আপ-এর দিল্লি জয়েও মুষড়ে পড়েনি সেনসেক্স। ছবি: পিটিআই
অবশেষে তাঁকে ঘিরে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলল শেয়ার বাজার। দিল্লিতে সরকার গড়ায় সাধারণ মানুষ অরবিন্দ কেজরীবালের প্রতিই একচেটিয়া সমর্থন জানানোর জের মঙ্গলবার এসে পড়ে শেয়ার বাজারে। সোমবারের পতনের রেশ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় মুম্বই বাজার।
একটানা আট দিন পড়ার পরে এ দিন ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ার বাজার। গত আট দিনে সেনসেক্সের পতন ১৪৫৫ পয়েন্ট বা ৫%, যার মধ্যে সোমবারই সূচক পড়ে যায় ৪৯০ পয়েন্ট। বাজার সূত্রের খবর, পতনের অব্যবহিত কারণ ছিল দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিত। বস্তুত, কেন্দ্রে বিজেপি স্থায়ী সরকার গড়তে সমর্থ হয়েছে, এই বিশ্বাস থেকেই লগ্নিকারীদের মনে আশার সঞ্চার হয় যে, এ বার আর্থিক সংস্কারেরর ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ করবে তারা। কিন্তু রাজ্যসভায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বলে লোকসাভায় নিজেদের জোরে বিল পাশ করিয়ে নিলেও রাজ্যসভায় হোঁচট খেতে হচ্ছে। এ বার রাজ্যগুলিতে বিজেপির পরাজয় হলে রাজ্যসভায় তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরিই হবে না। সেই কারণেই দিল্লি বিধানসভায় বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় বাজারে। অথচ মঙ্গলবার ভোটের ফলাফল সেই ইঙ্গিতকেই সত্যি প্রমাণ করে আম আদমি পার্টিই দিল্লি বিধানসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে এলেও দিনের শেষে সেনসেক্স উঠে যায় ১২৮ পয়েন্ট। এক সময়ে অবশ্য তা ৪০০ পয়েন্ট উঠে গিয়েছিল। দুপুরের পরে তা পড়তে শুরু করলেও শেষ অবধি উত্থানের মধ্যেই বন্ধ হয় সেনসেক্স। বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স ছিল ২৮,৩৫৫.৬২ পয়েন্টে। নিফটি-ও ৩৯.২০ পয়েন্ট বেড়ে বন্ধ হয়েছে ৮৫৬৫.৫৫ পয়েন্টে।
এ দিন আশঙ্কা কাটিয়ে শেয়ার বাজারের উঠে দাঁড়ানোর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে রয়েছে:
• দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো দলের দিল্লির মসনদে বসা
• চলতি ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে ৭.৪% আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস
• আসন্ন বাজেট ঘিরে প্রত্যাশা
দেশ জুড়ে বিপুল ভোটে জিতে বিজেপি মে মাসেই কেন্দ্রে সরকার গড়ায়, তাদের ভোটে হারানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয় বলেই মনে করেছিল শেয়ার বাজার। বিশেষজ্ঞরা জানান, সেই কারণেই কেজরীবালের নেতৃত্বে আপ-এর জয়ের সম্ভাবনায় অনিশ্চয়তা সোমবার গ্রাস করে লগ্নিকারীদের। কিন্তু কেজরীবালের সত্ ভাবমূর্তি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি লগ্নিকারীদের মনে ছাপ ফেলে। ফলে তাঁর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরে আসা নিয়ে এ দিন আর তেমন উদ্বেগ ছিল না বাজারে। তা ছাড়া বাজার সূত্রের খবর, বুথ ফেরত সমীক্ষার পরে বিষয়টি একরকম ধরেই নিয়েছিল বাজার। ফলে ঝাড়ু-ঝড়ের খবর নতুন করে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেনি বাজারে।
বরং অর্থ বছরে ৭.৪% আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস লগ্নিকারীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে। দিল্লির মতো একটি ছোট রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি পিছিয়ে পড়লেও এতে সার্বিক ভাবে মোদী সরকারের সংস্কারের রথ পিছিয়ে পড়বে না বলেও আশা করছে বাজার। ফলে বাজারে প্রাণ সঞ্চারের মতো প্রস্তাব আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির কেন্দ্রীয় বাজেটে থাকবে বলে কার্যত নিশ্চিত লগ্নিকারীরা। শিল্পের জন্য করছাড় ও লগ্নি-সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তাঁর বাজেটে জোর দিলে শেয়ার বাজার উত্সাহিত হবে। বিদেশি লগ্নিকারীরাও তাঁদের পছন্দের বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে ভারতকেই গুরুত্ব দেবেন। সব মিলিয়ে দিল্লির ভোটের ফলাফলের তুলনায় এই মুহূর্তে বাজেট এবং মোদী সরকারে হাত ধরে সংস্কারের এগিয়ে যাওয়াকেই পাখির চোখ করছে বাজার। ফলে ক্রমেই লগ্নিকারীরা বাজারমুখো হচ্ছেন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণে কেজরীবালের জয়েও তাঁদের শেয়ার কেনায় তেমন ভাটা পড়েনি।
এ দিন সেনসেক্সের আওতায় থাকা ৩০টি শেয়ারের মধ্যে ১৮টির দরই বেড়েছে। বাজারে মোট লেনদেনের অঙ্ক গত কালের ২৯৫৫.১১ কোটি টাকা থেকে অনেকটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৮৩.৬৯ কোটি টাকা। যে-সব শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী ছিল, সেই তালিকায় রয়েছে: টাটা মোটরস (৪.০১%), আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক (৩.৩৪%), টাটা স্টিল (২.৮০%), এসবিআই (২.৬৫%), সেসা স্টারলাইট (২.৬৪%), মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা (২.৫৩%), গেইল ইন্ডিয়া (২.২৬%), কোল ইন্ডিয়া (২.১১%)। এ ছাড়াও হিন্দালকো, ইনফোসিস, ভেল, সিপ্লা-র দর বেড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy