Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

প্রাচীন বাংলার শিল্প

আইনব্যবস্থার জটিলতা দীর্ঘসূত্রিতা ব্যয়বহুলতা বারবার বিরক্ত করেছে বিবেকানন্দকে, এতটাই সে বিরক্তি যে তিনি নিজের মেজ ভাইকে আইনব্যবস্থায় যুক্ত হতে দেননি, অথচ ‘একথাও সত্যি যে এক সুদীর্ঘ আইনি লড়াই হাইকোর্টের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের রসায়নটিকেও নানাবিধ মাত্রাদান করে।’

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

স্বামী বিবেকানন্দ/ আদালতের অঙ্গনে ও বাইরে

লেখক: চিন্ময় চৌধুরী

২০০.০০

দে’জ পাবলিশিং

ধর্মগুরু, দার্শনিক, দেশপ্রেমিক, শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক— বিভিন্ন ভাবে স্বামীজিকে মূল্যায়ন করেন মানুষজন। তাঁর এই কর্মময় জীবনের অজানা একটি দিকের অনুসন্ধান চিন্ময় চৌধুরীর বইটিতে। আইনব্যবস্থার জটিলতা দীর্ঘসূত্রিতা ব্যয়বহুলতা বারবার বিরক্ত করেছে বিবেকানন্দকে, এতটাই সে বিরক্তি যে তিনি নিজের মেজ ভাইকে আইনব্যবস্থায় যুক্ত হতে দেননি, অথচ ‘একথাও সত্যি যে এক সুদীর্ঘ আইনি লড়াই হাইকোর্টের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের রসায়নটিকেও নানাবিধ মাত্রাদান করে।’ সে আলোচনাই করেছেন লেখক এ বইয়ের অনেকটা জুড়ে। আইনজীবী পরিবারেই জন্ম স্বামীজির, যৌবনে তিনি আইনবিদ্যা পড়েওছিলেন, কিন্তু পিতার আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে ঠেলে দিয়েছিল হাইকোর্টে বিচারপ্রার্থী হিসেবে। শ্রীরামকৃষ্ণ এক দিকে যেমন তাঁকে সাহস জোগাতেন ‘মামলায় দৃঢ়ভাবে লড়ে যা’ বলে, আবার অন্য দিকে নিষেধও করতেন ‘বিপক্ষকে কামড়িও না।’ এ ছাড়াও বিবেকানন্দের কর্ম ও মননের আরও নানা দিক লেখকের কলমে, বিশেষত তাঁর পরাধীন দরিদ্র পীড়িত ভারতবাসীকে নিয়ে উন্নয়ন-চিন্তা এবং পরধর্ম সহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে। আছে স্বামীজির সংগীত পর্ব ও কবিতা রচনা নিয়েও আলোচনা।

থার্ড থিয়েটার: অন্য স্বর, অন্য নির্মাণ

লেখক: বিশাখা রায়

২২০.০০

থীমা

যৌথ নাট্যনির্মাণের পরীক্ষা বা ওয়র্কশপ-এর বিশিষ্ট প্রক্রিয়াকে যিনি তাঁর থার্ড থিয়েটার আন্দোলনে অপরিহার্য করে তুলেছিলেন, তাঁর নাট্য-আন্দোলনের রাজনৈতিক অভিমুখকে সচেতন ভাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন, তিনি বাদল সরকার। তাঁর এই অনন্য কর্ম ও মননের কথাই বিশাখা রায়ের কলমে। বিশাখা থার্ড থিয়েটার আন্দোলনের অবিসংবাদী অ্যাক্টিভিস্ট, তাঁর অন্তর্ভেদী বয়ানে, অনুপুঙ্খ বিচারে এ আন্দোলনের তাত্ত্বিকতা থেকে প্রায়োগিকতার ঐতিহাসিক তাৎপর্য উঠে এসেছে। বিশাখা ছিলেন বাদলবাবুর অচ্ছেদ্য সঙ্গী, এ বইয়ের শুরুতেই তাঁদের যৌথ সতেজ পদক্ষেপের কথা: ‘আমরা বিশ্বাস করেছিলাম পরিবর্তনের স্থায়িত্বে। বিপ্লব রচনার পুরো আবেগ ঢেলে দিয়েছিলাম থার্ড থিয়েটার আন্দোলন নির্মাণে।... মধ্যবিত্ত আশ্রয় বাদল সরকারকেও ত্যাগ করতে হয়েছিল। হয়ে উঠলেন সক্রিয় থিয়েটার আন্দোলনের কর্মী... ভিন্ন জাতের নাট্যকর্মী তৈরি করতে হলে এই নাট্যনির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বলে আমরা মনে করেছিলাম।’ মিছিল, ভোমা, বাসি খবর, ভাঙা মানুষ ও মানুষে মানুষে... এ সমস্ত নাটকগুলির নির্মাণপ্রক্রিয়ার তীব্র আবেগ আত্মস্থ করার যে বৃত্তান্ত, তা বিশাখার বর্ণনায় হয়ে উঠেছে ভিন্ন এক নাট্যদর্শনেরও উন্মোচন।

দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের মূর্ত্তিশিল্প ও সংস্কৃতি

লেখক: চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত

১৫০০.০০

বিষ্ণুপুর আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবন

বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবন, আর তারই প্রাণপুরুষ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। সংগ্রহ সংরক্ষণের পাশাপাশি রয়েছে দীর্ঘ কাল ধরে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার অজস্র গ্রামে তাঁর নিরলস ক্ষেত্রসমীক্ষা, আর তা থেকে উঠে আসা বিপুল তথ্যভাণ্ডার। এই তথ্যই এ বার তিনি পাঠক-গবেষকদের সামনে তুলে ধরেছেন এই বইয়ে। এখানে তাঁর নজর মূর্তি-ভাস্কর্যের উপর। বইটি দুটি খণ্ডে বিভক্ত: প্রথম খণ্ডে তাঁর অঞ্চলভিত্তিক ক্ষেত্রসমীক্ষার বিবরণ, দ্বিতীয় খণ্ডে দুশোর মতো আলোকচিত্র। ক্ষেত্রসমীক্ষার আওতায় যেমন এসেছে পরিচিত প্রত্নক্ষেত্র পাকবিড়রা, তেলকুপি, বরাকর, বিষ্ণুপুর, তেমনই খোঁজ মেলে বহু অচেনা জায়গার অদেখা মূর্তিসম্ভারের। দুলমির বিশাল প্রত্নক্ষেত্র, অম্বিকানগর-কেন্দ্রিক জৈন দেবী অম্বিকার প্রভাব-পরিমণ্ডল, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ণিত কেচন্দা-র অম্বিকা, বরাবাজার, গঙ্গাজলঘাটির লুপ্ত বীরস্তম্ভ, পাতকুম-ইছাগড়ের বিক্রমাদিত্য বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণে ‘মিনি-মিউজিয়াম’-এ কার্তিক-গণেশ-সরস্বতী-সূর্য-লোকেশ্বর বিষ্ণুর দুর্লভ মূর্তি-ভাস্কর্যের সমাহার যা নাকি দুলমি থেকেই সংগৃহীত, অধুনালুপ্ত সারেংগড়ের বৃষমূর্তি পাঠককে বিস্মিত করে, ঋদ্ধ করে। প্রত্যন্ত গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘোরার সময় যে সব মূর্তি তাঁর নজরে পড়েছে, লিপিবদ্ধ করেছেন তার খুঁটিনাটি বিবরণ। সে বিবরণী থেকে উঠে আসে রাখালদাস এবং বেগলার-পরবর্তী এক জরুরি অবলোকন। এই অঞ্চলে জৈনধর্মের বিপুল ব্যাপ্তি এবং দ্বাদশ শতক পর্যন্ত তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লেখকের মতে, বেশ কিছু উৎকৃষ্ট মূর্তি ‘আঞ্চলিক বলে মনে হয় না। বাণিজ্য-বাহিত হয়ে এখানে এসে পৌঁছেচে।’ লেখকের বর্ণনা প্রাণ পেয়েছে দ্বিতীয় খণ্ডে। বাংলার এক সুপ্রাচীন অঞ্চলের শিল্পসৌকর্য ছবির খণ্ডটি না দেখলে বিশ্বাস হওয়া কঠিন। সব মিলিয়ে বাংলার শিল্প-ইতিহাসে এই বইটি বিশিষ্ট সংযোজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE