Advertisement
E-Paper

কাশ্মীরকে বুঝতে চেয়েছেন

শেখ আবদুল্লার কথাটি আবার মনে করালেন ক্রিস্টোফার স্নেডেন, তাঁর আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাশ্মীর অ্যান্ড কাশ্মীরিজ গ্রন্থে। বলতে দ্বিধা নেই, কাশ্মীরের উপর এটি অন্যতম আকর গ্রন্থও বটে।

তাপস সিংহ

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০০
অবরুদ্ধ: আজাদির দাবিতে বিক্ষোভের আশঙ্কায় পথে পথে সেনা-টহল। শ্রীনগর, ২০০৮। গেটি ইমেজেস

অবরুদ্ধ: আজাদির দাবিতে বিক্ষোভের আশঙ্কায় পথে পথে সেনা-টহল। শ্রীনগর, ২০০৮। গেটি ইমেজেস

আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাশ্মীর অ্যান্ড কাশ্মীরিজ

লেখক: ক্রিস্টোফার স্নেডেন

৬৯৯.০০

স্পিকিং টাইগার

গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে নেমে প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঝুলি থেকে আবার যে তাস বার করেছেন, তার নাম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। স্বাধীনতার পর ৭০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও ভারতীয় ও পাকিস্তানি রাজনীতিকদের ঝুলিতে কাশ্মীরই জাতীয়তাবাদ উসকে দেওয়ার প্রধান অস্ত্র! চমৎকার অভিমত ছিল শেখ আবদুল্লার, দুটি দেশ যেন প্রেমিকের মতো, কাশ্মীরকে পাওয়ার জন্য তীব্র কষ্ট করতেও রাজি!

শেখ আবদুল্লার কথাটি আবার মনে করালেন ক্রিস্টোফার স্নেডেন, তাঁর আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাশ্মীর অ্যান্ড কাশ্মীরিজ গ্রন্থে। বলতে দ্বিধা নেই, কাশ্মীরের উপর এটি অন্যতম আকর গ্রন্থও বটে।

কেন? কাশ্মীর ও কাশ্মীরিদের সমস্যা সম্পর্কে স্নেডেনের গভীর অন্বেষণ মন কেড়ে নেয়। এক জন যথার্থ ইতিহাসবেত্তার মতো কাশ্মীর ও তাঁর মানুষজনকে তিনি দেখতে চেয়েছেন অতীত খুঁড়ে। কিন্তু ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র হয়েই থেমে থাকেননি। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য রূপরেখারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। জানিয়েছেন নানা সম্ভাবনার কথা। যেন তিনি এই দেশেরই বাসিন্দা, কাশ্মীরের মাটি ও মানুষকে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে গভীর ভাবে চেনেন।

আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাশ্মীর অ্যান্ড কাশ্মীরিজ গ্রন্থটি পাঁচটি দীর্ঘ অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে ১৮৪৬ সালে কাশ্মীর গঠনের প্রেক্ষাপটের কথা তুলে ধরেছেন স্নেডেন। কাশ্মীর এলাকা কেন বিখ্যাত ও কেন অন্যান্য অঞ্চলের থেকে আলাদা, তারও ব্যাখ্যা করেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে করদ রাজ্য (প্রিন্সলি স্টেট) জম্মু-কাশ্মীর কী ভাবে গঠিত হল, তার নানা দিক ও ডোগরা রাজাদের শাসন (বা অপশাসন)-এর কথাও তুলে ধরেছেন ক্রিস্টোফার। তৃতীয় অধ্যায়ে সবিস্তার বলা আছে ১৯৪৭-এ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি, মহারাজা হরি সিংহের সিদ্ধান্তহীনতা, ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই করদ রাজ্য কী ভাবে ভাগ হয়ে গেল, সেই বিবরণও। ১৯৪৯-এ রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় দু’দেশের যুদ্ধবিরতির পর থেকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি কী ভাবে পাল্টাতে থাকল, ’৮৮ থেকে কাশ্মীর দেখল, কী ভাবে ভারত-বিরোধী জঙ্গি আন্দোলন দানা বাঁধছে, কী ভাবে পাকিস্তানি মদতে বহিরাগত জঙ্গিরা নাশকতামূলক কাজ করছে। প্রাথমিক ভাবে, কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি দমনে আধা সামরিক বাহিনীর প্রায় তিন লক্ষ জওয়ান জঙ্গিদের কবজা করেছিল। ১৯৯০ থেকে কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিতেরা দলে দলে উপত্যকা ছাড়তে বাধ্য হন। মোটামুটি ভাবে আড়াই লক্ষ কাশ্মীরি পণ্ডিত জম্মু ও দিল্লিতে আশ্রয় নেন। চতুর্থ অধ্যায়ে ক্রিস্টোফার এ সবেরই বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পঞ্চম অধ্যায়ে শুনিয়েছেন কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে নানা সময়ের নানা প্রচেষ্টার কথা।

ইতিহাস বলে, আকবর, জাহাঙ্গির ও আওরঙ্গজেব তাঁদের শাসনকালে কাশ্মীরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আকবর তিন বার এই অঞ্চল ঘুরে যান। তাঁর পুত্র জাহাঙ্গির আট বার এখানে এসেছিলেন। উপত্যকার পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে তাঁর বিশেষ ভাবনাচিন্তা ছিল। তিনিই প্রথম কাশ্মীরকে ‘ভূস্বর্গ’ আখ্যা দেন। শোনা যায়, মৃত্যুশয্যায় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁর শেষ ইচ্ছা কী? ফিসফিস করে তিনি বলেছিলেন, একমাত্র কাশ্মীর।

যুগে যুগে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতিক ও সেনাপ্রধানদের ইচ্ছাও বোধহয় তাই। পাকিস্তান অবশ্য বারে বারেই কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় নিয়ে গিয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করে এসেছে, যা ভারত কখনওই চায়নি। যদিও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর মধ্যে ১৯৭২-এর শিমলা চুক্তি অনুযায়ী, কাশ্মীর সমস্যা একেবারেই দ্বিপাক্ষিক, তা মেটাতে হবে এই দুই দেশকেই। সেখানে কোনও ভাবে তৃতীয় পক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না। ভারত এখনও সেই অবস্থানেই অনড় রয়েছে।

‘আজাদি’র দাবি করছেন কাশ্মীরবাসী। আজাদি মানে তো স্বাধীনতা! এই ‘স্বাধীনতা’র লড়াই কাশ্মীরবাসী বারে বারেই লড়েছেন। সীমান্তের ও পার থেকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিরন্তর চেষ্টা থাকবে কাশ্মীরে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখার। ভারত অবশ্যই চায় যেন তেন প্রকারেণ সে আগুন নিভিয়ে রাখার। তা হলে কি অদূর ভবিষ্যতে কোনও দিন কাশ্মীরে গণভোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে? ক্রিস্টোফার স্নেডেন এখনই সে সম্ভাবনা দেখছেন না। স্নেডেন বলছেন, এতগুলি বছরেও ‘তৃতীয় পক্ষ’ জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে কোনও দিন কাশ্মীর সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে পরামর্শ করা হয়নি। বরং তিনি মনে করছেন, এই সমস্যায় জম্মু-কাশ্মীরবাসীই আসলে ‘প্রথম পক্ষ’। কারণ, এই বিবাদ তাঁদের রাজ্য ও তাঁদের ভিটেমাটি নিয়েই।

ক্রিস্টোফার আদতে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষকও বটে। কিন্তু স্নেডেনের ৩৭২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থ পড়লে এ সবের বাইরে গিয়ে তাঁর অন্য একটি চেহারাও ফুটে ওঠে।

কাশ্মীরের ‘হৃদমাঝার’ বুঝতে চাওয়া এক মানুষের চেহারা!

Book Review Understanding Kashmir and Kashmiris Christopher Snedden Jammu and Kashmir POK
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy