Advertisement
E-Paper

কেন্দ্র সহায়, তবুও কারখানা হয়নি রাজ্যে

আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রায় নিত্য সরব রাজ্য। অথচ বুধবার রাজ্যের মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থার কর্তা দাবি করলেন, আদপে কেন্দ্রের সহায়তা নিয়েই উঠতে পারে না পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে সেই টাকা নিয়ে নিয়মিত খরচ করতে পারায় ওই খাতে ফি বছর বরাদ্দ বাড়িয়ে নেয় গুজরাত, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৯

আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রায় নিত্য সরব রাজ্য। অথচ বুধবার রাজ্যের মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থার কর্তা দাবি করলেন, আদপে কেন্দ্রের সহায়তা নিয়েই উঠতে পারে না পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে সেই টাকা নিয়ে নিয়মিত খরচ করতে পারায় ওই খাতে ফি বছর বরাদ্দ বাড়িয়ে নেয় গুজরাত, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি। শুধু তা-ই নয়, রীতিমতো হাতেগরম উদাহরণ হিসেবে শেওড়াফুলিতে আলু-গুঁড়োর (পটেটো ফ্লেক্‌স) কারখানা এখনও তৈরি না-হওয়ার কথা তুলে এনেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ওই কারখানা গড়তে বছর কয়েক আগেই আর্থিক সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও তা এখনও দিনের আলো দেখেনি।

কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানির বিষয়টি দেখভাল করে বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এপেডা)। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কৃষিপণ্যের রফতানি ও তার সমস্যা নিয়ে এ দিন এক আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল ইন্ডিয়ান চেম্বার। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, বিভাগীয় সচিব সুব্রত বিশ্বাসের পাশাপাশি সেখানে ছিলেন এপেডা চেয়ারম্যান সন্তোষ সারঙ্গিও। সেখানেই ওই আর্থিক সাহায্যের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।

কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রফতানির প্রয়োজনে পণ্যের ব্র্যান্ড প্রচার থেকে শুরু করে পরিকাঠামো নির্মাণ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আর্থিক সাহায্য দেয় এপেডা। সেই সূত্রে শেওড়াফুলিতে আলু-গুঁড়োর (যা মূলত চিপস তৈরিতে কাজে লাগে) কারখানা নির্মাণে ২০১১-’১২ সালে ৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল এপেডা। প্রকল্পের বাকি ৩০ কোটি টাকা জোগানোর কথা রাজ্যের।

সেই প্রসঙ্গেই এ দিন সারঙ্গি বলেন, “২০১১-’১২ সালে যে আলু-গুঁড়োর কারখানা গড়তে আর্থিক সুবিধা দিয়েছি, তা এখনও দিনের আলো দেখল না।”

অবশ্য পরে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, ওই অভিযোগ খারিজ করে কৃষি বিপণন মন্ত্রীর দাবি, মাত্র ৮ কোটি টাকা ছাড়া রাজ্য আর্থিক সুবিধা পায়নি। তিনি বলেন, “সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। তা মেনে সবটা করতে সময় লাগে। রাজ্য সরকারও অর্থ বরাদ্দ করেছে। বিষয়টি নাবার্ডের কাছে রয়েছে।” তাঁর আশা, নাবার্ডের ছাড়পত্র পেলে চলতি মাসেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় সচিবের যুক্তি, আর্থিক সাহায্যের থেকেও রাজ্যের বেশি প্রয়োজন প্রযুক্তিগত সহায়তা। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে এ জন্য আর্থিক সমস্যা নেই।

এই প্রকল্প গড়তে দেরি নিয়ে রাজ্য অভিযোগ অস্বীকার করলেও, সারঙ্গির দাবি, আর্থিক সাহায্য নিয়ে সময়ে প্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি। তাঁর মতে, এখানে প্রকল্প রূপায়ণে বাধা অনেক বেশি। তিনি জানান, গত কয়েক বছরে পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য এপেডা-র কাছ থেকে হিমাচল প্রদেশ ৩০ কোটি টাকা, গুজরাত ও মহারাষ্ট্র ২০ কোটি টাকা করে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে। এবং ওই সব রাজ্যগুলি সময়ে বরাদ্দ টাকা বেশি খরচ করতে পারার কারণে আর্থিক সুবিধাও বেশি পায়। পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী-সচিবের উদ্দেশে তাঁর আর্জি, “আপনারাও বেশি করে খরচ করলে সাহায্যের অঙ্ক বাড়বে।”

বস্তুত, রাজ্য থেকে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানির জন্য এ দিন পরিকল্পনা ও কৌশল ঢেলে সাজার পক্ষে সওয়াল করেন এপেডা চেয়ারম্যান। অনেকগুলি পণ্যের আলাদা ব্র্যান্ড তৈরির বদলে সবগুলিকে নিয়ে অল্প সংখ্যক নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড গড়লে তাতে সার্বিক ভাবে পণ্যগুলির গুরুত্ব বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। যেমন, বাসমতী নয়, এমন সব সুগন্ধি চালকে নিয়ে একটি ব্র্যান্ড গড়লে, তা বেশি নজর কাড়বে। সেই সঙ্গে সার্বিক ভাবে বিষয়টির উপর বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করাও সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, বাসমতী নয় এমন সুগন্ধি চাল রফতানিতে বাড়তি জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষি বিপণন মন্ত্রীও।

রাজ্যের কাছে আরও কয়েকটি প্রস্তাব রেখেছেন সারঙ্গি। যেমন, কলকাতা থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান কম হওয়ায় (বিশেষত পশ্চিম এশিয়ায়) সমস্যায় পড়েন এখানকার রফতানিকারীরা। এ দিন এ কথা জানিয়েওছেন তাঁদের একাংশ। সারঙ্গির আর্জি, পশ্চিম এশিয়া-সহ আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থার কলকাতা প্রতিনিধিদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের (মুখ্য সচিব স্তরে) বৈঠক করুক রাজ্য। পাশাপাশি, রাজ্য স্তরে শুধু রফতানির জন্য এপেডার মতো সংস্থা গড়া হোক। তাহলে রফতানির বিষয়টি জোর পাবে। কর্নাটক, পঞ্জাব প্রমুখ রাজ্য এ ধরনের সংস্থা গঠন করেছে। তা ছাড়া, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামোর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও রাজ্যের কাছে আর্জি জানান তিনি।

seoraphuli potato flecks factory central government aid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy