রাজ্য সরকার চায়, আরও দেশি-বিদেশি ভ্রমণকারী পা রাখুক পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। কিন্তু তাঁদের যাত্রাপথ ও পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো যে- এখনও অনেকটাই দুর্বল, তা ধরা পড়ল সিআইআই-এর শিল্প সম্মেলনেই।
বিদেশি পর্যটক সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের কথায়, দার্জিলিং বা ঘরের কাছে শান্তিনিকেতন কিংবা সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে যথেষ্টই যোগ্য। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পথটা বেশ ক্লান্তিকর। দূরের যাত্রায় নেই মাঝপথে বিশ্রামের উপযুক্ত ব্যবস্থাও। সেই খামতি দূর করতে না-পারলে রাজ্যে পর্যটন শিল্প প্রসারের পক্ষে তা অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।
রাজ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে গত চার বছর ধরে ‘ডেস্টিনেশন ইস্ট’ নামে একটি শিল্প সম্মেলন শুরু করেছে বণিকসভা সিআইআই। বৃহস্পতিবার থেকে টাউন হলে শুরু হয়েছে সেই সম্মেলন। যেখানে বিদেশি পর্যটন সংস্থাগুলি মুখোমুখি বসছে এ রাজ্যের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে। এ রাজ্যের পর্যটন সম্ভারের স্বাদ দিতে সেখানে আমন্ত্রিত বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিদের দার্জিলিং, শান্তিনিকেতন, সিকিম, সুন্দরবন ইত্যাদি সফর করাচ্ছে সিআইআই। কেউ কেউ আগামী দিনে যাবেন। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই গিয়েছেন, সভার ফাঁকে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হলে ওই সব সমস্যার কথাও ফুটে ওঠে।
যেমন, তাইল্যান্ডের ফুকেত-এ পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত আদপে ডাচ রবার্ট ডি গ্রাফ বাগডোগরা থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন গ্যাংটক। অভিযোগ করলেন, পর্যটকদের ওই রাস্তায় যেতে বললে ব্যবসা মার খাবে। তাঁর যুক্তি, যাত্রা শুরুর পরে এক-দু’ঘণ্টার রাস্তা অন্তত অ্যাসফল্টের হোক। বাকিটা তেমন ভাল না-হলেও অনেকের হয়তো সমস্যা হবে না। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার পথের পুরোটাই তেমন হলে পর্যটকদের হাল কী হবে? জানালেন, তাঁদের আট জনের দলের তিন জন শারীরিক অসুস্থতার কারণেই আর গ্যাংটক থেকে পেলিং যেতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট মহলে তাই প্রশ্ন উঠছে, পর্যটক সংস্থার প্রতিনিধিরই যদি এই হাল হয়, তা হলে তাঁরা ব্যবসা আনবেন কী করে?
সিঙ্গাপুরের সিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি সিয়ান লিম-এর এ বারই প্রথম এ রাজ্যে আসা। নতুন অভিজ্ঞতা। দার্জিলিং গিয়ে সেখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য, কলকাতার ঐতিহ্য দেখে তিনি খুশি। কিন্তু দার্জিলিং যাওয়ার পথে ক্লান্ত হলেও মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার তেমন ব্যবস্থা ছিল না। অথচ সিঙ্গাপুরে তাঁদের অভিজ্ঞতা, বেশ কিছু দূরত্ব অন্তর এমন ব্যবস্থা রয়েছে।
একই অভিজ্ঞতা শান্তিনিকেতনে যাওয়া বাংলাদেশের হাসান সৈয়দেরও। বললেন, তাঁর দেশে পথের ধারের গ্যাস বা পেট্রোল পাম্পের শৌচালয় এখানকার চেয়ে অনেকটাই ভাল। শৌচালয়ের অভাবের কথা বলেছেন, ইউক্রেন থেকে আসা ল্যারিসা বুরিয়াশোভস্কা-ও। কোথাও কোথাও পাইপে জল বা শৌচালয়ে পরিচ্ছন্নতার অভাবও চোখ এড়ায়নি রবার্টের।
রবার্টকে আরও অবাক করেছে, মেট্রো শহর কলকাতায় রবিবার ভোরে মেট্রো রেল না-চলা। ভোরে রাজারহাটের হোটেল থেকে বেরিয়ে চেয়েছিলেন কলকাতা ঘুরে বেড়াবেন মেট্রো চড়ে। তাঁর মতে, ২৪ ঘণ্টাই মেট্রো চলা উচিত।
এর আগে অবশ্য রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও সচিব অজিত বর্ধন সরকারের নানা উদ্যোগের কথা জানান বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে। যেমন নতুন নীতি প্রণয়ন, হোম-স্টে ব্যবস্থার প্রসার, আর্থিক সহায়তা প্রকল্প, বিলাস কর বিলোপ করার ভাবনা, পরিকাঠামো নির্মাণে জোর ইত্যাদি। তেমনই যাত্রাপথের দু’ধারে ১০০টি বিশ্রামাগার তৈরি করছে রাজ্যের পূর্ত দফতর। এমন ৩০টি কেন্দ্র শীঘ্রই পর্যটন দফতরকে হস্তান্তর করবে তারা।
এর আগে রাজ্য অবশ্য দাবি করে, তারা বিভিন্ন সড়ক উন্নত করছে। কিন্তু বহু রাস্তাই আবার কেন্দ্রের দায়িত্বে। ফলে পরিকাঠামোর অভাবের গোটা দায়িত্ব রাজ্যের একার কাঁধে চাপানো ঠিক নয়। বস্তুত, বিভিন্ন রাজ্যের সড়কের দায়িত্বই সংশ্লিষ্ট সরকারের। তবে কিছু থাকে কেন্দ্রীয় সংস্থার অধীনে। ফুকেতের ব্যবসায়ী রবার্ট-ও এই ধারণা থেকেই বলছেন, সকলকেই মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy