Advertisement
E-Paper

আধুনিকতায় মিশে যায় লৌকিক ঐতিহ্য

সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলক প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষবিদেশের শিল্পীরা এই মুহূর্তে কেমন কাজ করছেন, কলকাতায় বসে আজকাল তা দেখার সুযো গ খুব বেশি ঘটে না। চিত্রকলার ভাষা আন্তর্জাতিক। তবু প্রতিটি জাতির নিজস্ব ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সন্তর্পণে কাজ করে যায় তার সাম্প্রতিকের প্রকাশের মধ্যেও।

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
শিল্পী: মানস রায়

শিল্পী: মানস রায়

বিদেশের শিল্পীরা এই মুহূর্তে কেমন কাজ করছেন, কলকাতায় বসে আজকাল তা দেখার সুযো গ খুব বেশি ঘটে না। চিত্রকলার ভাষা আন্তর্জাতিক। তবু প্রতিটি জাতির নিজস্ব ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সন্তর্পণে কাজ করে যায় তার সাম্প্রতিকের প্রকাশের মধ্যেও। বিভিন্ন ঐতিহ্যের সংশ্লেষ ঘটে সেই ভিত্তির উপরেই। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চিত্রের আধুনিকতাবাদী প্রবাহে বিভিন্ন দেশের ছবির আঙ্গিকগত বৈচিত্র যেন ক্রমশ কমে আসছে। তবু তার মধ্যেই স্বাতন্ত্র্যের একটা জায়গা এখনও খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলিই অনুধাবনের সুযোগ হল সাম্প্রতিক একটি প্রদর্শনীতে। রয়মানস্ আর্ট স্টুডিও-র উদ্যোগে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল ‘আবিষ্কার’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। পৃথিবীর ন’টি দেশের ৬০-জনেরও বেশি শিল্পীর কাজ দেখানো হল সেখানে। ভ্যান গঘ-এর ১২৫-তম মৃত্যুবার্ষিকী এ বছর। সে উপলক্ষে প্রদর্শনীটি তাঁর স্মৃতিতে সমর্পিত হয়েছে।

এত দিন ধরে এই কর্মপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন একজন শিল্পী। তাঁর নাম মানস রায়। কলকাতা, লন্ডন ও হল্যান্ড — এই তিনটি দেশকে ভিত্তি করে তিনি এই শিল্প-সংগঠনমূলক কাজ করছেন দীর্ঘ দিন থেকে। এই প্রদর্শনীতে তাঁরও অনেক ছবি ছিল। তিনি একই সঙ্গে নানা রকম আঙ্গিকে কাজ করতে পারেন। দেশ ও বিদেশকে যেমন মেলান, আবার আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশের আঙ্গিক নিয়েও নিবিষ্ট চর্চা করেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় থাকে। এই লেখার সঙ্গে আমরা দেখছি যে-ছবিটি, সেখানে ব্যান্ড বাজাচ্ছে দ্বিমাত্রিকভাবে সংস্থাপিত যে সবুজ ও কৃষ্ণাভ মুখগুলি, পাশ্চাত্য অভিব্যক্তিবাদের সঙ্গে দেশীয় লৌকিকের সূক্ষ্ম সমন্বয় তাদের মধ্যে বিশেষ নান্দনিক অভিনবত্ব এনেছে। ব্যান্ডবাদন বিষয়ক অন্য একটি ছবিতে তিনি ভ্যান গঘের সঙ্গে মার্ক শাগাল ও রুয়ো-র আঙ্গিককে মিলিয়েছেন কল্পনাদীপ্তভাবে। আবার শিশু কোলে জননীর একটি রূপায়ণে জননীর দীর্ঘায়ত মুখমণ্ডলে বত্তিচেলি-সুলভ অলৌকিক কমনীয়তা ফুটিয়ে তোলেন তিনি। লৌকিক ও অলৌকিকের এই মেলবন্ধনে তিনি কিন্তু সব সময়ই ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিকতায় অভিষিক্ত করতে চান।

প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পী ছিলেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেন চৌধুরী, সমীর আইচ, দেবব্রত চক্রবর্তী, আদিত্য বসাক প্রমুখ। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আমাদের প্রত্যক্ষভাবে বুঝতে সাহায্য করে আধুনিকতার মধ্যে কীভাবে দেশীয় লৌকিক ঐতিহ্য আত্তীকৃত হয়। অন্য শিল্পীরা পাশ্চাত্য আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকের ভিত্তিতে এই সময়ের সারাৎসার অনুধাবন করতে চেয়েছেন।

বিদেশের শিল্পীদের কাজে দুটি ধারা প্রবহমান। আমাদের দেশেও এরই প্রতিফলন রয়েছে। যে ধারাটি অতি-আধুনিক বা ‘আভা-গার্দ’ সেখানে ‘অলটারনেটিভ আর্ট’-এর চর্চাই প্রধান্য পায়। অন্য ধারায় আধুনিক ও আধুনিকতার রূপরীতি নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। এই প্রদর্শনীতে যে সব শিল্পীর কাজ দেখি, তাতে দ্বিতীয় ধারারই প্রতিফলন রয়েছে। অস্ট্রিয়ার তিনজন শিল্পী রয়েছেন এই প্রদর্শনীতে। জন উইজার স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকে এঁকেছেন একটি গাছের রিক্ত শাখায় একটি রঙিন পাখি বসে থাকার দৃশ্য। ছবির ভাষায় কোনও দেশীয় স্বাতন্ত্র্য নেই। রুডল্ফ শের-এর ছবিটিতে কিন্তু পাশ্চাত্য মননের প্রাধান্য। একটি মাত্র রং, সাদা-কালো, অন্ধকারের প্রাধান্যে আঁকা ছবিটিতে এক বলিষ্ঠ যুবক হাঁটুতে কপাল ঠেকিয়ে বসে আছে। তার এই দুঃখের অভিব্যক্তি যে মনস্তাত্ত্বিক সংকট, তা একান্তই পাশ্চাত্য। অস্ট্রিয়া-র তৃতীয় শিল্পী গুডরান শাটজ্ল। তাঁর ছবিটিতে বিমূর্ত বর্ণিল প্রেক্ষাপটে দুটি হাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে স্তব্ধ হয়ে আছে। মাঝখানে রয়েছে নিথর শূন্যতা। জার্মানির ন’জন শিল্পীর মধ্যে দুজন কিরস্তিনা সিবোল্ড ও পেত্রা দিত্তার বিমূর্ত ছবি এঁকেছেন। প্রথম জনের ছবি রৈখিক। দ্বিতীয় জনের বর্ণিল অলঙ্করণধর্মী।

বিমূর্ততার এই ধরনটি পাশ্চাত্য থেকে উদ্ভূত হয়ে আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে। হেইডি প্লাঙ্ক-এর নিসর্গ রচনাটিতে স্বাভাবিকতার মধ্যে প্রতিচ্ছায়াবাদী মনন কাজ করছে। এই আঙ্গিকও আজ আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত।

folk tradition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy