Advertisement
E-Paper

শনিবারের ফাইনাল পর্যন্ত বাজেট ঘিরে থাকবে টানটান উত্তেজনা

আমাদের দেশে অনেক শুভ অনুষ্ঠানই শুরু হয় মিষ্টি খাইয়ে। বাজেটও ব্যতিক্রম নয়। প্রথা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার হালুয়া তৈরির মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ বারের বাজেট রচনার চূড়ান্ত পর্ব। যা তৈরিতে দফতরের সহকর্মীদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন স্বয়ং অরুণ জেটলি। সেই ‘হালুয়া’ কতটা মিষ্টি হবে, তা সময় হলেই জানা যাবে। তবে সুস্বাদু করে তুলতে তাতে যে এ বার নতুন কিছু উপকরণ মিশ্রিত হতে পারে, তা নিয়ে অনেকেই বেশ আশাবাদী।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪১

আমাদের দেশে অনেক শুভ অনুষ্ঠানই শুরু হয় মিষ্টি খাইয়ে। বাজেটও ব্যতিক্রম নয়। প্রথা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার হালুয়া তৈরির মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ বারের বাজেট রচনার চূড়ান্ত পর্ব। যা তৈরিতে দফতরের সহকর্মীদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন স্বয়ং অরুণ জেটলি। সেই ‘হালুয়া’ কতটা মিষ্টি হবে, তা সময় হলেই জানা যাবে। তবে সুস্বাদু করে তুলতে তাতে যে এ বার নতুন কিছু উপকরণ মিশ্রিত হতে পারে, তা নিয়ে অনেকেই বেশ আশাবাদী।

আশা অনেক। যত দিন না জেটলির ব্রিফকেস থেকে বাজেট বেরোচ্ছে, তত দিনই চলবে তা নিয়ে আগাম চর্চা। প্রকাশ হওয়া মাত্র শুরু হবে চুলচেরা বিশ্লেষণ। হালুয়া তৈরির দিন থেকে শুরু করে বাজেট প্রকাশিত না-হওয়া পর্যন্ত দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা কার্যত বন্দি থাকবেন নর্থ ব্লকে। বাইরে ফোন করাও মানা। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য থাকে চূড়ান্ত ব্যবস্থা। এ বারের কড়াকড়ি হয়তো একটু বেশিই হবে সরকারি দফতর থেকে মূল্যবান তথ্য চুরি যাওয়ার কারণে।

বাজেট কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। প্রতিবারই প্রকাশিত হয় আশার তালিকা (উইশ লিস্ট)। এই তালিকা সব সময়ে বাজেটে বড় আকারে প্রতিফলিত হয় না। আশা বাস্তবায়িত হলে বা আশাতিরিক্ত কিছু মিললে তাৎক্ষণিক ভাবে শেয়ার বাজার চড়ে। মানুষ আশাহত হলে সূচকের পতন অনিবার্য। এ বার বাজেট প্রকাশিত হবে শনিবার। এর আগে তিন বার (১৯৯২, ’৯৩, ’৯৯) সংসদে বাজেট পেশ হয়েছে শনিবার। শুক্রবার সিদ্ধান্ত হয়, শনিবার হলেও বাজেটের দিন শেয়ার বাজার খোলাই থাকবে। অর্থাৎ এ বারও বাজেট ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে সূচকের উত্থান-পতনে।

এ বারের উইশ লিস্ট বেশ লম্বা। এখনও সংযোজন হয়েই চলেছে। সরকারের তরফেও ইঙ্গিত আসছে কিছু ব্যাপারে। এ দেশে বাজেট শুধু অর্থনীতির তাগিদেই রচিত হয় না, থাকে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা। নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেটানোর দায়। সামনে কোনও নির্বাচন থাকলে ভোটারদের খুশি করার প্রয়োজনীয়তা। দিল্লি-ভোটে শোচনীয় পরাজয়ের পরে বাজেটের উপরেই বিজেপিকে কিছুটা নির্ভর করতে হবে জনগণের মন ফিরে পেতে। পাশাপাশি আছে উন্নয়নের তাগিদ। ‘স্বচ্ছ ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-কে সফল করার তাগিদ। সব মিলিয়ে ‘জেটলি-হালুয়া’ কত শতাংশ মানুষকে খুশি করতে পারবে, তা বলা বেশ শক্ত। হাওয়ায় যা উড়ছে তা ধরে এনে নথিবদ্ধ করলে বাজেটে যে-সব সম্ভাবনার ইঙ্গিত মেলে, তা মোটামুটি এই রকম:

প্রতিরক্ষায় বড় বরাদ্দ। বিদেশি লগ্নি।

রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণের জন্য মোটা টাকা বরাদ্দ। ২০১৫-’১৬ অর্থ বছরে ১৫০০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা।

বিদেশি লগ্নি ধরে রাখা এবং তা বাড়ানোর জন্য লগ্নির ব্যাপারে উদার নীতি।

স্বচ্ছ ভারত রূপায়ণে পরিষেবা করের উপর ০.০৫% সেস আরোপ।

বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে ৭০,০০০ কোটি ঘরে তোলা।

স্মার্ট সিটি গড়তে মোটা বরাদ্দ।

রাজীব গাঁধী ইকুইটি প্রকল্পকে সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা।

মিউচুয়াল ফান্ডের ইকুইটি প্রকল্পে লগ্নিতে ৮০সি ধারার বাইরে অতিরিক্ত কর ছাড়ের সুবিধা।

পেনশন প্রকল্পে লগ্নির উপর পৃথক করছাড়।

স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের উপর করছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো।

ভ্রমণ ভাতায় প্রতি বছর করছাড়ের ব্যবস্থা।

৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত করার প্রস্তাব।

গাড়ির উপর উৎপাদনশুল্কে ছাড়।

আশা এবং প্রতিশ্রুতির তালিকা হয়তো বেড়েই চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। শনিবার ফাইনাল। টানটান উত্তেজনা থাকবে অনেকটা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের মতো। এর পর লাভ-ক্ষতির অঙ্ক। পরিস্থিতি অনুযায়ী মনে হচ্ছে, বাজেটে বাজার খুশিই হবে। সূচকও সম্ভবত ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। সাধারণ মানুষ কতটা খুশি হবেন, তা শনিবারই জানা যাবে।

এ দিকে, পাইকারি মূল্যসূচক শূন্যের নীচে নামায় (-০.৩৯%) জোরালো হয়ছে সুদ কমার সম্ভাবনা। ২০০৯-এর জুনের পরে এটিই মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে কম হার। অবশ্য গড়ে দাম এতটা নামলেও ঊর্ধ্বমুখী ছিল খাদ্যপণ্যের দাম। যেমন একই সময়ে ডালের দাম বেড়েছে ১২.৩৪%, চাল ৪%, সব্জি ১৯.৭৪%। জ্বালানি তেলের দর অবশ্য কমেছে ১০.৬৯%। অভিজ্ঞ মহলের আশা, ২০১৫ সালে সুদ কমতে পারে ০.৫%। বাজেট বাজারের পছন্দ হলে, সুদ নিম্নমুখী থাকলে এবং বর্ষা স্বাভাবিক হলে শেয়ার বাজার আগামী এক বছর বেশ চাঙ্গাই থাকবে বলে আশা। অর্থনীতি দ্রুত এগোতে শুরু করলে শক্তি বাড়তে পারে মূলধনী পণ্য শিল্পের (ক্যাপিটাল গুড্স)। যে কারণে সরকারি সংস্থা বিএইচইএল ও বেসরকারি এলঅ্যান্ডটির উপর নজর রাখা যায়।

amitabha guha sarkar budget arun jaitley sensex
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy