চিরাচরিত ভ্যানিলা, চকোলেট বা স্ট্রবেরির পাশে মিষ্টি পান, নলেন গুড়, কাঁচা লঙ্কা থেকে শুরু করে গ্রিন টি, ওয়াসাবি, লেমনগ্রাস। আইসক্রিমের স্বাদে-গন্ধে এমন নিত্যনতুন চমক। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে এই সব নয়া উপকরণকেই তুরুপের তাস করছে স্থানীয় আইসক্রিম সংস্থারা।
গোটা বিশ্বে আইসক্রিমের ক্ষেত্রে অন্যতম ছোট বাজার ভারত। মাপ ৩৫০০ কোটি টাকা। বাজারের ওঠা-নামা অনেকটাই আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে। যেমন ২০১৩ সালে বর্ষা ও শীত, দুই ঋতুই লম্বা হওয়ায় ব্যবসা মার খেয়েছে। সাধারণ ভাবে গোটা বছরের তুলনায় গ্রীষ্মকালে ২০-২৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়। তবে গত বছরে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে।
বর্তমানে ভারতে বছরে এক জন ৪০০ মিলিলিটার আইসক্রিম খান। আমেরিকায় ১৪ লিটার। এবং চিনে ২.২ লিটার। তবে ইউরোমনিটরের সমীক্ষা বলছে ভারতের বাজারের ছবিটা উজ্জ্বল হবে। ২০১৭ সালে আইসক্রিমের বাজার ৬০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সেই বাজার দখলের লড়াইয়ে রকমারি স্বাদ-গন্ধের উপকরণকেই বাজি ধরছে কলকাতার ফ্রেশ অ্যান্ড ন্যাচারাল, দিল্লির থাঙ্কোজ ন্যাচারাল বা ক্রিমবেল। সকলের দাবি, তালিকায় রকমারি ‘ফ্লেভার’-এর আইসক্রিমের নিত্যনতুন সংযোজনই কিস্তিমাত করতে পারে। কারণ জেনারেশন ওয়াই-এর চাই নতুন নতুন স্বাদ।
অবশ্য স্বাদ-গন্ধে রকমফের আনার জন্য খাঁটি জিনিস ব্যবহার করার উপরেই জোর দিতে হবে বলে মনে করেন ফ্রেশ অ্যান্ড ন্যাচারাল-এর অন্যতম কর্ণধার কুণাল পাবরাই। শুধু চমকে কাজ হয় না। উপকরণের মানের উপরেই নির্ভর করে আইসক্রিমের স্বাদ। তাঁর দাবি, এই স্বাদ-গন্ধের আসল মজা টিঁকিয়ে রাখতেই সুদূর মাদাগাসকর থেকে ভ্যানিলা আমদানি করেন তাঁরা। পাবরাই-এর আইসক্রিমের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নলেন গুড়ের আইসক্রিম তৈরির ক্ষেত্রেও এই আসল উপকরণ ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়া হয় বলে দাবি তাঁর। এক মাত্র শীতকালেই নলেন গুড় পাওয়া যায়। তাই সেই গুড় গোটা বছর ব্যবহার করার জন্য নিজস্ব প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। একই ভাবে গ্রিন টি, জাপানি সব্জি ওয়াসাবি, ইতালির চিজ বা বাংলার গন্ধরাজ লেবু ব্যবহার করা হয়। এবং এই মান বজায় রেখেই সাড়ে ৬ কোটি টাকার ব্যবসা চলতি আর্থিক বছরের শেষে ১০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন পাবরাই।
তবে এ ধরনের উপকরণ ব্যবহার করার জন্য দাম চড়া রাখতেই হয় বলে জানান পাবরাই। কারণ উপকরণের মানের সঙ্গে আপস করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন কলকাতার ফ্রেশ অ্যান্ড ন্যাচারাল, দিল্লির থাঙ্কোজ ন্যাচারাল ও গুড়গাঁওয়ের ওয়ান্ডারলাস্ট-এর কর্ণধারেরা। এবং একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, নিজেদের পছন্দের আইসক্রিম খেতে অন্যান্য পরিচিত ব্র্যান্ডের চেয়ে ২০-২৫ শতাংশ বেশি দাম দিতে রাজি ক্রেতারাও। ‘স্কুপ’ বা বড় চামচ প্রতি ২৫০ টাকা দিতেও পিছপা নন তাঁরা। পাবরাইয়ের মতে, আইসক্রিমের বাজারকে এখন দু’টি করে মাপকাঠির ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, দামের নিরিখে সাধারণ ও উচ্চবিত্তের বাজার। দ্বিতীয়ত রয়েছে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপকরণের ব্যবহারের ভিত্তিতে তৈরি বাজার। তৃতীয়ত, টাটকা ফল ও বোতলবন্দি ফলের রসের ব্যবহারের উপরেও বাজার ভাগ করা যায়।
প্রতি বছর ২৫% হারে বাড়তে থাকা বাজারে টক, ঝাল, মিষ্টির পাঁচমিশেলি আইসক্রিম কতটা জায়গা করে নেয়, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy