ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা। দৃশ্যমানতা বিপজ্জনক ভাবে কমে গিয়েছে। যার জেরে বৃহস্পতিবার সকালেও বাতিল হল একাধিক উড়ান। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্তত ৪০টি উড়ানের সময়সূচি বদলানো হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে রেল পরিষেবাও।
ঘন কুয়াশার জেরে যাত্রীদের জন্য আগে থেকেই সতর্কবার্তা জারি করেছে বিভিন্ন উড়ান সংস্থা। ইন্ডিগো ও স্পাইসজেটের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার বেশ কিছু উড়ানের সময়সূচিতে রদবদল হতে পারে। কোনও কোনও জায়গায় দৃশ্যমানতা বিপজ্জনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। যাত্রীদের আগে থেকে পরিকল্পনা করা এবং বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর জন্য অতিরিক্ত সময় হাতে রাখতে বলা হয়েছে। সকাল ৮টা ১০ মিনিট নাগাদ দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফেও সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
কুয়াশার প্রভাব পড়েছে রেল পরিষেবাতেও। সকালে দেরিতে চলছে ২২টিরও বেশি দূরপাল্লার ট্রেন। এর মধ্যে ১৯২৭২ হরিদ্বার-ভাবনগর এক্সপ্রেস (১ ঘণ্টা ৭ মিনিট বিলম্বিত), ১২৪১৭ প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস (৪ ঘণ্টা বিলম্বিত), ১২৪২৭ রেওয়া-আনন্দ বিহার এক্সপ্রেস (৩ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বিলম্বিত), ২২৪৩৫ নয়াদিল্লি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (৮ ঘণ্টা ৫২ মিনিট বিলম্বিত), ১৪২৪১ নৌচণ্ডী এক্সপ্রেস (৫ ঘণ্টা বিলম্বিত), ১৪২০৭ পদ্মাবত এক্সপ্রেস (প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বিত) ইত্যাদি একাধিক ট্রেন রয়েছে। ঘন কুয়াশার জেরে কিছু কিছু এলাকায় রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে ধীর গতিতে চলছে গাড়িঘোড়া।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, দিল্লি সরকার কর্তৃক গৃহীত কঠোর দূষণ বিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকেই কড়াকড়ি বাড়ছে দেশের রাজধানীতে। বিএস-৬ ইঞ্জিনবিহীন যানবাহনগুলিকে এখন থেকে শহরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র (পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল সার্টিফিকেট বা পিইউসি) ছাড়া কোনও গাড়িকে পেট্রল বা ডিজ়েল দেবে না জ্বালানি স্টেশনগুলিও। পেট্রল পাম্পগুলিকে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যানবাহনে তল্লাশির জন্য আলাদা করে ৫৮০ জন পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়াও, ১২৬টি চেকপোস্টে মোতায়েন করা হবে ৩৭টি এনফোর্সমেন্ট ভ্যান। পরিবহণ বিভাগ, পুরসভা এবং খাদ্য দফতরের কর্মীদেরও পেট্রল পাম্পগুলিতে মোতায়েন করা হবে। ইতিমধ্যেই পেট্রল পাম্পগুলিতে স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ ক্যামেরা বসিয়েছে দিল্লি সরকার, যা বৈধ পিইউসি সার্টিফিকেটবিহীন যানবাহন শনাক্ত করবে।
দূষণ রুখতে এমনিতেই চতুর্থ ও সর্বোচ্চ স্তরের গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (জিআরএপি ৪) কার্যকর রয়েছে দিল্লিতে। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি দফতরে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজের নিদান দেওয়া হয়েছে। যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে ন’টি টোল প্লাজ়া বন্ধ করে দিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং দিল্লি পুরনিগমকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই আবহে শুধুমাত্র বিএস-৬ ইঞ্জিনযুক্ত গাড়িগুলিকে যাতায়াতে অনুমতি দিলে পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদ এবং নয়ডা থেকে দিল্লিতে প্রবেশকারী প্রায় ১২ লক্ষ যানবাহনের গতিবিধিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। নয়ডা থেকে ৪ লক্ষ, গুরুগ্রাম থেকে ২ লক্ষ এবং গাজিয়াবাদ থেকে ৫.৫ লক্ষ যানবাহনের জাতীয় রাজধানীতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে বৃহস্পতিবার থেকে।