Advertisement
E-Paper

তারুণ্যের চোখে দেখা জীবনের অন্য রূপ

আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত সম্মেলক প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষইংরেজি ‘ট্রান্সলেশন’ কথাটি প্রাথমিক ভাবে ভাষান্তরণ বোঝায়। বাংলায় বলা হয় অনুবাদ। এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর। এর একটি বৃহত্তর অর্থও আছে। কোনও কিছুকে এক রূপ থেকে অন্য রূপে নিয়ে যাওয়াও এক ধরনের অনুবাদ বা ‘ট্রান্সলেশন’।

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০০:০০

ইংরেজি ‘ট্রান্সলেশন’ কথাটি প্রাথমিক ভাবে ভাষান্তরণ বোঝায়। বাংলায় বলা হয় অনুবাদ। এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর। এর একটি বৃহত্তর অর্থও আছে। কোনও কিছুকে এক রূপ থেকে অন্য রূপে নিয়ে যাওয়াও এক ধরনের অনুবাদ বা ‘ট্রান্সলেশন’। এই অর্থে যদি দেখি তা হলে আমাদের সারা জীবন জুড়েই বা প্রকৃতির অনেক কার্যকলাপের মধ্যেই এই রূপান্তরণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। বরফ থেকে জল হয়, জল থেকে বাষ্প, ভাবনা রূপান্তরিত হয় লেখায়, কথায়, ছবিতে, সঙ্গীতে— এ সবকেই আনা যায় রূপান্তরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে। এর একটি বড় ভূমিকা আছে বিশ্বজোড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মধ্যে। একটি সভ্যতার সংস্কৃতিকে অন্য সভ্যতা তাঁর নিজের মূল্যবোধ অনুযায়ী রূপান্তরিত করে আত্মস্থ করে। আবিশ্ব বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের প্রক্রিয়া চলে এই অনুবাদ-কে ভিত্তি করেই।

এই প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতেই আইসিসিআর-এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল একটি সম্মেলক প্রদর্শনী, যার শিরোনাম ‘ট্রান্সলেশন’। এর আয়োজন ও পরিকল্পনা করেছেন আমেরিকার এমার্জেন্ট আর্ট স্পেস এবং কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পী শমীন্দ্রনাথ মজুমদার। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। অংশগ্রহণ করেছেন এ দেশের ও বিদেশের প্রায় ৪০-জন শিল্পী। সকলেরই বয়স ৩০-এর মধ্যে। আজকের তারুণ্যময় বিশ্ব কেমন করে দেখছে জীবনকে এবং শিল্পকে, তারই পরিচয়ে সমৃদ্ধ এই সম্মেলক। সঙ্গে চলেছে একটি কর্মশালা যাতে শিল্পীরা শব্দ বা ধ্বনিকে রূপান্তরিত করেছেন দৃশ্যভাষায়। একটি নির্দিষ্ট ধ্বনি নিয়ে কাজ করেছেন সকলে। কিন্তু প্রত্যেকের চিত্রীয় প্রকাশ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন। এ থেকে বোঝা যায় রূপান্তর সব সময়ই ব্যক্তিসত্তার স্বাতন্ত্র্য সাপেক্ষ।

কিন্তু প্রদর্শিত কাজগুলিকে অনুবাদ-এর প্রকৃষ্ট ভূমিকা কী— তা সব সময় স্পষ্ট নয়। বৃহত্তর অর্থে যদি ধরা যায় তা হলে যে কোনও প্রকাশই তো প্রাসঙ্গিক ভাবনার অনুবাদ। সে কথা আলাদা। এ ছাড়া নির্দিষ্ট অর্থে কি রূপান্তরণ প্রক্রিয়ার কোনও বিশেষ ভূমিকা আছে? সব সময় তা খুব স্পষ্ট নয়। যেমন স্পষ্ট ভাবে তা ধরা পড়েছে রাশিয়ার আলেকজান্দ্রা গার্ট-এর ভিডিও-টিতে। এখানে কারারুদ্ধ একটি মানবীচরিত্রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাতের মুদ্রায় নানা রকম ভঙ্গি করে যাচ্ছে। এই ভঙ্গি কতকগুলো সংকেত-সমষ্টি, যা থেকে বাইরের কেউ কেউ ‘সেন্সরশিপ’-এর বাধা ডিঙিয়ে ওই চরিত্রটির বক্তব্য অনুধাবন করতে পারে। ভাবনার রূপান্তরণের এটা একটা বিশেষ পদ্ধতি।

কলকাতার তরুণ অমিতজ্যোতি বর্মন-এর শিরোনামহীন বিমূর্ত রচনাটি ক্যানভাসের উপর আলকাতরা, ঢেউখেলানো পিসবোর্ড ও পাঁট সেঁটে তৈরি। বুনোটের নিরবয়ব উপস্থাপনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে রচনাটিতে।

আরিয়ামা পালের ইনস্টলেশনটির শিরোনাম ‘মাইগ্রেশন’। গ্যালারির ভূমির উপর তিনি একটি চিত্রিত প্রকোষ্ঠ তৈরি করেছেন যার চার দিকের বাইরের দেওয়ালে রয়েছে লৌকিক ও আদিবাসী চিত্রের নানা কারুকাজ। বরোদা-র ভরত দোদিয়া-র তেলরঙের ক্যানভাসটির শিরোনাম ‘হাউজ অব মিস্ট্রি’। ইতালির শিল্পী ডি চিরিকোর অনুসরণে তিনি রহস্যময় এক স্থাপত্যের অভ্যন্তরকে রূপায়িত করেছেন। এখানে পূর্ববর্তী যুগের এক শিল্পীর ভাবনা কেমন করে রূপান্তরিত হয় বর্তমান প্রজন্মের ভিন্ন পরিবেশের অন্য এক তরুণের কাজে, সে সম্পর্কে ধারণা করা যায়।

তানজানিয়ার শিল্পী এরিক সুমানজে-র ভিডিও-র শিরোনাম ‘ইন দ্য নাইট’। মানুষের অচেতন পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করেছেন এই শিল্পী। ইরানের ফারহাদ বাহরাম। একটি বইয়ের মধ্যে বিধৃত ভাবনাকে তিনি আলোকচিত্রে রূপান্তরিত করেছেন। আলো-অন্ধকারের এক জটিল আবহে একটি নগ্নিকা-শরীর হাঁটু মুড়ে উপুড় হয়ে আছে। আলোকচিত্র হিসেবে রচনাটি অভিনিবেশযোগ্য। কলকাতার গোপাল চক্রবর্তী কাজ করেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস নিয়ে। এই উপন্যাসের ভাবনা নিয়ে রয়েছে হুসেনের ছবি এবং গৌতম ঘোষের চলচ্চিত্র। এই দুইয়ের দৃশ্যকে তিনি ব্যবহার করেছেন তাঁর রচনায়। এ রকম বৈচিত্রময় বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে কাজ করেছেন তরুণ শিল্পীরা।

life
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy