সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন লগ্নির দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে স্পাইসজেট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, আর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই সেই কাঙ্খিত ১,২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেতে চলেছে তারা।
বিমান মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, স্পাইসজেটের কিংফিশার হওয়া ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছে মোদী-সরকার। এগিয়ে এসেছেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অজয় সিংহ। ২০১০ সালে যাঁর কাছ থেকে বিমান পরিষেবা সংস্থাটির মালিকানা কিনে নিয়েছিল কলানিধি মারানের সান গোষ্ঠী। শোনা যাচ্ছে, অজয় সিংহের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্পাইসে টাকা ঢালতে পারে মার্কিন আর্থিক বহুজাতিক জে পি মর্গ্যান চেজের একটি ফান্ড। কম দামের টিকিটের বিমান পরিষেবা সংস্থাটিকে বাঁচানোর জন্য টাকা ঢালতে অনুরোধ করা হয়েছে দুই শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী ও অনিল আদানির গোষ্ঠীকেও।
অজয় সিংহের ঘনিষ্ঠ মহলও জানিয়েছে, ধার আর লোকসানের বোঝায় ধুঁকতে থাকা স্পাইসকে বাঁচাতে অন্তত ১,২০০ কোটি টাকা নতুন লগ্নি প্রয়োজন এখনই। যত দ্রুত সম্ভব সেই লগ্নি আনতে তিনি সচেষ্ট। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “এখন দিনে ২৩০টি উড়ানই চলবে। খুব তাড়াতাড়ি বাইরে থেকে লগ্নি আসবে বলে আশা। সে ক্ষেত্রে উড়ান সংখ্যা বাড়তেও পারে।”
উল্লেখ্য, গত মাসে কেন্দ্রের কাছে পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা পেশ করেছিল স্পাইসজেট। তখন বিমান পরিবহণ সচিবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন চিফ অপারেটিং অফিসার সঞ্জীব কপূর। সঙ্গে ছিলেন অজয় সিংহও।
তা ছাড়া, বেশ কিছু দিন ধরেই খবর যে, স্পাইসজেটকে ফের চাঙ্গা করতে প্রথমে জে পি মর্গ্যান চেজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অন্তত ১,২০০ কোটি টাকা লগ্নি করবেন সিংহ। কেন্দ্রের কাছে পুনরুজ্জীবন প্রকল্পও পেশ করা হয় তার ভিত্তিতে।
সে দিনই কপূর জানিয়েছিলেন, অজয় সিংহ-সহ স্পাইসজেটের বেশ কয়েক জন শুভানুধ্যায়ী ইতিমধ্যেই ১৭ কোটি টাকা ঢেলেছেন। তখন জানা গিয়েছিল যে, এক মাসের মধ্যে সান গোষ্ঠীর কাছ থেকে সংস্থার সিংহভাগ মালিকানা কিনতে চান সিংহ।
স্পাইসজেটের সমস্যা মেটাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে কেন্দ্রও। তারা সরাসরি টাকা না-ঢাললেও, যথাসম্ভব সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিমান পরিবহণ মন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু।
অনেকের মতে, সেই প্রতিশ্রুতি এখনও পর্যন্ত রেখেছে কেন্দ্র। গত কয়েক মাসে বিমান জ্বালানির দাম কমেছে অনেকখানি। তাতে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পেয়েছে স্পাইসজেট। বিশেষত যেখানে এখন নগদে জ্বালানি কিনছে তারা। সংস্থার এক কর্তাই জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালের জুনের তুলনায় জ্বালানির দাম কমেছে প্রায় ২৩%। সংস্থার আশা, এর ফলে চলতি আর্থিক বছরে বাঁচবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। ফলে অন্তত এই মুহূর্তে আর উড়ান কমাচ্ছে না সংস্থা। তা ছাড়া তাদের দাবি, যে সব উড়ান বাতিল হয়েছে বা হচ্ছে, তার তালিকা তুলে দেওয়া হচ্ছে ওয়েবসাইটে।
কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দরুন মিলেছে আরও একটি সুবিধা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বাকি থাকা টাকা এখনই শোধ করার কথা ভাবতে হচ্ছে না স্পাইসকে। এমনকী দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহার করতে মেটাতে হচ্ছে না নগদ টাকাও। অথচ সেখানে দেশের আর এক সস্তার বিমান সংস্থা গো-এয়ারকে অবিলম্বে বকেয়া ৩৮ কোটি মেটাতে বলেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, তা না মেটালে আর ধার-বাকিতে বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে না গো-এয়ার। প্রসঙ্গত, বিমান নামা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে নিয়মিত প্রচুর টাকা দিতে হয় সংস্থাগুলিকে। ওই সব খাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে স্পাইসের প্রচুর টাকা বাকি রয়েছে।
তবে এ সবে অবশ্য উদ্বেগ কমছে না যাত্রীদের। যাঁরা অনেক আগে থেকে ২০১৫ সালের টিকিট কেটে রেখেছেন, তাঁরা তার নিশ্চয়তা নিয়ে ধন্দে। নতুন করে টিকিট কাটা উচিত কি না, তা-ও জানতে চান অনেকে।
গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা থেকে গুয়াহাটি যাতায়াতের টিকিট কেটেছিলেন সায়ন নিয়োগী। টিকিট আগামী মে মাসের। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, “তিন জনের যাতায়াতের টিকিট পেয়েছিলাম ৭,২০০ টাকায়। তখনও গণ্ডগোল কিছু ছিল না। এখন চিন্তায় পড়ে গিয়েছি।” এই একই দশা আরও অনেকের। এঁদের অনেকে ২০১৫ সালের অক্টোবরের টিকিট কেটেছেন। ২০১৪-র মাঝামাঝি এই সব টিকিট খুব সস্তায় বেচেছিল স্পাইস। কিন্তু এখন দুশ্চিন্তা তাড়া করছে এই সব যাত্রীদের। ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবির অবশ্য দাবি, “আমরা নিয়মিত স্পাইসের টিকিট বেচছি। কলকাতা থেকে তার প্রায় সব উড়ানে যাত্রী হচ্ছে ৮৫ শতাংশের বেশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy