শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি এবং খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ভাল ফল পাওয়া থেকে শেয়ার বাজারকে বঞ্চিত করল ইনফোসিসের শেয়ার দরে ধস।
ফলে বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতে সেনসেক্স প্রায় ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও, দিনের শেষে তা প্রায় ৮২ পয়েন্ট কমে এসে থিতু হল ২১,৭৭৪.৬১ অঙ্কে। এ দিন অবশ্য টাকার দাম বেড়েছে ৫ পয়সা। ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬১.১৭ টাকা। এক দিকে ডলারের আমদানি বৃ্দ্ধি, অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধির হার কমা এবং শিল্পোৎপাদন সূচকের মুখ উপরের দিকে ওঠাই টাকার দাম বাড়ায় সহায়ক হয়েছে বলে বিদেশি মুদ্রা বাজার সূত্রের খবর। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগ বৃদ্ধি দেশে ডলারের আমদানি বাড়াবে, এই ধারণার ভিত্তিতেই টাকার দাম বাড়ছে।
চলতি অর্থবর্ষে ফলাফল ভাল হবে না, ইনফোসিস কর্ণধার এন আর নারায়ণমূর্তির এই আশঙ্কার জেরেই দেশের অগ্রণী এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ার দর বৃহস্পতিবার ৮.৫৪% পড়ে যায়। বিএসইতে বাজার বন্ধ হওয়ার সময়ে ইনফোসিসের প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩৩৫৭.৫০ টাকায়। তবে লেনদেনের একটা সময়ে ইনফোসিসের শেয়ার দর আগের দিনের থেকে ৯% পড়ে ঠেকেছিল ৩৩৪০ টাকায়। এনএসই-তে অবশ্য পতনের হার ছিল ৮.৪৫%।
চলতি অর্থবর্ষে ইনফোসিসের আয় কমে আসার ইঙ্গিতই সংস্থার শেয়ার দরকে টেনে নামিয়েছে। নারায়ণমূর্তি জানান, ২০১১-র ৩১ মার্চ থেকে ২০১৩-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসাব ধরলে ইনফোসসের আয় কমেছে ৭৭%। নিট মুনাফার হার, অর্থাৎ খরচ মিটয়ে ব্যবসা থেকে আয় ও নিট আয়ের অনুপাত কমেছে ৪৫%। পিটিআইয়ের খবর, ইনফোসিসের পক্ষ থেকে যে -ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তাতে ২০১৩-’১৪ সালে তাদের আয় আগের বছরের থেকে ১২ শতাংশের বেশি বাড়বে না বলেই বাজার মহলের ধারণা। অথচ এক সময়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন আয় বাড়বে ২৪.৪% থেকে ২৪.৯ শতাংশের মধ্যে। পরে অবশ্য তা কমিয়ে ২১-২২% করা হয়।
শুধু তাই নয়, এই দিন ইনফোসিসের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস ডি শিবুলাল বলেন, “এই অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে আয় বৃদ্ধির খরা আগামী অর্থবর্ষেও চলতে পারে।” ইনফোসিসের বরাত কমে আসার ফলেই সংস্থার আয় কমেছে বলে মন্তব্য করেন শিবুলাল।
এ ছাড়া চলতি আর্থিক বছরে ডলারে টাকার দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। অর্থাৎ দাম কমেছে ডলারের। এর ফলে ডলার বিক্রি করে আগের থেকে কম টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সিংহভাগ আয়ই হয় ডলারে। ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে ডলার বেচে টাকায় পরিণত করেই আয়ের হিসাব করতে হয়। তাই টাকার দাম বেড়ে ডলারের দাম কমে গেলে, তার বিরূপ প্রভাব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার আয়ের উপর পড়ে। বরাত বাড়িয়ে নিজেদের আয়কে ধরে রাখার চেষ্টা করে ওই সংস্থাগুলি। ইনফোসিসের ক্ষেত্রে সমস্যা, তাদের বরাতও কমেছে।
ইনফোসিসের শেয়ার দরের এই পতন একাই এই দিন সূচককে টেনে নামায়। দেশে মূল্য বৃদ্ধি কমা এবং অতি অল্প হলেও শিল্পোৎপাদনের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি এ দিন ইউরোপ ও এশিয়ারও বেশ কিছু শেয়ার বাজার চাঙ্গা ছিল। যার জন্য লেনদেনের শুরুতে ক্রমশ চাঙ্গা হচ্ছিল বাজার। কিন্তু ইনফোসিস আয় বৃদ্ধি কমার ইঙ্গিত দেওয়ায় হু হু করে সংস্থার দর পড়তে থাকে। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা সান ফার্মার শেয়ার দরও এক ধাক্কায় পড়েছে ৫.০৩%। আমেরিকা ওষুধ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্যই দর পড়েছে।
তবে শেয়ার বাজারের পতন সাময়িক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ধারণা, সূচকের মুখ এখন উপরের দিকেই থাকবে। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিই টেনে তুলবে সূচককে।