Advertisement
E-Paper

সেই বাদল মেঘের মানুষটি

লি ঙ্কন স্ট্রিটের এক বিদ্যুৎহীন বস্তিতে হ্যারিকেনের আলোয় অবিস্মরণীয় সব ছোটগল্প লিখে চলেছেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র।... মধ্যরাতে আলকাপ গাইছেন সাগরময় ঘোষ।... হাসপাতালের শবাগারে একটির পর একটি ড্রয়ার খুলে খোঁজা হচ্ছে শিবরামের মৃতদেহ। অবশেষে মিলল তাঁর প্রসন্ন মুখ!

চিন্ময় গুহ

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
বাদল বসু—১৯৩৭-২০১৫

বাদল বসু—১৯৩৭-২০১৫

লি ঙ্কন স্ট্রিটের এক বিদ্যুৎহীন বস্তিতে হ্যারিকেনের আলোয় অবিস্মরণীয় সব ছোটগল্প লিখে চলেছেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র।... মধ্যরাতে আলকাপ গাইছেন সাগরময় ঘোষ।... হাসপাতালের শবাগারে একটির পর একটি ড্রয়ার খুলে খোঁজা হচ্ছে শিবরামের মৃতদেহ। অবশেষে মিলল তাঁর প্রসন্ন মুখ! এ দিকে ভূতের গল্পের আড্ডা জমেছে সুকুমার সেনের বাড়ি।... দাঁত তোলার ভয়ে আতঙ্কিত বিমল কর একটি চলন্ত বাসে উঠে যাচ্ছেন। যেন এক অভিনব গ্যালারিতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে এই সব ছবি দেখছি আমরা।

প্রকাশনা-জগতের সেই মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বরের মহীরুহ-প্রতিম মানুষটি নেই। মল্লিকা সেনগুপ্তের কবিতার ভাষায়: ‘আমাদের সেই বাদল মেঘের মানুষটি’ (পৃ ৫৬৮)। শাদা ধুতি শার্ট পরিহিত ওই খাঁটি বাঙালি রেখে গিয়েছেন এক রূপকথার মতো জীবনের ইতিবৃত্ত। সেই সঙ্গে আনন্দ পাবলিশার্সকে ঘিরে বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে সাহিত্য ও প্রকাশনা জগতের বহুকৌণিক ও বহুস্তর এক ইতিহাস। এ কালের সাহিত্য ও প্রকাশনা জগৎকে বুঝতে হলে এমন আকরগ্রন্থ আর আছে বলে মনে হয় না। ঝাড়গ্রামের দহিজুড়ির এক বালক হয়ে উঠছেন সমকালীন সংস্কৃতিচর্চার অন্দরমহলের ভাষ্যকার।

লেখক ও প্রকাশকদের কাছ থেকে তিনি যে সম্মান ও ভালবাসা পেয়েছেন, বিশিষ্ট সাহিত্যিকরাও অনেকে তা পাননি। সকলেই জানেন তাঁর বাঁধা বুলি ছিল, তিনি ‘অশিক্ষিত’। সেটা কি ‘শিক্ষিত’দের প্রতি এক বিনম্র শ্লেষ? সন্দেহ নেই, এই ‘অশিক্ষিত’-র বর্ম তাঁকে শিল্পী-সাহিত্যিকদের জীবনের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছিল, যা প্রকাশনার ইতিহাসে বিরল। এক দিকে এই বই এক স্মৃতিকথা, অন্য দিকে সাহিত্যিক অন্তর্দৃষ্টির এক বিস্ময়কর নমুনা, যেখানে ধান থেকে চালকে গভীর দৃঢ়তায় পৃথক করা হয়েছে। যা কিছু অমানবিক ও কপট তাকে প্রত্যাখ্যান করতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করেননি। এই দৃঢ়তা বইটিকে দিয়েছে তার মেরুদণ্ড।

পিওন থেকে প্রকাশক। বাদল বসু। আনন্দ, ৬০০.০০

স্মৃতিকথা তো সময়ের দলিল। তাকে শরীর দিয়েছে চিঠি। যে হাজার খানেক চিঠির সংগ্রহ তিনি সযত্নে জমিয়ে রেখেছিলেন দীর্ঘকাল ধরে। সত্যজিৎ রায়, রবিশংকর, অমর্ত্য সেন থেকে শুরু করে মুদ্রণের নানা খুঁটিনাটি নির্দেশ সহযোগে নীরদচন্দ্র চৌধুরীর অত্যাশ্চর্য চিঠি, যা এই বইয়ের সম্পদ!

একটি শব্দে বললে, অকপট। ইতিপূর্বে ‘দেশ’ পত্রিকায় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা নিয়ে কিংবা সত্যজিতের মৃত্যুর পর তাঁর লেখা পড়েছি আমরা, অথবা সবিতেন্দ্রনাথ রায়ের কলেজ স্ট্রিটে সত্তর বছর গ্রন্থের সমালোচনা। কিংবা ‘কাহ্ন’ পত্রিকায় ছোট ছোট স্মৃতিলেখ। কিন্তু এ বারের এই অবিশ্রান্ত বাদলধারার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। আনন্দবাজারে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একটি কলাম লিখতেন, ‘যা দেখি, যা শুনি, একা একা কথা বলি’। সেটা বাদল বসুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমরা যেন লুঙ্গি পরা মানুষটির সঙ্গে একটা খোলামেলা ঘরোয়া আড্ডায় বসে। সুনীলের ভাষায়, ‘মেদিনীপুরের ছেলে বাদল। প্যারিসই হোক বা লন্ডনই হোক, লুঙ্গিটা না পরলে ঠিক জুত হয় না।’ বাদলবাবুর রম্য বৈঠকি শৈলির একটি নমুনা লক্ষ করুন: ‘ওহ্‌, আর একটা কথা বলা হয়নি।’ (পৃ ১৬)

মানুষটি যেমন যুক্তিবাদী ছিলেন, তাঁর চিন্তাও ততটাই। প্রকাশকের ভূমিকা তাঁর কাছে স্পষ্ট: সেটা ‘হাইফেনের মতো’। সব ভাবতে হয় তাঁকে। কোথাও লিখেছেন, প্রকাশক একটি ‘পদ্মফুলের মৃণাল’ (পৃ ২)। সেই সীমারেখা সারা জীবন বজায় রেখেছেন। জানতেন, কাটতি দিয়ে লেখকের বিচার হয় না। সত্যজিৎ ও শরদিন্দুর মৃত্যুর পর বই বিক্রি তিন গুণ বেড়ে যায়, কিন্তু সমরেশ বসুর ক্ষেত্রে উলটোটা।

শৈশবের দহিজুড়ির বর্ণনা অনুপম, কিন্তু তাতে অজানা ভয়ংকরের ছাপ আছে। কলকাতায় এসে মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে বি এ পাশ করার পর নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা নির্দ্বিধায় বলেছেন তিনি। ‘অ্যাম্বিশন শব্দটার সঙ্গে সেই বয়সে বিশেষ পরিচিত ছিলাম না।’ ট্রাম কন্ডাক্টরের চাকরি চাইছিলেন, অথবা সিইএসসি-র মিটার রিডারের। বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। এক সময় ‘কাঞ্চন ঘি’ লোকের কাছে পৌঁছে দিতেন। গৌরাঙ্গ প্রেস ও আনন্দ পাবলিশার্সে কাজ করার আগে জগদেও নামে এক অবাঙালি রূপশ্রী প্রেসে শিখিয়েছিলেন প্রেসের কাজ, লাইনোটাইপ মেশিনে কোথায় তেল দিতে হয়, কী ভাবে পরিষ্কার করতে হয়, কী করে টাইপ বসায়, স্পেস কী, মেশিন কী করে কাজ করে। এই সব শব্দ ‘ধূসর ইতিহাস’ হয়ে গিয়েছে। ব্যাটারি বসানো হর্ন দেওয়া সাইকেলে ‘বোম্বাই মেল’ বাদল বসু সর্বত্র প্রুফ পৌঁছে দিতেন। সাইকেল চুরি যাওয়ার ঘটনা বলতে বলতে তাঁর ডি সিকার ‘বাইসিকেল থিভ্‌স্‌’-এর কথা মনে পড়েছে।

চলমান স্কুটারে চুম্বন করা জুটিকে তাড়া করা অথবা ট্রেনে শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে লাঞ্ছনা করা যুবককে উত্তমমধ্যম দেওয়া বাদল বসুর রচনার জীবনস্পন্দনকে তুলে ধরে। ‘আমি নিজে প্রেম না করলেও প্রেম নিয়ে বিস্তর অভিযান করেছি...। আমাদের একটি প্রিয় অভিযান ছিল গড়ের মাঠে প্রেম দেখতে যাওয়া। ওখানে গেলেই দেখতাম, সব জোড়ায় জোড়ায় বসে। সেই দৃশ্য আমাদের চোখ সার্থক করত।’

নীরদ চৌধুরী সম্পর্কিত বিস্ময়কর তথ্যচিত্রপ্রতিম অধ্যায়টির মতো শক্তি চট্টোপাধ্যায় বিষয়ক অধ্যায়টি (পৃ ৭৪) অবশ্যপাঠ্য। পদ্যসংগ্রহ-তে একই কবিতার পুনরাবৃত্তি থেকে শুরু করে শক্তির নিজের বই খুঁজে না পাওয়ার ইতিবৃত্ত, সমীর সেনগুপ্তের শক্তির ন’টি কাব্যগ্রন্থ থেকে একশোটি কবিতা পুনরাবৃত্তির কারণে বাদ দেওয়া, এমনকী স্ত্রী মীনাক্ষীর সম্পাদনাতেও প্রচ্ছদে নামের বানানভেদ, প্রথম স্তবকে প্রথম বানান এবং ঊনশেষ চরণের পার্থক্য... সবই এই দায়িত্বহীনতার যুগে বিশেষ ভাবে শিক্ষণীয়।

মিত্র ও ঘোষের ‘হাউস অফ কমন্‌স্‌’ আর এম সি সরকারের ‘হাউস অফ লর্ডস’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাদল বসু লিখছেন, ‘একটি আড্ডায় গেলে অন্য আড্ডায় যাওয়া যাবে না, এরকম কোনও ব্যাপার সেই সময়ের লেখকদের মধ্যে একেবারেই ছিল না।’ কারও কারও সম্পর্কে অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ পেলেও (যেমন, জয় গোস্বামী) মানতেই হবে যে কোনও রকমের অসূয়া সেখানে ছিল না, যা ছিল তা স্নেহ ও ভালবাসা। তসলিমা নাসরিনের রচনার ঐতিহাসিক সাহিত্যমূল্য নিয়ে তাঁর মন্তব্যও নিরপেক্ষ মূল্যায়নে ভরা।

কবি, কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মূল্যায়নে যাননি, কিন্তু ব্যক্তিগত কাহিনি অনেক আছে। জানাতে দ্বিধা করেননি, ‘ওঁর মতো বড় মনের বন্ধুবৎসল মানুষ কমই হয়।’ আমৃত্যু তিনি এই মত বদলাননি। সত্যজিৎ রায়ের বাড়ির অন্দরমহলে যে কতিপয় ব্যক্তি প্রবেশ করতে পেরেছেন, তাঁদের একজন বাদল বসু। বিজয়া রায়ের সহৃদয়তার নানা বিবরণ ছাড়াও সত্যজিৎ সম্পর্কেও পাঠক অনেক তথ্য পাবেন। যেমন, শ্যাম বেনেগালের জন্য সত্যজিতের চিত্রনাট্যের খাতা বোঝানোর জন্য কে যোগ্যতম ব্যক্তি জিগ্যেস করায় সত্যজিৎ এক মুহূর্ত চিন্তা না করে উত্তর দেন, ‘পূর্ণেন্দু পত্রী’। তাঁর প্রিয় শিল্পী যে গণেশ পাইন তাও আমরা জানতে পারি। জানতে পারি, বাইপাসের সময় সত্যজিতের অর্থসংকটের কথা। বাদলবাবু লিখেছেন, ‘নিজের চিত্রনাট্যগুলি আলাদা আলাদা ভাবে বই করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। বিদেশ থেকে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকদের বই নিয়ে এসেছিলেন।’

পোর্ট্রেট গ্যালারির কথা প্রথমেই বলেছি। যেন ছোট ছোট চলচ্চিত্র। বিয়ের লগ্ন ফসকে যাচ্ছে বলে হিন্দি ফিল্মের নায়কের মতো নিখিল সরকারকে গাড়ি করে নিয়ে উল্কার বেগে ছুটে চলেছেন বাদল বসু। আনন্দবাজারের এক বেয়ারা এক হাতে সকলের মুড়ির ঠোঙা, অন্য হাতে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ঠোঙা নিয়ে তাঁকে দিতে দিতে বলত, ‘ছোঁয়া লাগেনি, ছোঁয়া লাগেনি’। ‘পাতাল থেকে আলাপ’-এর বিজ্ঞাপনে ‘নায়ক-নায়িকাদের অন্ধকার জীবনের ক্লেদাক্ত কাহিনি’ দেখে বুদ্ধদেব বসুর চটে যাওয়া, রাধাকান্ত শী’কে দিয়ে বুদ্ধদেবের প্রুফে ভুল ধরা, সমরেশ বসুর বাঁশি বাজানো বা টপ্পাঙ্গের গান গাওয়া, আড্ডার ঝোঁকে নেচে ওঠা, তাঁর দ্বিতীয় বিবাহের জন্য হাঁড়ি কড়াই থেকে ঝাঁটা কেনা... সমরেশ বসুর সঙ্গে রামকিঙ্করের সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া, রামকিঙ্করের সঙ্গে রাধারানীর প্রেম-কাহিনি, অন্ধকারে রাধারানীর পাঁচিল বেয়ে ওঠা আর রামকিঙ্করের তাঁকে নামিয়ে নেওয়া, গৌরকিশোর ঘোষের সাংকেতিক চিঠি... এ রকমই অসংখ্য অণুগল্পের সাবলীল সমাহার।

নানা বিশিষ্ট সাহিত্যিকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের খতিয়ান আছে, তাঁদের সম্পর্কে যথাসম্ভব তথ্য দিয়েছেন। অসামান্য হোম-ওয়ার্ক। ইলাসট্রেটারদেরও ভোলেননি। কিন্তু আমার কাছে গভীরতম মনে হয়েছে মতি নন্দী, শিবরাম চক্রবর্তী ও সমরেশ বসু বিষয়ক অধ্যায়। যন্ত্রণার ছবি মাঝেমাঝেই দীপ্যমান হয়ে ওঠে। ‘তুষের আগুনের মতো’ একটা দুঃখবোধ জ্বলত সমরেশ বসুর মনে। ‘শিবরাম সারা জীবন দু’হাতে স্নেহ-ভালবাসা বিলিয়েছেন। কত অচেনাকে আত্মীয় করে নিয়েছেন। তবু মৃত্যুর সময় সেই ভালবাসার জনেদের কোনও স্নেহের স্পর্শ, দু’ফোঁটা চোখের জলও তাঁর বরাতে জোটেনি’। শেষ পর্যায়েও লেখক মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে ওষুধপত্র ও টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর মূল্যায়ন হয়নি বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। লেখকের রয়্যালটি নিয়ে চিন্তা প্রমাণ করে তিনি মনুষ্যত্বকে সারা জীবন আঁকড়ে রেখেছিলেন।

স্বাদু গদ্যের সূক্ষ্ম হাস্যরসের একটি নমুনা: ‘আবেগের আতিশয্যে কঙ্কাবতী (দত্ত) আমাকে অ-‘নাথ’ করে ছেড়েছিল (‘দ্বিজেন্দ্রলাল [হবে ‘দ্বিজেন্দ্রনাথ’] বসু আমাদের কাছে বাদলদা, বাদলদা, বাদলদা’, পৃ ৩৯)। ভূতেদের নিয়ে প্রতুল গুপ্তের নতুন বাড়ির আড্ডার উল্লেখের পরই প্রতুলবাবুর মৃত্যু হয়। লেখকের ভাষায়, ‘পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায় তাঁর শরীর’ (পৃ ৩৩২)।

ঘনিষ্ঠ জনেরা জানেন, ‘অশিক্ষা’র সরল মুখোশ পরে থাকলেও তিনি ছিলেন প্রকৃত সাহিত্যবোদ্ধা। ভুল করে থাকলে (যেমন সুকুমার সেন বা পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শে) নিজেকে ক্ষমা করেননি। তোষামোদে যে চিঁড়ে ভেজে না, তারও নমুনা বইতে আছে। ‘আনন্দ পাবলিশার্সে কাজ করার ফাঁকে আমি বই নিয়ে প্রচুর ভাবতাম। কীভাবে বইকে আরও আকর্ষক করে তোলা যায়।’

আর শেষ অধ্যায়ে আছে আত্মদর্শনের সারকথা: ‘আমার কাছে জীবন মানে যুদ্ধ। জীবন মানে আনন্দ। জীবন মানে ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে পাহাড় কেটে-কেটে চূড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া। ...আমার মিলিত বিপ্লবের দিন ফুরিয়েছে। কিন্তু নিজস্ব বিপ্লব থামেনি। এই মুহূর্তেও আমি যুদ্ধ করছি। এ সেই যুদ্ধ যা কোনও মানুষ এড়াতে পারে না। আমিও পারিনি।...তবু যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, যুদ্ধ আমার থামবে না। আর কমবে না জীবনের প্রতি ভালবাসা।’

এই বইয়ের অনুলেখক ও সম্পাদক সিজার বাগচী। উপস্থাপক হিসেবে তাঁর অসামান্য কৃতিত্ব বাদল বসুর কণ্ঠস্বর ও চরিত্রধর্ম বজায় রাখা। তাঁর নিষ্ঠা ও পরিশ্রম সার্থক। তবে স্মৃতিচারণ-নির্ভর এ বইয়ে তারিখের ব্যাপারটা অনেক সময়েই স্পষ্ট নয়। ছাপার ভুল যে একদম নেই তা নয়। কল্যাণ মজুমদার একাধিক বার ‘চৌধুরী’ হয়েছেন (পৃ ১০৮), একটি জায়গায় রমাপদ চৌধুরীর জায়গায় ‘পণ্ডিতমশাই’ ছাপা হয়েছে (পৃ ৮৫)। নবনীতা দেব সেন বিষয়ক লেখার সঙ্গে সুকুমার সেনের ছবি কেন (পৃ ১৮২)? কার্জন পার্কের ছবিতে সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে বিমল মিত্রের নাম আছে, হবে বিমল কর (পৃ ৪৯৫)। কখনও ‘গোপাল’ হয়েছে ‘গোলাপ’ (পৃ ২৭)। বাদল বসুর মতো প্রাজ্ঞ প্রকাশনা-বিশেষজ্ঞের বইতে এ সব হওয়া উচিত ছিল না।

প্রচ্ছদ নিয়ে ভাবার সুযোগ ছিল। স্কেচ ও কার্টুনটির মধ্যে সুরের ভারসাম্য না থাকায় একটি অসাধারণ বইয়ের অসাধারণ প্রচ্ছদের সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy