একশো জনে ৯৭ জনই হাঁটতে চান না শেয়ার সরণিতে। তবে শেয়ারে যতই অ্যালার্জি থাকুক না কেন, যা দিনকাল আসছে তাতে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে আপনাকে ইকুইটির পথে পা বাড়াতেই হবে।
আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তবে আপনার বার্ষিক পিএফ জমার ১০ শতাংশ লগ্নি হবে শেয়ার বাজারে। আপনার যদি এনপিএস অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে তাতে জমার একাংশ লগ্নি হতে পারে ইকুইটিতে। আপনি যদি উঁচু হারের করদাতা হন, তবে করমুক্ত আয়ের সন্ধানে আপনাকে পা বাড়াতে হবে ইকুইটির দুনিয়ায়। এ ছাড়া ব্যাঙ্ক জমায় সুদ কমে আসায় কেউ কেউ লগ্নির একাংশ সরাতে শুরু করেছেন শেয়ার বাজারে।
সরাসরি ইকুইটিতেই লগ্নি করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। এখানে ঘোরাফেরা করা যায় মিউচুয়াল ফান্ডের পথেও। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, একটু লম্বা মেয়াদে ইকুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডে ছোট লগ্নি গড়ে দিতে পারে বেশ বড় আকারের তহবিল। তথ্য ঘাঁটলে এমন উদাহরণ যত্রতত্র পাওয়া যাবে। কর বাঁচানোর জন্যও লগ্নি করা যেতে পারে ইকুইটি-লিঙ্কড ইএলএসএস ফান্ডে। কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পগুলির মধ্যে এখানেই লক-ইন মেয়াদ সব থেকে কম। মাত্র তিন বছর।
জীবনবিমা বাবদ আমরা বছরে যত প্রিমিয়াম জমা দিই, তারও একটি অংশ লগ্নি করা হয় শেয়ার বাজারে। এলআইসি প্রতি বছর শেয়ারে লগ্নি করে ২৫ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আপনি চান বা না-চান, ইকুইটির দুনিয়ায় আপনি আছেন। এখানে লগ্নির সুবিধাও অনেক। এগুলি হল:
• শেয়ারে অল্প অল্প করে দীর্ঘ মেয়াদে জমানো যায়।
• ডিভিডেন্ডের উপর কোনও কর দিতে হয় না।
• লগ্নি এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে রেখে বিক্রি করে লাভ হলে তা থাকে মূলধনী লাভকর থেকে মুক্ত।
• এক বছরের মধ্যে বিক্রি করে লাভ হলে তার উপর কর দিতে হয় মাত্র ১৫% হারে।
• ইকুইটি-নির্ভর ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নি করে কর বাঁচানো সম্ভব। লগ্নি করা যায় এসআইপি পদ্ধতিতে।
• দীর্ঘ মেয়াদে একনাগাড়ে ছোট অঙ্কে নিয়মিত লগ্নি করে গেলে তা গড়ে দিতে পারে এক বড় তহবিল।
• কম সুদের জমানায় ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী তহবিলের একটি অংশ ইকুইটিতে লগ্নি করলে তা বড় মেয়াদে ফলদায়ী হতে পারে।
• একটু বড় মেয়াদে ইকুইটি ফান্ড থেকে গড়ে ১৫ থেকে ১৮% আয়/বৃদ্ধি হতে পারে।
ইকুইটিতে লগ্নির পথে বড় বাধা হল ঝুঁকির ব্যাপারে আশঙ্কা। যেমন আছে বড় লাভের হাতছানি, তেমনই আছে বড় মাপের ঝুঁকিও। তবে সেই রকম ঝুঁকি তো আছে পথ চলতেও। পথে নামলেই পদে পদে ঝুঁকি। তবুও আমরা পথে নামি। ঝুঁকি এড়িয়ে কী করে পথ চলতে হয়, তা আমরা শিখে নিয়েছি। তেমন ভাবে শেয়ারেও কৌশলমাফিক লগ্নি করে ঝুঁকিকে অনেকটাই বাগে রাখা যায়। আগের মতো ইকুইটিতে লগ্নি করে বর্তমান দুনিয়ায় খুব কম মানুষকেই সর্বস্বান্ত হতে দেখা যায়।
ইকুইটি নিয়ে নিরন্তর চলছে গবেষণা। বোতাম টিপলেই এক নিমেষে পাওয়া যায় এই সংক্রান্ত বহু তথ্য। সব জেনেবুঝে লগ্নি করলে ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। ঝুঁকির পাশাপাশি নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ভারত এই ক্ষেত্রে লগ্নিতে দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। কিছু দিন আগে কলকাতায় তথ্য-সহকারে এই কথা বলেন খোদ সেবি-র কর্ণধার ইউ কে সিন্হা।
শেয়ার-ফান্ডে লগ্নির খতিয়ান
•
বাজারে নথিবদ্ধ শেয়ারের মোট মূল্য ১২০.১৯ লক্ষ কোটি টাকা
(মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন)*
• নথিবদ্ধ লগ্নিকারী* ৩.৩৭ কোটি
• মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা কমবেশি ৪০
• মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প কমবেশি ২,২৫০
•
ফান্ডগুলির অধীনে থাকা ১৭ লক্ষ কোটি টাকা
মোট সম্পদ (এইউএম)
*তথ্যসূত্র : বিএসই ওয়েবসাইট
পালানোর পথ নেই
• চাকরিজীবীদের পিএফের ১০% খাটে শেয়ারে
• এনপিএস থাকলে, তারও একাংশ যায় ইকুইটিতে
•
বেসরকারি পিএফ ফান্ড নতুন জমার ১৫% পর্যন্ত শেয়ার রাখতে পারে
•
সরকারি পিএফ ফান্ড থেকে এখনও পর্যন্ত শেয়ারে লগ্নি ১৮,০৬৯ কোটি টাকা
ইকুইটি তথা মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির ভালমন্দ জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য সেবি-র উদ্যোগে কর্মশালা করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রচার বাড়ানো হয়েছে রেডিও, টিভিতেও। আশা, নতুন বছরে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে এই খাতে লগ্নি বাড়বে।
বেশি সংখ্যক মানুষ শেয়ারে পুঁজি ঢাললে এক দিকে তা যেমন সংশ্লিষ্ট লগ্নিকারীর জন্য ভাল, অন্য দিকে তা তেমনই ভাল শিল্প, বাণিজ্য এবং গোটা দেশের পক্ষেও। দেশে ছোট-বড় বহু শিল্প স্থাপিত হয়। সেগুলির মূলধনের একটি বড় অংশ আসে ইকুইটির পথ ধরে। শেয়ার বাজারে যত বেশি মানুষ লগ্নি করবেন, তত আমাদের কম নির্ভর করতে হবে বিদেশি লগ্নিকারীদের উপর। প্রভিডেন্ট ফান্ড, এন পি এস, ই এল এস এস এবং বিভিন্ন ইকুইটি ফান্ডের মাধ্যমে এখন বছরে আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি লগ্নি হয় শেয়ার বাজারে। এই লগ্নির আকার আগামী দিনে বাড়তেই থাকবে।
সাধারণ মানুষ যত বেশি সংখ্যক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে এখানে লগ্নি করবেন, ততই বাড়বে শেয়ার বাজারের স্থিতি-স্থাপকতা। শেয়ারে লগ্নিতে এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশের বড়জোর ৩% মানুষ সরাসরি শেয়ারে লগ্নি করেন। ব্যাঙ্কে সুদ কমায় অবশ্য দ্রুত বাড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল কিছু পরিসংখ্যান।
আরও পড়ুন: নতুন কর সঞ্জীবনী তথ্যপ্রযুক্তির
বিশ্বের অনেক দেশের পেনশন ফান্ডের টাকা খাটে ভারতীয় শেয়ার ও বন্ড বাজারে। যে লাভের আশায় বিদেশি ফান্ডগুলি ভারতের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তা থেকে দেশি ফান্ডগুলিই বা বঞ্চিত হবে কেন? ব্যাপারটি একটু খোলা মনে ভেবে দেখা দরকার।