Advertisement
০১ মে ২০২৪

সাড়ে ৬ দিতে বলেছিল

দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি হাইস্কুল থেকে আমি, সুমন ঘোষ, তমাল বণিক (নাম পরিবর্তিত) এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। তিন জনই  কলকাতার কলেজে বিএ জেনারেলের ফর্ম ভর্তি করেছিলাম। নামও উঠেছিল মেধা তালিকায়। বুধবার ভর্তি হতে কলকাতায় আসি।ওই কলেজের কয়েক জন দাদা বললেন, ‘‘ভর্তি হতে সাড়ে আট হাজার টাকা দিতে হবে।’’ বললাম, ‘‘পারব না।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রবি সামন্ত (নাম পরিবর্তিত)
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০৩:৪৭
Share: Save:

স্বপ্ন ছিল, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতার কলেজে পড়ব। হাজার খাটুনির মধ্যেও তাই পড়াটা চালিয়ে গিয়েছি। কিন্তু বুধবার যখন কলেজ ইউনিয়নের নেতা পরিচয় নিয়ে কয়েক জন দাদা বললেন, বিএ জেনারেলে ভর্তি হতে সাড়ে ছ’হাজার টাকা করে দিতে হবে, খুব ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল, এত কষ্ট করলাম, শেষে পড়াটাই ছেড়ে দিতে হবে। এ শহর শুধু টাকাটাই চেনে!

দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি হাইস্কুল থেকে আমি, সুমন ঘোষ, তমাল বণিক (নাম পরিবর্তিত) এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। তিন জনই কলকাতার কলেজে বিএ জেনারেলের ফর্ম ভর্তি করেছিলাম। নামও উঠেছিল মেধা তালিকায়। বুধবার ভর্তি হতে কলকাতায় আসি।

তবে ওই কলেজের কয়েক জন দাদা বললেন, ‘‘ভর্তি হতে সাড়ে আট হাজার টাকা দিতে হবে।’’ বললাম, ‘‘পারব না।’’ তখন ওঁরা বললেন, ‘‘সাড়ে ছ’হাজার টাকার এক পয়সা কম নয়।’’ মনে হয়েছিল, অধ্যক্ষকে বলি। কিন্তু ওঁর ঘর পর্যন্ত কেউ যেতেই দিল না।

আমাদের কারও অত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমার বাবা মারা গিয়েছেন। মা আর আমার সঙ্গে থাকেন না। ঠাকুরমাই আমার সব। আমি রাতে ভেড়িতে কাজ করি। তাতেই আমাদের দু’জনের চলে যায়। ঠাকুরমাও চায়, আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাই। তবে অত টাকা দিয়ে আর প়ড়তে পারতাম না।

সুমনদের অবস্থাও খুব খারাপ। ওর বাবা কাজ করতে পারেন না। দাদা সাফাইকর্মী। ওর দাদা বলেছেন, ভর্তির সাড়ে তিন হাজার টাকা ছাড়া আর কিছু দিতে পারবেন না। আমিও চার হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছি। তমালের বাবাও সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়েছেন। ওঁদের চায়ের দোকান। আর দিতে পারেননি।

বুধবার তাই বুঝতেই পারছিলাম না কী করব। ভেবেছিলাম বৃহস্পতিবার আবার কলেজে যাব— যদি অন্য কোনও দাদাকে ধরে টাকা না দিয়ে ভর্তি হওয়া যায়। তবে এক বারের জন্যও ফোন বিক্রি করে টাকার ব্যবস্থা করার কথা মনে আসেনি। এ কাজ করতেই পারব না।

অবশেষে ভর্তি হয়েছি। ওই কলেজের কয়েক জন দাদা এদিন ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। অধ্যক্ষও সাহায্য করেছেন। এই সাহায্য না পেলে পড়া ছেড়েই দিতে হতো। মনে করতাম, টাকা নেই বলে তো অনেক কিছুই করা হয়নি। পড়াটাও হল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bribe College Admission Students Students' Union
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE