সতর্ক: পরীক্ষার্থীদের বেরোনোর অপেক্ষায় অভিভাবকেরা। বুধবার, বেথুন স্কুলের সামনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে বুধবার হাসিমুখে হল থেকে বেরিয়ে আসছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সম্বিৎ দত্ত। হেয়ার স্কুলের গেটের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা জয়তী দত্ত। পরীক্ষা কেমন হল জিজ্ঞাসা করার আগে জয়তীদেবী হাতে ধরা স্পিরিটের শিশি থেকে কয়েক ফোঁটা স্পিরিট ছেলের হাতে ঢেলে দিয়ে বললেন, ‘‘আগে হাত পরিষ্কার করে নাও। তার পরে অন্য কথা।’’ জয়তীদেবী জানালেন, বহু খুঁজেও স্যানিটাইজ়ার পাননি। তাই হাত পরিষ্কারের জন্য এক বোতল স্পিরিট কিনেছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কলকাতায় এক জন আক্রান্ত হয়েছেন, এই খবর ছড়ানোর পরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনেকেই এখন আগের থেকে বেশি সতর্ক। তাঁদের সকলের একটাই প্রশ্ন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না তো? এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মা বললেন, ‘‘আর তিনটি পরীক্ষা বাকি। ভালয় ভালয় যাতে সেগুলি মেটে, এখন সেই প্রার্থনাই করছি।’’
আর এক পরীক্ষার্থী অন্বেষ বসাকের বাবা অশোক বসাক জানালেন, আগের পরীক্ষাগুলিতে ছেলেকে আনার সময়ে তিনি সঙ্গে স্যানিটাইজ়ার আনেননি। তবে এ দিনের পরীক্ষায় ব্যাগে করে তা নিয়ে এসেছেন। ছেলে পরীক্ষা দিতে ঢোকার সময়ে স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে দিয়েছেন। পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর পরেও তাই করেছেন। মা-বাবাদের পাশাপাশি সতর্ক অনেক পরীক্ষার্থীও। যেমন, এ দিন এক পরীক্ষার্থী দীপ করকে দেখা গেল মাস্ক পরে হল থেকে বেরিয়ে আসতে। দীপ বলে, ‘‘এখনও তিনটে পরীক্ষা বাকি। তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছি না। মাস্ক পরেই পরীক্ষা দিয়েছি। বাকি পরীক্ষাগুলিও মাস্ক পরে দেব।’’
তবে অভিভাবকদের একটা বড় অংশের মতে, করোনার সংক্রমণে এক জন আক্রান্ত হওয়ার পরে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিরও আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। দরকার ছিল সেগুলি আরও বেশি পরিচ্ছন্ন রাখা, সেখানে স্যানিটাইজ়ার মজুত রাখার। কিন্তু অভিযোগ, শহরের কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে স্যানিটাইজ়ার রাখার ব্যবস্থা হয়নি।
তবে স্যানিটাইজ়ার না রাখলেও তাঁরা স্কুলকে যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানালেন কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘পরীক্ষা শুরুর আগে স্কুল পরিষ্কার করা হয়েছে। শৌচাগার থেকে শুরু করে ক্লাসরুম ডেটল-জল দিয়ে ধোয়া হয়েছে। এ ছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক চলাকালীন আমরা এক জন অতিরিক্ত সাফাইকর্মী রেখেছি।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘প্রশ্নপত্র এবং খাতা আসে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে। সেগুলি হাতে নিয়ে পরীক্ষা দেয় ছাত্রছাত্রীরা। পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রতি ঘরে অন্তত একটি করে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার রাখা গেলে খুব ভাল হত। পরীক্ষার্থীরাও মানসিক বল পেত।’’
এ ব্যাপারে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস বলেন, ‘‘করোনা সংক্রান্ত সচেতনতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্দেশিকা দিয়েছেন, স্কুলগুলিকে সেগুলি মানতে বলা হয়েছে। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।’’
উচ্চ মাধ্যমিকের সঙ্গে এখন চলছে সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের পরীক্ষাও। যে সব স্কুলে এই পরীক্ষার সিট পড়েছে, তাদের কয়েকটি অবশ্য হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার রাখার ব্যবস্থা করেছে। যেমন, আইসিএসই পরীক্ষার সিট পড়েছে ক্যালকাটা গার্লস স্কুলে। সেখানকার প্রিন্সিপাল বাসন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্কুলে ঢোকার গেটের সামনে এক কর্মী হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সব পরীক্ষার্থীকে হাত পরিষ্কার করে তবে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy