Advertisement
E-Paper

বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে টিভি বাজার

মোদী বনাম মেসি। লোকসভা ভোট বনাম বিশ্বকাপ ফুটবল। টেলিভিশন বিক্রির ক্ষেত্রে লড়াইটা এখন ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে। নির্বাচন ঘিরে আমজনতার আগ্রহকে পুঁজি করে টিভি বিক্রি বাড়ানোর এক রাউন্ড লড়াই শেষ হয়েছে গত মাসেই। এ বার শুরু হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের লড়াই, বিশ্বকাপকে পুঁজি করে। কিন্তু প্রথম রাউন্ডের চেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড এখনও তেমন জমেনি। কেন?

গার্গী গুহঠাকুরতা ও পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০২:৩৭

মোদী বনাম মেসি। লোকসভা ভোট বনাম বিশ্বকাপ ফুটবল।

টেলিভিশন বিক্রির ক্ষেত্রে লড়াইটা এখন ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে। নির্বাচন ঘিরে আমজনতার আগ্রহকে পুঁজি করে টিভি বিক্রি বাড়ানোর এক রাউন্ড লড়াই শেষ হয়েছে গত মাসেই। এ বার শুরু হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের লড়াই, বিশ্বকাপকে পুঁজি করে।

কিন্তু প্রথম রাউন্ডের চেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড এখনও তেমন জমেনি। কেন?

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কারণ অনেকগুলো। একেই তো ভোটের সময়ে এক প্রস্ত টিভি বিক্রি হয়েছে। তার ওপর এ বছর বর্ষা আসছে দেরিতে। শঙ্কা রয়েছে চাষবাস নিয়ে। ফলে গ্রামাঞ্চলে হাতের পুঁজি সহজে ছাড়তে চাইছেন না অনেকে। কাজেই সেখানে টিভি বিক্রির হার ঊর্ধ্বমুখী নয়। সঙ্গে বাড়তি বিড়ম্বনা ভ্যাপসা গরম। তার দাপটে ক্রেতাদের একটা বড় অংশের বাজেট এ বার এসি বা বড় ফ্রিজ কিনতে খরচ হয়েছে। মাথায় রাখতে হবে, অধিকাংশ মানুষের ঘরেই এখন রঙিন টিভি। ফলে খুব প্রয়োজন না হলে নতুন মডেলের ‘স্লিম’ টেলিভিশন কেনার ঝোঁকটাও কম।

‘অল ইন্ডিয়া কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট বলরাম চৌধুরীও সেই ব্যাখ্যাই দিচ্ছেন। তাঁর মতে, অনেকেই হয়তো বিশ্বকাপের জন্য নতুন বড় টিভি কেনার টাকা আলাদা করে রেখেছিলেন। কিন্তু রেকর্ড-ভাঙা গরমের জন্য সেই টাকায় কেউ এসি, কেউ ফ্রিজ কিনতে বাধ্য হয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে এসি। অবশ্য একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, এ বারের বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনাও কিছুটা কম বলে টেলিভিশন বিক্রি ঢিমে তালে চলছে। শিল্প মহলের অনেকেই বলছেন, বাদ সেধেছে বিশ্বকাপের সময়সূচিও। অধিকাংশ খেলাই বেশি রাতে। ইচ্ছে থাকলেও অনেকে সব খেলা দেখতে পারছেন না। ফলে আপাতত টিভি কেনার ঝোঁক কম। তবে ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনা সেমিফাইনালে উঠলে সেই ঝোঁকটা বাড়তে পারে বলেও আশা রাখছেন তাঁরা।

উল্টোডাঙার একটি বড় বিপণীর টেলিভিশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিশ্বজিৎ পাল দাবি করলেন, বিশ্বকাপের জন্য তাঁরা প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫টি নতুন টিভি বিক্রি করছেন ঠিকই। কিন্তু গত বিশ্বকাপে বিক্রি হয়েছিল এর থেকে অনেক বেশি। ডালহৌসি চত্বরের একটি বিপণীর ম্যানেজার অরিন্দম পাত্র আবার জানালেন, এ বছর তাঁদের টিভির বিক্রি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

নির্মাতা সংস্থাগুলি অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ। তাদের দাবি, বিশ্বকাপ ঘিরে উত্তেজনার পারদ এখনও তুঙ্গে পৌঁছয়নি। তাই ‘বিক্রি কম হচ্ছে’ বলার সময় আসেনি। তা ছাড়া, শুধু বিশ্বকাপ ধরে বিক্রির হিসেব করেওনি তারা। সংস্থাগুলির দাবি, নির্বাচন ও ফুটবলের যুগলবন্দির উপর ভরসা করেই বিপণন কৌশল তৈরি হয়েছে। এবং বিপণন ও প্রচার বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থও ব্যয় করা হচ্ছে। বিশ্বকাপের উত্তেজনায় ক্রেতা টানার জন্য নতুন টিভির সঙ্গে নানা ধরনের উপহার দিচ্ছে তারা। কেউ প্রিয় দলের জার্সি। কেউ বা হেডফোন, পেন ড্রাইভ, বিশ্বকাপের ‘ব্রাজুকা’ বল। এ ছাড়া অন্যান্য আর্থিক ছাড় তো রয়েছেই।

সংস্থাগুলির আশা, স্লগ ওভারে রান উঠবে। সেই সঙ্গে গত দু’বছর ধরে এই বাজারের শ্লথ বৃদ্ধির হার অনেকটাই পুষিয়ে দেবে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বিক্রির বহর। শুধু তা-ই নয়, গত বছরে এই সময়ের তুলনায় এ বার অন্তত ৩৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হবে বলেই তাদের দাবি।

এই বাজারে নতুন মডেলও ছাড়ছে অধিকাংশ সংস্থা। কারণ, ক্রেতাদের চাহিদা বদলাচ্ছে। বড় স্ক্রিনের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছেন তাঁরা। মোবাইলের স্ক্রিন যেমন হাতের তেলো ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তেমনই দেওয়াল জোড়া টিভি স্ক্রিনের চাহিদা বড় শহর থেকে ছোট শহরে। বাড়ছে ৪০ থেকে ৫৫ ইঞ্চি টিভির চাহিদা। তবে যে কোনও সংস্থার ২৮ ইঞ্চি এলইডি টিভির-ই বিক্রি বেশি।

বিপণীগুলি যা-ই বলুক, অন্যান্য শহরের তুলনায় মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের শহর নিয়েই অনেকটা আশাবাদী বিভিন্ন সংস্থা। সোনি ইন্ডিয়ার অন্যতম কর্তা সুনীল নায়ারের যেমন বিশ্বাস, ফুটবল-পাগল কলকাতায় গত বছরের চেয়ে অবশ্যই বেশি টিভি বিক্রি হবে। ভিডিওকনের বিপণন-প্রধান সুনীল টন্ডন জানালেন, কলকাতার বাজারের দিকে নজর রেখে ‘ওয়েলকাম সিরিজ’ নামে টিভি ছেড়েছে সংস্থা। তাঁরও দাবি, এপ্রিল থেকে জুনের ত্রৈমাসিকে যা বিক্রি হবে, তা গোটা বছরের মোট বিক্রির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। প্যানাসোনিক ইন্ডিয়া-র মণীশ শর্মার মতে, খেলাপাগল ভারতে এ ধরনের বিপণনের সুযোগ নতুন দরজা খুলে দেয়। স্যামসাং-এর দাবি, টিভি বিক্রির ক্ষেত্রে এ বছর ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে এগোচ্ছে সংস্থা।

হিসেবনিকেশ অনেক। আর সেই হিসেবে অবশ্যই ধরা রয়েছে বিশ্বকাপের বাজার।

downgrading sell of tv set gargi guhathakurata pinaki bandopadhyay world cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy