হুগলি নদীতে দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটার ভিত্তিতে কলকাতা বন্দরে ‘ডকিং ব্যবস্থা’ বা জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ হয়। ফাইল ছবি।
কলকাতা বন্দরের কাজ এখন চলে ভাগীরথীর মর্জি বুঝে। কখন জোয়ার আসবে, সেই অনুযায়ী নির্ভর করে জাহাজ চলাচল থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ। কিন্তু রাতে জোয়ার থাকলেও এখন স্যান্ডহেড (মোহনা) থেকে ডকের মুখ পর্যন্ত আসতে পারে না জাহাজ। এই অবস্থায় নতুন প্রযুক্তির ‘নাইট নেভিগেশন’ বা নৈশ জাহাজ চলাচল ব্যবস্থা চালু করতে চাইছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ।
২০৩০ সালের মধ্যে বন্দরে পণ্য ওঠানামার পরিমাণ ১০ কোটি টনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে উদ্যোগ চলছে, এটা তারই অঙ্গ। সেই সঙ্গে হুগলির বলাগড়ে ভারী পণ্য ওঠানামার জন্য বার্থ তৈরির সিদ্ধান্ত রূপায়িত হয়ে গেলে বন্দরে পণ্য ওঠানামা ৩০% পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বন্দর-কর্তারা।
হুগলি নদীতে দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটার ভিত্তিতে কলকাতা বন্দরে ‘ডকিং ব্যবস্থা’ বা জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ হয়। সূর্য ডুবে গেলে অপেক্ষা সেই পরের দিন পর্যন্ত। তাতে যে-সময় নষ্ট হয়, সেটা সাশ্রয় করার জন্যই আসছে আধুনিক প্রযুক্তি। বন্দর সূত্রের খবর, বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প বন্দরের সহযোগিতায় তৈরি ওই প্রযুক্তি তিন মাসের মধ্যে চালু হয়ে যেতে পারে। রাতে নদীর নাব্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে জাহাজ কী ভাবে বন্দরের কাছে এসে নোঙর করবে, তা বাতলে দেবে ওই ব্যবস্থা। নাব্যতা অনুযায়ী পথ নির্ধারণ করে দিশা দেখাবে কম্পিউটার। ভার্চুয়াল ‘বয়া’র মাধ্যমে তার সঙ্কেত পেয়ে যাবেন জাহাজের নাবিক। এখন এই প্রযুক্তি হলদিয়া বন্দর পর্যন্ত চালু রয়েছে। বন্দর-কর্তাদের দাবি, যাতায়াতে সময় সাশ্রয় হলে বন্দরের উৎপাদনশীলতা ৩০% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
এর পাশাপাশি, কয়লা, আকরিক, সিমেন্ট, বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মতো ভারী পণ্য ওঠানামার জন্য প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করে বলাগড়ে ৩০০ একর জমিতে একটি টার্মিনাল বা বার্থ তৈরির প্রস্তুতি চলছে। ওই বার্থ নির্মিত হলে ভারী পণ্যের জাহাজ কলকাতায় খালি করার প্রয়োজন হবে না। ভারী পণ্য শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারী ট্রাকের ব্যবহার কমবে। কর্তাদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় যানজট এবং দূষণ দু’টিই কমবে কলকাতার রাস্তায়। তখন সরাসরি বলাগড় থেকে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পণ্য পরিবহণের কাজ করা যাবে। কর্তাদের দাবি, জোড়া উদ্যোগে বন্দরের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। নতুন বার্থ তৈরির ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ৩৫০ কোটি টাকা জোগাড়ের পাশাপাশি বন্দর-কর্তৃপক্ষ ওই খাতে ১০০ কোটি টাকা খরচ করতে চান। সম্প্রতি বলাগড়ে প্রস্তাবিত বার্থের এলাকা ঘুরে দেখেন কলকাতা তথা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের চেয়ারম্যান পি এল হরনাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy