Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ঋণ ফেরতের ঝুঁকি নিয়ে অবশেষে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাল এসঅ্যান্ডপি

কমলো অচ্ছুত হওয়ার আশঙ্কা

বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে অচ্ছুত হওয়ার আশঙ্কার খাদ থেকে অন্তত কিছুটা পিছিয়ে এল ভারত। শুক্রবার মার্কিন মূল্যায়ন বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এসঅ্যান্ডপি) জানিয়ে দিল, ভারতের ঋণ ফেরত দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি (আউটলুক) নেতিবাচক (নেগেটিভ) থেকে স্থিতিশীল (স্টেব্ল) করছে তারা। দেশের অর্থনীতির হাল পুরোদস্তুর ফিরলে খোলা রাখছে মূল্যায়ন (ক্রেডিট রেটিং) উন্নত করার দরজাও। এ দিন মার্কিন সফরে রওনা দেওয়া প্রধানমন্ত্রীকে যা যথেষ্ট উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করছেন অনেকে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে অচ্ছুত হওয়ার আশঙ্কার খাদ থেকে অন্তত কিছুটা পিছিয়ে এল ভারত।

শুক্রবার মার্কিন মূল্যায়ন বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এসঅ্যান্ডপি) জানিয়ে দিল, ভারতের ঋণ ফেরত দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি (আউটলুক) নেতিবাচক (নেগেটিভ) থেকে স্থিতিশীল (স্টেব্ল) করছে তারা। দেশের অর্থনীতির হাল পুরোদস্তুর ফিরলে খোলা রাখছে মূল্যায়ন (ক্রেডিট রেটিং) উন্নত করার দরজাও। এ দিন মার্কিন সফরে রওনা দেওয়া প্রধানমন্ত্রীকে যা যথেষ্ট উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করছেন অনেকে।

এসঅ্যান্ডপি জানিয়েছে, “আমরা বিশ্বাস করি, যে রকম একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে এই নতুন সরকার এসেছে, তাতে অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রশাসনিক সংস্কার কার্যকর করার ক্ষমতা তাদের থাকবে।” ইউপিএ-জমানার শেষ দিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলে এসঅ্যান্ডপি স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, শিকেয় ওঠা সংস্কার আর কেন্দ্রের নীতিপঙ্গুত্বই খাদের ধারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। এ দিন বিবৃতিতে মূল্যায়ন সংস্থাটির আশা, ধীরে হলেও সেই সমস্যা মেটাতে পারবে নতুন সরকার। আর সেই কারণেই এই দৃষ্টিভঙ্গি বদল। দীর্ঘ মেয়াদে বৃদ্ধি ফের ৫.৫ শতাংশে পৌঁছনোর পাশাপাশি রাজকোষ ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদিতে রাশ টানা গেলে, মূল্যায়নও এক ধাপ তোলার ইঙ্গিত দিয়েছে বহুজাতিকটি।

এই ঘোষণা স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তি দিয়েছে কেন্দ্রকে। কারণ, আগেই দৃষ্টিভঙ্গি স্থিতিশীলে ফিরিয়ে দিয়েছিল অন্য দুই প্রধান রেটিং বহুজাতিক মুডিজ এবং ফিচ। এসঅ্যান্ডপি-ও সেই পথে হাঁটায় ৩ মূল্যায়ন সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গিই ভারতের পক্ষে স্থিতিশীল। ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত অন্য দেশগুলির (ব্রাজিল, রাশিয়া, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) মতো। শুধু তা-ই নয়, ভারতকে বিদেশি লগ্নির অন্যতম গন্তব্য করে তুলতে চাইছেন মোদী। স্থিতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি সে ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারামের কথায়, “লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরিয়ে অর্থনীতির হাল শোধরাতে সরকার যে দ্রুত পদক্ষেপ করছে, মূল্যায়ন সংস্থাটি তা বুঝতে পারায় আমরা খুশি।”

কোনও দেশকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তারই মূল্যায়ন হল ক্রেডিট রেটিং। রেটিং যত ভাল, তাকে ঋণ দেওয়া তত কম ঝুঁকির। আর তা কমার মানে ঋণের অর্থ ফেরত না-পাওয়ার ঝুঁকি বাড়া। বর্তমানে ভারতের রেটিং বিবিবি(-)। যা লগ্নিযোগ্য রেটিংয়ের মধ্যে সব থেকে নীচে। তাই এরও নীচে নেমে যাওয়ার অর্থ লগ্নিযোগ্যতার তকমা খোয়ানো। অর্থাৎ তখন এ দেশের সরকারি বন্ডে লগ্নি করতেও দু’বার ভাববেন বিদেশি লগ্নিকারীরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কারণেই মূল্যায়ন সংস্থাটির এই দৃষ্টিভঙ্গি বদল ভারতের পক্ষে এত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এমনিতেই রেটিং এত নীচে। তার উপর নিস্ফলা রাজনীতি, শিকেয় ওঠা সংস্কার আর কেন্দ্রের নীতিপঙ্গুত্বের কারণে ২০১২-র এপ্রিলে ঋণ ফেরতের ঝুঁকি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিও নেতিবাচকে নামিয়ে এনেছিল এসঅ্যান্ডপি। যার অর্থ মাথার উপর সর্বক্ষণ রেটিং ছাঁটাইয়ের খাঁড়া ঝুলতে থাকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখন দৃষ্টিভঙ্গি শোধরানোয় সেই দুশ্চিন্তা কিছুটা কমবে কেন্দ্রের। অর্থনীতির হাল ফেরাতে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারবে সরকার। হয়তো এ জন্যই এ দিন দৃষ্টিভঙ্গি শোধরানোর ঘোষণায় উঠেছে শেয়ার বাজার। খুশি শিল্পমহলও।

আর একটি কারণেও এই ঘোষণা এত গুরুত্ব পাচ্ছে। তা হল, বিশ্বের মঞ্চে ভারতকে লগ্নির অন্যতম সেরা গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন মোদী। চিন ও জাপান সফরে তিনি তা করেছেন। একই কথা বলেছেন মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্বোধনের মঞ্চে। কিন্তু দেশের ধার ফেরতের মূল্যায়ন যদি সারাক্ষণ লগ্নি-অযোগ্য রেটিংয়ের খাদে পড়ার আশঙ্কায় দুলতে থাকে, তা হলে সেখানে টাকা ঢালতে বিদেশি লগ্নিকারীরা আগ্রহী হবেন কেন?

তাই বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, ঠিক সময়ে এসঅ্যান্ডপি-র কাছে এই ‘উপহার’ পেলেন মোদী। কারণ, শুক্রবারই মার্কিন সফরে রওনা দিয়েছেন তিনি। সেখানে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পাশাপাশি দেখা করবেন শীর্ষ মার্কিন কর্পোরেট কর্তাদের সঙ্গে। তাঁদের সামনে ভারতকে তুলে ধরবেন লগ্নির অন্যতম সেরা গন্তব্য হিসেবে। তাই তার আগে মার্কিন রেটিং বহুজাতিকের থেকে পাওয়া এই ‘স্বীকৃতি’ তাঁর পক্ষে কিছুটা সহায়ক হবে বলে অনেকের ধারণা।

তিন দিন পর উঠল বাজার

সংবাদ সংস্থা • মুম্বই

গত ছ’সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে যাওয়ার পর শুক্রবার দিনের শেষে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াল শেয়ার বাজার। এ দিন মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপি ভারতের ঋণ ফেরত দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি (আউটলুক) নেতিবাচক (নেগেটিভ) থেকে বদলে স্থিতিশীল (স্টেব্ল) ঘোষণা করার পর টানা তিন দিনের পতন কাটাল সেনসেক্স। প্রায় ১৫৮ পয়েন্ট বেড়ে থিতু হল ২৬,৬২৬.৩২ অঙ্কে। গত তিন দিনে তা পড়েছিল মোট ৭৩৮.৩৮ পয়েন্ট। টানা চার দিন পড়ার পর এ দিন ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও বেড়েছে ১৯ পয়সা। এক ডলার হয়েছে ৬১.১৫ টাকা। বাজার সূত্রের খবর, রফতানিকারীরা এবং কিছু ব্যাঙ্ক ডলার বিক্রি করার ফলেই টাকার দাম বেড়ে যায় এ দিন। শুক্রবার এসঅ্যান্ডপি-র মূল্যায়ন সেনসেক্সকে টেনে তুললেও বাজার দিনের বেশির ভাগ সময় অস্থিরই ছিল। এশিয়ার বিভিন্ন সূচকের দুর্বলতা ও ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নি-কারীদের শেয়ার বিক্রির জেরে এক সময় সূচক নামে ২৬,২২০.৪৯ অঙ্কে। গত ছ’সপ্তাহে দিনের মাঝামাঝি সময়ে এতটা নীচে নামেনি সূচক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

s and p sensex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE