Advertisement
E-Paper

শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলে আটকে প্রকল্প

রাজ্যের অসহযোগিতা আর ঔদাসিন্যের অভিযোগ আগেই ছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের বিচুনিয়ায় দীর্ঘ দিন আটকে থাকা গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি শুরু না-হওয়ার কারণ হিসেবে এ বার যুক্ত হল শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলও। এই বন্দর গড়তে আগ্রহী মেকা গোষ্ঠীর শাখা সংস্থা আম্মালাইন্সের দাবি, ৬,০০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্প নিয়ে চলতি মাসেই শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে সওয়াল করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ শিশির অধিকারী।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৫

রাজ্যের অসহযোগিতা আর ঔদাসিন্যের অভিযোগ আগেই ছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের বিচুনিয়ায় দীর্ঘ দিন আটকে থাকা গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি শুরু না-হওয়ার কারণ হিসেবে এ বার যুক্ত হল শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলও।

এই বন্দর গড়তে আগ্রহী মেকা গোষ্ঠীর শাখা সংস্থা আম্মালাইন্সের দাবি, ৬,০০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্প নিয়ে চলতি মাসেই শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে সওয়াল করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ শিশির অধিকারী। তার ভিত্তিতে অমিতবাবুর সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানিয়ে গত ২১ অক্টোবর চিঠিও দিয়েছিল তারা। কিন্তু এক সপ্তাহ কেটে গেলেও সেই চিঠির জবাব এখনও আসেনি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, জেলায় দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের আঁচ এড়াতেই বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না শিল্পমন্ত্রী। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করলে অমিতবাবু তা ধরেননি। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও।

পূর্ব মেদিনীপুরে দলের দুই শিবিরের বিবাদ প্রকাশ্যে আসায় শাসক দল যে বিব্রত, তা এখন স্পষ্ট। দুর্নীতির পারষ্পরিক অভিযোগ ঘিরে সেখানে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সামনে আসায় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূলের দুই শিবিরের নেতা শিশির অধিকারী ও অখিল গিরিকে সতর্ক করেছে দল। এমনকী প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়িকে দল যে ভাল হিসেবে নেয়নি, তা জানিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই অবস্থায় বিচুনিয়া বন্দরের প্রকল্প প্রস্তাবকে ঘিরে যাতে সেই কোন্দল ফের মাথাচাড়া না-দেয়, সে জন্যই আপাতত তা নাড়াচাড়া করছে না রাজ্য।

আম্মালাইন্সের অভিযোগ, এর ফলে গভীর সমস্যার মুখে পড়ছে তারা। কারণ, একের পর এক সমস্যার জেরে এখনও ঝুলে রয়েছে বন্দর নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে তাদের চুক্তি। আবার সেই চুক্তি না হওয়ায় আটকে রয়েছে প্রকল্পের পুঁজির জোগান। কারণ, চুক্তি না-হলে, পুঁজি জোগাতে রাজি হবে না কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই।

প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন চেয়েছে কেন্দ্রও। এ ধরনের প্রকল্পের জন্য সবচেয়ে জরুরি পরিবেশ-ছাড়পত্র তারা আগেই দিয়েছে। কিন্তু নিয়ম হল, এর পর রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি করে তবেই পরবর্তী পর্যায়ের কাজে এগোতে পারবে নির্মাতা সংস্থা।

জানুয়ারিতে ‘বেঙ্গল লিডস-২০১৫’ শিল্প সম্মেলনে লগ্নির সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে রাজ্যকে তুলে ধরার জন্য শিল্পপতিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন অমিতবাবু। সেই প্রচেষ্টাকে স্বাগতও জানিয়েছে শিল্পমহল। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন, যে রাজ্য বিনিয়োগের খোঁজে এ রকম হন্যে, তারা আম্মালাইন্সের ছ’হাজার কোটির প্রকল্প এমন হেলায় ফেলে রেখেছে কেন? রাজ্যে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়া সংস্থার সমস্যা শুনতে কেন এত গড়িমসি শিল্প দফতরের? উল্লেখ্য, অমিতবাবুকে লেখা চিঠিতে আম্মালাইন্সের কর্তা মেকা পাপা রাও স্পষ্টই জানিয়েছেন যে, শিল্প দফতরের কোনও সাহায্য তাঁরা পাচ্ছেন না। বন্দর নির্মাণের জন্য জায়গা চূড়ান্ত করতে প্রয়োজন জমি জরিপ। সেই জরিপের কাজ শুরু করতে শিল্প দফতরের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিল সংস্থা। কিন্তু তাদের অভিযোগ, এ বিষয়ে অমিতবাবুর দফতর সম্পূর্ণ নীরব। ঠিক যেমন তারা নীরব সংস্থার সঙ্গে রাজ্যের চুক্তি নিয়েও।

শিল্পমহলের প্রশ্ন, যেখানে রাজ্যে বড় বিনিয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানে হাতে থাকা লগ্নি প্রস্তাব নিয়ে প্রশাসন এত উদাসীন কেন? বিশেষত যেখানে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের দশা বেহাল। আর তাই বিচুনিয়ার গভীর সমুদ্র বন্দর কিছুটা হলেও অক্সিজেন জোগাতে পারত শিল্প পরিস্থিতিতে।

লগ্নিতে ভাটা, শিল্পে খরা, বন্দরের অভাব— সব সত্ত্বেও এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের কেন হেলদোল নেই, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।

bichunia sea port gargi guha thakurta tmc group conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy