স্বস্তি। হেগ-এ শেল-এর সদর দফতর
এক যাত্রায় পৃথক ফল নয়। বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরে পেতে বাদবাকি সংস্থার ক্ষেত্রেও ভোডাফোনকে দেওয়া সুবিধার পথেই হাঁটার জন্য দেশ জুড়ে আয়কর-কর্তাদের নির্দেশ দিল মোদী সরকার। এর জেরে রয়্যাল ডাচ শেল, আইবিএম, মাইক্রোসফট, সোনি, নোকিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি-র মতো সংস্থার সঙ্গেও কর-বিবাদ নিয়ে কেন্দ্রের রফা হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত অর্থ মন্ত্রকের।
ভোডাফোনোর ৩২০০ কোটি টাকার কর নিয়ে আইনি বিবাদ থেকে সরে আসার একদিন পরে বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এ ব্যাপারে আয়কর-কর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে ভোডাফোনের সঙ্গে রফার সূত্র ধরে আইন বদলই কেন্দ্রের লক্ষ্য বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, ৩২০০ কোটি টাকার কর নিয়ে ভোডাফোন বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের বিবাদে বম্বে হাইকোর্ট ভোডাফোনের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। মোদী সরকার সেই রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বুধবার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জানানো হবে না।
২০১০ সালে ভোডাফোন গোষ্ঠীরই দু’টি সংস্থার মধ্যে শেয়ার হস্তান্তরের (ট্রান্সফার প্রাইসিং) উপর ৩২০০ কোটি টাকার কর চাপিয়েছিল আয়কর দফতর। ট্রান্সফার প্রাইসিং হল সেই ধরনের শেয়ার বা অন্য কোনও সম্পদ হস্তান্তর, যা একটি বহুজাতিক সংস্থা অন্য দেশে তারই কোনও শাখার সঙ্গে করে থাকে। ব্যবসার স্বার্থে বহুজাতিকরা প্রায়ই এ ধরনের লেনদেন করে। ভোডাফোন-ও যুক্তি দিয়েছিল, এই লেনদেন করের আওতায় পড়ে না। কিন্তু মনমোহন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, শেয়ারের দাম কম করে দেখানো হলে তার উপর কর বসতে পারে। গত বছর জানুয়ারিতে এর বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে আবেদন জানায় ভোডাফোন। অক্টোবরে আদালত রায় দেয়, ভোডাফোনকে কর দিতে হবে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর বসিয়েছে। সেই সঙ্গেই অন্য সংস্থার জন্য একই নীতি প্রযোজ্য হবে বলে বৃহস্পতিবার সাফ জানিয়ে দিল অর্থ মন্ত্রক।
অর্থ মন্ত্রকের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “ভোডাফোনকে নিয়ে হাইকোর্টের রায় মেনে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ওই রায়ের যুক্তিই অন্য সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একই ধরনের মামলার জন্য বহাল থাকবে।” অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভোডাফোন-হাচিসন ব্যবসায়িক লেনদেনের উপরে ২০ হাজার কোটি টাকার করের দাবি নিয়ে বিবাদও আদালতের বাইরে মিটিয়ে ফেলার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে কেন্দ্র ও ভোডাফোনের মধ্যে বোঝাপড়ার চেষ্টা চলছে।
এই নির্দেশের ফলে সবচেয়ে আগে নেদারল্যান্ডস-এর বহুজাতিক পেট্রোকেম সংস্থা শেল স্বস্তি পাবে বলে আয়কর দফতর সূত্রের খবর। কারণ, তাদের ক্ষেত্রেও নভেম্বরে বম্বে হাইকোর্ট ট্রান্সফার প্রাইসিং মামলায় একই রায় দিয়েছে। শেল-এর উপর ১৫,২২০ কোটি টাকার কর বসিয়েছিল আয়কর দফতর। শেল গ্যাস ভারতীয় শাখা শেল ইন্ডিয়ার শেয়ারে লগ্নির ক্ষেত্রে শেয়ার দর কম করে দেখানোর যুক্তিতেই ২০১৩ সালে ওই কর বসানো হয়। ভোডাফোনের ধাঁচেই ওই কর বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত।
আইবিএমে ২০০৮-এ বসে ৫৭৫৩ কোটি টাকার আয়কর। নোকিয়ায় ১৩ হাজার কোটি টাকা কর বসানোর জেরে তাদের সঙ্গেও আইনি বিবাদে জড়ায় কেন্দ্র। পরে বন্ধ হয় তাদের চেন্নাই কারখানাও। আয়কর বিভাগ সূত্রের খবর, ২৭টির মতো সংস্থার সঙ্গে আইনি বিবাদে জড়িয়ে পড়ে ইউপিএ সরকার। দু’বছরে বহু কোটি টাকার কর বসানোকে কেন্দ্র করে এই সব বিদেশি সংস্থার সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয় তাদের। যা আপসে মিটিয়ে নিয়ে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে সন্ধির বার্তাই দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy