Advertisement
E-Paper

বাঙালির দেশজ অস্ত্রবিদ্যা

উনিশ শতকে বাঙালি তার শরীর সম্পর্কে নানা কারণে সচেতন হয়ে উঠেছিল। ‘মেয়েলি হিন্দু’ বলে সাহেবরা দেশজ পুরুষদের নিয়ে মশকরা করবেন এ অসহ্য। সুতরাং প্রমাণ দাখিলের দায় বর্তাল। দায় গ্রহণ করেছিলেন বঙ্কিম।

বিশ্বজিৎ রায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০০:০০

উনিশ শতকে বাঙালি তার শরীর সম্পর্কে নানা কারণে সচেতন হয়ে উঠেছিল। ‘মেয়েলি হিন্দু’ বলে সাহেবরা দেশজ পুরুষদের নিয়ে মশকরা করবেন এ অসহ্য। সুতরাং প্রমাণ দাখিলের দায় বর্তাল। দায় গ্রহণ করেছিলেন বঙ্কিম। কৃষ্ণচরিত্র, রাজসিংহ রচয়িতা কেবল পুরুষদেরই বীর রূপে চিত্রিত করেননি, অনুশীলন করলে প্রফুল্লের মতো মেয়েরাও যে অস্ত্রবিশারদ দেবী চৌধুরাণী হয়ে উঠতে পারেন তাও লিখেছিলেন। বিবেকানন্দও সুগঠিত শরীরের পক্ষপাতী, উদ্যমহীন অলস বাঙালি গীতা পাঠ না করে বরং আগে ফুটবল খেলুক এই নাকি বিবেকানন্দীয় দাওয়াই। তবে বঙ্কিম-বিবেকানন্দ কেউই শরীর-বুদ্ধি-মনকে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যচর্চা ও অস্ত্রচর্চায় কাজে লাগাননি। বিবেকানন্দের স্নেহধন্যা সরলাদেবীর অনুপ্রেরণায় ১৯০২-০৩ নাগাদ পুলিন বিহারী দাশ ঢাকার টিকাটুলির জঙ্গলঘেরা মাঠে একটি আখড়া স্থাপন করে লাঠিখেলা শিখতে শুরু করলেন। বিশ শতকের বিপ্লবী স্বাদেশিকতার সঙ্গে দেহপ্রকর্ষ-চর্চার যোগ তৈরি হল। পুলিন বিহারী বিজ্ঞানের ছাত্র— স্বাদেশিক আবেগ কিংবা প্রাগাধুনিক পর্বের দেশজ অস্ত্র ও স্বাস্থ্যচর্চার কথাকাহিনি যে অস্ত্রবিদ্যাকে মজবুত করবে না এ বোধ তাঁর ছিল। তাই তিনি বঙ্কিম-বিবেকানন্দ নির্ধারিত আবেগের ইতিবৃত্তের বাইরে পথে নামেন। আব্বাস সর্দার, মার্তাজা, প্রমথ মিত্র তাঁর ‘নামকরা’ শিক্ষক। এ ছাড়া ছিলেন নিম্নবর্গীয় মানুষজন, শরীরই তাঁদের কাছে পরম অস্ত্র। পুলিন বিহারী এঁদের কাছেও বিদ্যাশিক্ষা করেছেন। সেই বিদ্যা নিজের স্বাস্থ্য ও অস্ত্রসংক্রান্ত নৈতিকতায় নতুন করে ব্যবহার করেছেন। তাঁর মতে কুসংসর্গে পড়ে যে ছাত্ররা চরিত্র বল হারায় তারা স্বাস্থ্য-অস্ত্রচর্চা করলে বিপন্ন হত না। তবে ‘বিনয়, ঐকান্তিকতা’ চাই। নিজের জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় রেখাঙ্কন ও ফটোগ্রাফ সহ আট কিস্তিতে প্রকাশ করেছিলেন অসি, ছোট লাঠি, যুযুৎসু শিক্ষা বিষয়ক পরস্পর-সম্পর্কিত নিবন্ধ। তবে জানিয়েছিলেন, ‘শুধু পুস্তক পাঠ করিয়া লাঠিখেলা’ শেখা যায় না। সঙ্গী জুটিয়ে অভ্যেস করতে হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা বিভাগ অনুশীলন সমিতি খ্যাত, জেলখাটা বিপ্লবী ও পরে বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে স্বেচ্ছায় সম্পর্কচ্যুত পুলিন বিহারীর অস্ত্রচর্চা সম্পর্কিত লেখাগুলি সযত্নে সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছেন (অস্ত্রচর্চা/ পুলিন বিহারী দাশ রচনাসংগ্রহ। সম্পা: দীপ্তনীল রায় ও নিখিলেশ ভট্টাচার্য, ৭০০.০০) রাষ্ট্রীয় যোগচর্চিত ও পুঁজিনিষ্ঠ জিমবলিষ্ঠ পাঠকরা পড়ুন, ভাবুন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy