Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
dharmatala

বেনজির বিক্ষোভে উত্তাল ধর্মতলা

দুপুর দেড়টায় ধর্মতলায় পৌঁছেই অবশ্য বোঝা গিয়েছিল, দিনটা অন্য রকম হতে চলেছে।

বাঁধভাঙা: কালো কাপড়ে ‘গো ব্যাক’ লিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। শনিবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বাঁধভাঙা: কালো কাপড়ে ‘গো ব্যাক’ লিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। শনিবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৮
Share: Save:

এমন প্রতিবাদ কবে দেখেছে কলকাতা?

যেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের পরিচয় ছাড়াই মিছিলে এসেছিলেন শয়ে শয়ে মানুষ। বিশেষ কোনও রঙের আবির নয়, যেখানে উড়েছে শুধু কালো পতাকা আর কালো বেলুন। জাত-ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সাদা দাড়ি, মাথায় টুপি থেকে লাল টিপ, গেরুয়া তাগার সকলেই একসঙ্গে বলেছেন, ‘‘কাগজ দেখাব কাকে? মোদীকে নয়, মহাত্মাকে।’’

সারা দিনের মোদী-বিরোধী এই প্রতিবাদ আন্দোলনই সন্ধ্যায় আমূল বদলে গেল আইন অমান্য কর্মসূচিতে। যেখানে অব্যাহতি পেলেন না খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ধর্মতলায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ঢুকে পড়ে ওই আন্দোলনকারীদের একটাই প্রশ্ন, কলকাতা যাঁকে বয়কট করেছে, সেই মোদীর সঙ্গে কেন দেখা করলেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? তাঁরা এ-ও জানতে চান, যে প্রতিবাদের কথা সব সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা যায়, তা কী করে হঠাৎ পাল্টে গেল ‘সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ’-এ?

আরও পড়ুন: মোদী বিরোধী বিক্ষোভে সড়ক-পাতালে চরম দুর্ভোগ, নাজেহাল শহরবাসী

দুপুর দেড়টায় ধর্মতলায় পৌঁছেই অবশ্য বোঝা গিয়েছিল, দিনটা অন্য রকম হতে চলেছে। পুলিশের ব্যারিকেডের মধ্য দিয়েই দুপুর আড়াইটে নাগাদ রাস্তার দখল নিয়ে নেয় এসইউসিআইয়ের একটি মিছিল। মাঝ রাস্তায় মোদীর কুশপুতুল পোড়ানো হয় মিছিল থেকে। তবে সেই মিছিল কিছুক্ষণ পরে লেনিন সরণি দিয়ে মৌলালির দিকে চলে যেতেই ধর্মতলার দখল নেয় শয়ে শয়ে কালো মাথা। কারও কারও হাতে রাজনৈতিক দলের পতাকা থাকলেও বেশির ভাগই হাজির হয়েছিলেন কালো পতাকা নিয়ে। আর ছিল

জাতীয় পতাকা। মোদী-বিরোধী স্লোগান দিতে দিতেই একদল বসে পড়েন রাস্তার উপরে। তাঁরাই পরে স্প্রে রং দিয়ে রাস্তার উপরে লিখতে শুরু করেন ‘গো ব্যাক মোদী। আপনি যে ভারতের নাগরিক, আগে সেই প্রমাণ দিন।’

এমন সময়েই দু’টি লরি ভিড় ঠেলে ঢোকে। ছাত্র-যুবর দল ‘আজাদি’র স্লোগান দিতে শুরু করে। সদ্য বাঁধা গানের সঙ্গে স্লোগান ওঠে, ‘‘তোমার বুকে নাথুরাম, আমার বুকে ক্ষুদিরাম’। আসেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম-সহ কয়েক জন বাম নেতা। সেলিম বলেন, ‘‘কোনও দল নয়। মানুষের আন্দোলন চলছে। মানুষ হিসেবেই এসেছি।’’ তিনি কালো গ্যাস বেলুন ওড়ান। বেলা যত বাড়ে, ততই বহর বাড়তে থাকে অবস্থান বিক্ষোভের। বিজেপি-র হোর্ডিং রাস্তায় ফেলে তার উপরে লাফাতে শুরু করেন একদল যুবক। যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি বাস ফাঁকা করা শুরু হয়। সেই বাসের উপরে উঠেই স্লোগান দিতে শুরু করেন কয়েক জন। যদিও জোর করে বাস ফাঁকা করানোর কথা তাঁরা মানতে চাননি। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘মানুষই আন্দোলনের জন্য বাস ছেড়ে দিয়েছেন। চালকই বাসের মাথায় ওঠার ব্যবস্থা করেন।’’

সন্ধ্যায় প্রতিবাদস্থল থেকে ফানুস ওড়াতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। বিদ্যুতের তারে ফানুস জড়িয়ে আগুন লেগে যায়। পাশের একটি হোটেলের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। মাইকে আগুন নেভানোর জন্য পুলিশের কাছে আবেদন জানান অবস্থানকারীরা। তারের নীচ থেকে জমায়েত সরিয়ে সেখানে জলকামান ঢোকার ব্যবস্থা করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ এবং যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মা। আগুন আয়ত্তে আনার পরে মাইকে টিপ্পনী ভেসে আসে, ‘‘এই প্রথম পুলিশের জলকামান কোনও ভাল কাজে এল!’’

শুক্রবার থেকেই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে চলছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অবস্থান বিক্ষোভ। মোদীর সঙ্গে দেখা করে এ দিন সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সেখানে যেতেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে বক্তৃতা করার পরেই রাতের দিকে ধর্মতলার বিক্ষোভকারীদের বড় অংশ ওই সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে স্লোগান ওঠে, ‘মোদী-মমতা দূর হটো’। তখন মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দিল্লি গিয়ে করো।’’ পরে বিক্ষোভকারীরা নিজেরা কথা বলে সভাস্থল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরে তাঁরা যান ওয়াই

চ্যানেলের দিকে। তবে মুখ্যমন্ত্রী রাত পর্যন্ত রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সভাস্থলেই ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Dharmatala Kolkata CAA NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE