Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চোর সন্দেহে গণপিটুনি, আবার মৃত্যু

পুলিশ জানায়, মাস খানেক আগে প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের ভিতরে পিটিয়ে মারা হয় এক যুবককে। তার এক মাস আগে, গত ২৪ মার্চ মোবাইল চোর সন্দেহে কালীঘাটে এক যুবককে পিটিয়ে মারা হয়।

তদন্ত: ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর। বুধবার, মুরারিপুকুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

তদন্ত: ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর। বুধবার, মুরারিপুকুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

প্রগতি ময়দানের পরে এ বার মানিকতলা। এক মাসের ব্যবধানে ফের চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল শহরে।

পুলিশ জানায়, মাস খানেক আগে প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের ভিতরে পিটিয়ে মারা হয় এক যুবককে। তার এক মাস আগে, গত ২৪ মার্চ মোবাইল চোর সন্দেহে কালীঘাটে এক যুবককে পিটিয়ে মারা হয়। বুধবার সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটে। এ দিনের ঘটনাটি ঘটেছে মানিকতলা থানা এলাকার মুরারিপুকুরের হরিশ নিয়োগী রোডে। প্রগতি ময়দানের মতো মানিকতলার ঘটনাতেও বুধবার রাত পর্যন্ত মৃতের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ স্থানীয় কয়েক জনকে আটক করেছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর একটা নাগাদ পুলিশ খবর পায়, ৩৬ নম্বর হরিশ নিয়োগী রোডে হরিপদ দত্ত স্মৃতি শিক্ষা নিকেতনের পাশে কলকাতা পুরসভার পরিত্যক্ত একটি পাম্প হাউসের ভিতরে এক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধরের পরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই পাম্প হাউসটি বর্তমানে ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুলিশ সেখানে দুপুর দেড়টা নাগাদ পৌঁছে দরজার তালা ভেঙে ঢুকে দেখতে পায়, মাঝবয়সি এক ব্যক্তি পড়ে রয়েছেন। পুলিশ তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তির পায়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।

পুলিশের অনুমান, এ দিন সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বছর ৪৫-৫০ বয়সি ওই ব্যক্তিকে মারধর করা হয়। পুলিশ জানায়, উদ্ধার করার সময়ে ওই ব্যক্তির দেহ শক্ত (রাইগার মর্টিস) হয়ে গিয়েছিল। তদন্তকারীদের সন্দেহ, অন্য কোনও এলাকায় চুরির ঘটনায় ওই ব্যক্তিকে ধরে এনে ক্লাবের ভিতরে পেটানো হয়েছে। কারণ পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি এলাকার নন বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়েরা।

মানিকতলা থানার অদূরে সাতসকালে এমন ভাবে এক ব্যক্তিকে যে মারধর করা হচ্ছে, তা পুলিশ আগে জানতে পারেনি কেন? পুলিশের একাংশ জানায়, এ দিন সকাল থেকে ইদের ডিউটি করতে হয়েছে

থানার বেশির ভাগ অফিসারকে। যে এলাকায় গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনও মসজিদ না থাকায় পুলিশও মোতায়েন ছিল না। তবে প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় থানার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, সবটাই খতিয়ে দেখা হবে।

এ দিন এলাকায় গেলে বাসিন্দাদের অধিকাংশই জানান, তাঁরা ঘটনাটি টের পাননি। কারা ওই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত, তা নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্থানীয়েরা। ক্লাবের পিছনের একটি বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, তিনি কাজ থেকে এ দিন দেড়টা নাগাদ ফেরেন। তখন ক্লাবের সামনে ভিড় দেখে বিষয়টি জানতে পারেন।

এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ কলকাতা পুলিশের একটি স্নিফার ডগকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। কুকুরটি ক্লাবে ঢোকার পরে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ক্যানাল ইস্ট রোডের পাশে একটি পুকুরের সামনে গিয়ে থামে। সেখানে থাকা একটি অটো ও একটি সাইকেলের গন্ধ নেয়। দাঁড়িয়ে পড়ে একটি বাড়ির সামনেও। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল ওই ক্লাবে ঢোকে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় দু’টি ক্রিকেট ব্যাট ও কয়েকটি উইকেট। সেগুলি দিয়েই ওই ব্যক্তিকে পেটানো হয়েছিল কি না, তা জানতে তদন্ত করছে পুলিশ।

গত ২৯ এপ্রিল প্রগতি ময়দান থানার মহেশ্বরতলায় একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের ভিতরে এক যুবককে চোর সন্দেহে বেঁধে রেখে দফায় দফায় মারা হয়েছিল। ২৪ মার্চ কালীঘাট থানার ঠিক ঢিল ছোড়া দূরত্বে চোর সন্দেহে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে মারা হয়েছিল চেতলা এলাকার এক যুবককে। চোর এবং ছেলেধরার ‘গুজব’ ছড়িয়ে ফুলবাগান, কসবা ও আনন্দপুরেও পরপর কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য প্রচার চালাতে বলা হয়েছিল থানাগুলিকে। তার পরেও আবার শহরের বুকে এমন ঘটায়

উদ্বিগ্ন লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Lynching Crime Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE