Advertisement
E-Paper

কাজ বন্ধের নোটিস হিন্দুস্তান মোটরসে

উত্তরপাড়া কারখানায় কাজ বন্ধের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) নোটিস ঝোলাল হিন্দুস্তান মোটরস। শনিবার গাড়ি কারখানাটির তালাবন্ধ গেটে ওই নোটিস দেখেন কর্মীরা। সংস্থার দাবি, আর্থিক সঙ্কট চলছিল অনেক দিন থেকেই। কর্তৃপক্ষের তরফে সব রকম চেষ্টার পরেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত। তবে কর্মীদের অভিযোগ, বাজারে এখনও অ্যাম্বাসাডর গাড়ির চাহিদা যথেষ্ট। কিন্তু কর্তৃপক্ষেরই কারখানা চালাতে তেমন আগ্রহ ছিল না। তলে তলে কারাখানা গোটানোর কাজ অনেক দিনই শুরু করেছিলেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০১:৫৪
শনিবার কারখানার গেটে নোটিস দেখছেন কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র

শনিবার কারখানার গেটে নোটিস দেখছেন কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র

উত্তরপাড়া কারখানায় কাজ বন্ধের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) নোটিস ঝোলাল হিন্দুস্তান মোটরস।

শনিবার গাড়ি কারখানাটির তালাবন্ধ গেটে ওই নোটিস দেখেন কর্মীরা। সংস্থার দাবি, আর্থিক সঙ্কট চলছিল অনেক দিন থেকেই। কর্তৃপক্ষের তরফে সব রকম চেষ্টার পরেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত। তবে কর্মীদের অভিযোগ, বাজারে এখনও অ্যাম্বাসাডর গাড়ির চাহিদা যথেষ্ট। কিন্তু কর্তৃপক্ষেরই কারখানা চালাতে তেমন আগ্রহ ছিল না। তলে তলে কারাখানা গোটানোর কাজ অনেক দিনই শুরু করেছিলেন তাঁরা।

কারখানায় তালা পড়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ২,৬০০ কর্মী ও তাঁদের পরিবারের ভবিষ্যৎ। কর্মী সংগঠন এসএসকেইউ-এর সম্পাদক আভাস মুন্সির আর্জি, “অবিলম্বে এই বন্ধকে বেআইনি ঘোষণা করে কারখানা হাতে নিক রাজ্য।” শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে একতরফা ভাবে কারখানা বন্ধ করা হল। নইলে অন্তত করণীয় কিছু থাকলে, তার জন্য চেষ্টা করা যেত।” এ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সোমবারই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে সিটু নেতা এবং কারখানার কর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুনীল সরকারের অভিযোগ, “কারখানা বন্ধ করার জমি আগে থেকেই তৈরি করা হচ্ছিল। কিছু দিন আগে কর্মীদের বকেয়া নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আইএনটিটিইউসি-র সদস্যদের হাতে নিগৃহীত হয়েছি।”

সুজুকির হাত ধরে মারুতির চাকা গড়ানোর আগে এ দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা ছিল হিন্দ মোটরই (এইচএম)। মন্ত্রী-আমলাদের গাড়ি থেকে রাস্তার ট্যাক্সি সর্বত্র সদর্প উপস্থিতি ছিল তাদের ‘আইকনিক’ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের। কিন্তু নয়ের দশকে অর্থনীতির আগল খুলে যাওয়ার পর প্রতিযোগিতায় যুঝতে পারেনি তারা। চুক্তিমাফিক কখনও মিৎসুবিশির যাত্রী-গাড়ি, তো কখনও হাল্কা বাণিজ্যিক গাড়ি তৈরির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু হালে পানি পায়নি। ক্ষতির বোঝা ক্রমশ বেড়েছে। এক সময় পুঞ্জীভূত লোকসান ছাপিয়ে গিয়েছে নিট সম্পদকেও। সাধারণত যা হলে সংস্থাকে বি আই এফ আরে পাঠাতে হয়। এমনকী এক সময় টাকার অভাবে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়াই ক্রমশ মুশকিল হয়ে পড়ছে বলে জানাতে বাধ্য হয়েছে সংস্থা।

দিনের পর দিন এ ভাবে বিগড়াতে থাকা পরিস্থিতির মধ্যে সংস্থার কাছে খড়কুটো ছিল জমি বিক্রির টাকা কাজে লাগানো। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা-ও সম্ভব হয়নি। ২০০৬ সালে সি কে বিড়লা গোষ্ঠীর সংস্থা এইচএমকে চাঙ্গা করতে তাদের ৩১৪ একর জমি বিক্রির অনুমতি দেয় পূর্বতন বাম সরকার। শর্ত ছিল, সংস্থা চাঙ্গা করতে প্রয়োজনীয় ৮৫ কোটি টাকা ওই জমি বিক্রি করে তুলতে পারবে তারা। কিন্তু শ্রীরাম প্রপার্টিজকে জমি বেচে মোট ২৮৫ কোটি টাকা পায় এইচএম। গোল বাঁধে ওই বাড়তি ২০০ কোটি নিয়ে। কারণ, ক্ষমতায় এসে ওই টাকা দাবি করে বর্তমান রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রাপ্য মেনে নিয়েও বেহাল দশার কারণে টাকা দিতে না-পারার কথা জানায় এইচএম। গত অগস্টে এ নিয়ে সমঝোতা হলেও সেই বিতর্ক আজও ঝুলে রয়েছে।

এরই মধ্যে আবার এইচএম সিদ্ধান্ত নেয় মূল সংস্থা থেকে চেন্নাই কারখানা পৃথক করার। তখনই অবশ্য অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন যে, এতে আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে উত্তরপাড়া কারখানার ভবিষ্যৎ। গত ডিসেম্বরে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান সি কে বিড়লা। তখন সংস্থার দাবি ছিল, সমস্যার সুরাহা করতে বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা ও সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। সেই পথ সুগম করতেই সরে গেলেন তিনি।

কিন্তু আখেরে কিছুতেই কিছু হয়নি। কারখানার দশা ক্রমশ বেহাল হচ্ছিল। অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল বেতন। বিদ্যুতের বিলও বাকি পড়ছিল মাঝেমধ্যেই। পর্যাপ্ত কাঁচামাল না-থাকায় অনেক কর্মীই শুধু হাজিরা খাতায় সই করে বাড়ি চলে যেতেন। আর এই সব কিছুর পর এ বার তালাই পড়ে গেল কারখানায়। স্থানীয় কাউন্সিলর দিলীপ যাদব বলেন, “শ্রমমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদকে অনুরোধ করেছি, যাতে কারখানা চত্ত্বরের স্কুল, হাসপাতাল এবং কর্মী আবাসনে এর প্রভাব না পড়ে।”

কয়েক বছর আগেও শ্রমিক অশান্তির জেরে বন্ধ হয়েছিল এই কারখানা। কিন্তু সে বারের মতো এ বারও দরজা ফের খুলবে কিনা, কর্মীদের কাছে লাখ টাকার প্রশ্ন এখন সেটাই।

hindustan motors stop work notice hindmotors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy