালানো ইত্যাদি) হিসেবে ধরলে, এই ছবি এত বিবর্ণ দেখাবে কি?

কথা ছিল

•২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে ফি বছর গড়ে ২ কোটি চাকরির সুযোগ তৈরি করবে সরকার।

আর্থিক সমীক্ষা বলেছে

• ২০১১-১২ থেকে ২০১৭-১৮ সালে গ্রাম-শহর মিলিয়ে নিয়মিত বেতন/ মজুরির নতুন কাজ হয়েছে ২.৬২ কোটি। বছরে গড়ে ৩৭.৪ লক্ষ!
• চিনের ধাঁচে ভারতও যন্ত্রাংশ জুড়ে পণ্য তৈরির হাব হলে, ২০২৫ সালের মধ্যে ভাল বেতনের নতুন চাকরি হবে আরও ৪ কোটি। ৮ কোটি ২০৩০-এর মধ্যে। অর্থাৎ, চিনকে ছুঁয়েও বছরে গড়ে ৬৭ থেকে ৭৩ লক্ষ!

চড়া বেকারত্ব

• সিএমআই-র হিসেব, সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে দেশে বেকারত্বের হার ৭.৫%। টানা সাত ত্রৈমাসিকে তা ঊর্ধ্বমুখী।
• এনএসএসও-র তথ্যেও নোটবন্দির ঠিক পরে ২০১৭ সালে বেকারত্ব সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ (৬.১%)।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের উত্তর, প্রথমত, চাঙ্গা চাহিদায় ভর করে অর্থনীতিকে ছন্দে ফেরাতে নিয়মিত আয়ের চাকরি বৃদ্ধি জরুরি। কারণ, আয়ের নিশ্চয়তা থাকলে তবেই ব্যয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ হয়। দ্বিতীয়ত, অনেক কাজ হয়তো সমীক্ষার পরিসংখ্যানে নেই। কিন্তু তেমনই এ তো স্রেফ নতুন কাজের সুযোগ তৈরির হিসেব। নোটবন্দি এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর পরে যে অজস্র কাজ খোয়া গিয়েছে, তার হিসেব কোথায়? কয়েক লক্ষ চাকরি গিয়েছে শুধু গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে। চড়া বেকারত্বের সমস্যা স্পষ্ট প্রায় সব পরিসংখ্যানে। সেই সব ছাঁটাই বাদ দিয়ে নিট কাজের সুযোগ তৈরির সংখ্যা আরও কম হবে না কি?

সমীক্ষায় দাবি, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মধ্যে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে ‘অ্যাসেম্ব্‌ল ইন ইন্ডিয়া’কে। অর্থাৎ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশ থেকে আনা কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ জুড়ে বিপুল পরিমাণ পণ্য তৈরিতে দক্ষ হতে চাইছে ভারত। চিনের মতো। পড়শির ধাঁচে হয়ে উঠতে চাইছে রফতানি হাব। কিন্তু প্রথমত জমি-জট, লাল ফিতের ফাঁস, পরিকাঠামোর অভাবের মতো হাজারো কারণে চট করে তা হওয়া শক্ত। আর হলেও তার হাত ধরে বছরে গড়ে ৬৭ থেকে ৭৩ লক্ষ নতুন ভাল বেতনের চাকরি তৈরি হবে বলে সমীক্ষায় দাবি। অর্থাৎ, ২ কোটি তখনও বহু দূর।

বিশেষজ্ঞরা মানছেন, ওই সংখ্যায় ভাল বেতনের চাকরি সত্যিই হলে, সেই সূত্রেও দীর্ঘ মেয়াদে কাজ তৈরি হবে অনেক। কারণ, চাঙ্গা হবে চাহিদা। তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন ব্যবসা শুরুর পথ সুগম করার চেষ্টা, চাহিদা চাঙ্গা করতে প্রয়োজনে ঘাটতির লক্ষ্য শিথিলের ‘অনুমতি’ ও নিয়মিত আয় থাকা মহিলার অনুপাত বৃদ্ধির হিসেবকেও। কিন্তু মনে করাচ্ছেন, যন্ত্রাংশ জুড়ে পণ্য তৈরিতে চিনকে টক্কর দিতে বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE