Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
College Admission

ভর্তিতে কি ফের দাদার দাপট? নাম বিভ্রাটে প্রশ্ন

সানি লিওনির নামটি পরিচিত বলে চর্চা হচ্ছে, তালিকায় আরও ভুয়ো নাম যে নেই, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ০৩:২৩
Share: Save:

একাধিক কলেজের মেধা তালিকায় ভুয়ো নাম ঘিরে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, চলতি বছরের ভর্তি প্রক্রিয়া কি আদৌ দুর্নীতি-মুক্ত হচ্ছে? মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হতে চাওয়া পড়ুয়াদের অভিভাবকদের বড় অংশেরই দাবি, “গত কয়েক বছরও মেধা তালিকায় ভুয়ো নাম ঢুকিয়ে টাকা কামানোর অভিযোগ উঠেছিল ছাত্রনেতাদের একটি অংশের বিরুদ্ধে। চলতি বছরে একাধিক মেধা তালিকায় অভিনেত্রী সানি লিওনির নাম সেই দুর্নীতির ইঙ্গিত নয়তো!” তাঁদের প্রশ্ন, সানি লিওনির নামটি পরিচিত বলে চর্চা হচ্ছে, তালিকায় আরও ভুয়ো নাম যে নেই, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?

আশুতোষ কলেজের ইংরেজি বিভাগের মেধা তালিকায় সানি লিওনির নাম প্রকাশ্যে আসার পরদিন ওই নাম দেখা গিয়েছে বজবজের একটি কলেজের মেধা তালিকাতেও। কলেজের বদনাম করতে কেউ এ কাজ করেছেন জানিয়ে লালবাজারের সাইবার শাখায় অভিযোগ করা হয়েছে আশুতোষ কলেজের তরফে। যদিও ওই কলেজেরই কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বিভাগের তালিকায় ২-২৮ নম্বরে নির্দিষ্ট নামের পরিবর্তে অবিন্যস্ত কিছু ইংরেজি শব্দ থাকার অভিযোগ উঠেছে। এর ব্যাখ্যা অবশ্য এ দিনও ওই কলেজের তরফে মেলেনি। আশুতোষ কলেজের উপাধ্যক্ষ অপূর্ব রায় এ দিনও ফোন বা মেসেজের উত্তর দেননি। তবে ওই কলেজের এক আধিকারিকের যুক্তি, “যে সংস্থাকে দিয়ে মেধা তালিকা তৈরি করানো হয়েছে তারাই ভুল করেছে।”

যদিও গত বছরই আশুতোষ কলেজে মেয়েকে ভর্তি করাতে যাওয়া বাগুইআটির বাসিন্দা এক ব্যক্তি দাবি করলেন, ওখানে এমন ভুয়ো নাম প্রতিবারই ঢোকানো হয়। তাঁর অভিযোগ, “মেয়ে সাংবাদিকতা পড়তে চেয়েছিল। ওখানকার এক ছাত্রনেতা জানান, সাংবাদিকতায় সরাসরি ভর্তি করানো শক্ত, আসনের দামও বেশি। বরং ৪০ হাজার টাকা দিলে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বা অন্য বিষয়ে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে রাখবে ওরা। পরে আসন ফাঁকা হলে অদল-বদল করিয়ে দেবে।”

সরকারি পরামর্শ

• অনলাইন ছাড়া কোনও বিকল্প পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়

• মেধা তালিকায় নাম থাকলে কলেজে ফোন করারও দরকার নেই, ব্যাঙ্কে টাকা জমা করে সরাসরি ভর্তি হোন

• নির্দিষ্ট নম্বর না থাকলে কলেজের কাউকে ধরে এগোতে যাবেন না, এতে প্রতারিত হলে দায় নিজের

• কেউ ভর্তির প্রলোভন দেখালে পুলিশে জানান

• ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ থাকলে কলেজে ইমেল করুন

কী ভাবে? উত্তর কলকাতার এক কলেজের ছাত্রনেতা জানান, যে কোনও বিভাগের মোট আসনের ২০ শতাংশ ভুয়ো নাম দিয়ে ভর্তি করিয়ে রাখেন তাঁরাই। এমন ভাবে ফর্ম পূরণ করানো হয় যাতে কলেজ তিন-চারটি মেধা তালিকা প্রকাশ করার পরেও তাঁদের দেওয়া নাম বাদ না পড়ে। ওই ছাত্রনেতার কথায়, “কলেজের ভিতরেও কথা বলে রাখতে হয়। যে সংস্থা মেধা তালিকা বানায়, তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ থাকে। শেষ তালিকা প্রকাশের পরে ভুয়ো নামের আসন বিক্রি হয় ৫০, ৬০, ৭০ হাজার টাকায়। ভুয়ো নাম দিয়ে ফর্ম পূরণের খরচও তাতেই উঠে আসে।” লেক এলাকার একটি কলেজের অন্য এক ‘ভর্তি দাদা’র দাবি, “ভুয়ো নামের আসন এমনিই ফাঁকা থেকে যায়। কিন্তু কোনও কলেজই আসন ফাঁকা রেখে বছর শুরু করতে চায় না। তখন আমরাই সমাধান করে দিই।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্পেক্টর অব কলেজেস দেবাশিস বিশ্বাস যদিও বললেন, “মেধা তালিকায় নামের গরমিল নিয়ে কী হয়েছে, এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এতটা সহজে সবটা করা সম্ভব বলে মনে হয় না। এখন ভেরিফিকেশনও তুলে দেওয়া হয়েছে। একেবারে শেষ পর্যন্ত মেধা তালিকায় নাম থাকা পড়ুয়ারাই ভর্তির সুযোগ পাবেন।” শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোনও কলেজের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে কিছু বলব না। সবটাই দুর্নীতিমুক্ত ভাবে অনলাইনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া অভিভাবক এবং পড়ুয়ারা সতর্ক হয়ে ভর্তির আবেদন করলেই সমস্যা হয় না। বহু অভিভাবক, কম নম্বর থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সন্তান ভর্তি হয়ে যাবেন ধরে নেন। সেটাই মুশকিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College Admission Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE