প্রতীকী ছবি।
আলোচ্য গ্রন্থটি উনিশ শতকে রচিত এমন কয়েকটি নাটকের সঙ্কলন, যেগুলি পাঠক ও গবেষকদের দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে বহু কাল— রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত দ্য পার্সিকিউটেড (১৮৩১), মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইতিহাস-আশ্রিত রিজিয়া: এম্প্রেস অব ইন্ডে, এবং ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকায় প্রকাশিত কামিনী: দ্য ভার্জিন উইডো (১৮৭৪)। মধুসূদন দত্তের নাটকটি অসমাপ্ত। এর কিছু অংশ ১৮৪৯ সালে ১০ নভেম্বর ও ১৯৫০ সালের ১২ জানুয়ারির মধ্যে মাদ্রাজ থেকে দ্য ইউরেশিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তৃতীয় নাটকটিতে নাট্যকারের নাম অনুল্লিখিত, যদিও বেঙ্গল লাইব্রেরি ক্যাটালগ-এ লেখক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে জনৈক জি রিচি-র নাম। বিদ্যাচর্চার পরিসরে এই তিনটি নাটকের অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে ইংরেজিতে রচিত ভারতীয় নাটকের উপর আলোচনাকে অসম্পূর্ণ রেখেছে। সেই প্রেক্ষিতে আলোচ্য বইটি এক উল্লেখযোগ্য সংশোধনী।
দীর্ঘকাল যাবৎ মধুসূদনের ইজ় দিস কলড সিভিলাইজ়েশন? (১৮৭১)— মধুসূদনেরই একেই কি বলে সভ্যতা-র ইংরেজি অনুবাদ— ভারতীয় লেখকের লেখা প্রথম ইংরেজি নাটক হিসাবে পরিগণিত হয়ে এসেছে। পরবর্তী কালে অবশ্য প্রমাণিত হয়েছে যে, দ্য পার্সিকিউটেড-ই হল ভারতীয় লেখকের লেখা প্রথম ইংরেজি নাটক। কিন্তু এই কারণটি ছাড়াও উনিশ শতকের শুরুর দশকগুলিতে বাঙালি হিন্দু সমাজ যে বিপুল আলোড়নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তার দলিল ও ফসল হিসাবে এই নাটকের গুরুত্ব অসীম। মধুসূদনের নাটক রিজিয়া যখন রচিত হচ্ছে, ভারতে তখন জেনানা ও পর্দা প্রথার বহুল প্রচলন। তাই এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে এক স্বাধীনচেতা মুসলিম রমণীকে বেছে নেওয়ার মধ্যে আধুনিকতার যে ভাষ্য লুকিয়ে আছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। বিধবা বিবাহ এবং ধর্মান্তরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা হলেও ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস এবং সমালোচনাতে কামিনী নাটকটি অনুপস্থিত। লেখক-পরিচয় সন্ধানে সম্পাদক বিস্তারে উল্লেখ করেছেন ১৮৭০ সালের গণেশ সুন্দরী দেবী সেনের ধর্মান্তরণের বিষয়টি। এই ঘটনার সঙ্গে ব্রাহ্ম সমাজের পত্রিকা ইন্ডিয়ান মিরর-এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে ইঙ্গিত করেছেন যে, লেখক সেই পত্রিকার সঙ্গেই যুক্ত কেউ। কিন্তু, ছদ্মনাম ব্যবহারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক বাংলার বহুমাত্রিক রাজনীতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করেননি সম্পাদক।
ইন্ডিয়ান ড্রামা ইন ইংলিশ: দ্য বিগিনিংস
সম্পা: আনন্দ লাল
৪৫০.০০
যাদবপুর ইউনিভার্সিটি প্রেস
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রচিত হলেও নাটক তিনটি মঞ্চস্থ হয়নি। তথ্যটির মধ্যে রয়েছে বাঙালির নাট্যচর্চায় দিশা পরিবর্তনের ইঙ্গিত। ১৮৩১ সালে যখন দ্য পার্সিকিউটেড রচিত হচ্ছে, সেই সময় হিন্দু কলেজের ছাত্ররা শেক্সপিয়র মঞ্চস্থ করছেন। অর্থাৎ ইংরেজি-শিক্ষিত বাঙালির কাছে ইংরেজি নাটকের কদর থাকলেও ভারতীয় মৌলিক ইংরেজি নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আবার, ১৮৬০ সালে যখন মধুসূদন পাইকপাড়ার রাজাদের কাছে রিজিয়া মঞ্চস্থ করার অনুরোধ করে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন, তত দিনে রামনারায়ণ তর্করত্নের কুলীন কুলসর্বস্ব অভিনীত হয়ে গিয়েছে, এবং বঙ্গদেশের নাট্যচর্চা নিশ্চিত ভাবেই মাতৃভাষা-অভিমুখী হয়েছে। সম্পাদক যদি এই পর্বান্তরের প্রেক্ষিতে নাটক তিনটি পাঠের চেষ্টা করতেন, তা হলে হয়তো কেন ও কী ভাবে ভারতীয় রচিত ইংরেজি নাটক স্বাধীনতা-পূর্ব রঙ্গমঞ্চে ব্রাত্য ছিল, পাঠক তা বুঝতে পারতেন।
সঙ্কলনটিতে পাদটীকার বহুল ব্যবহার এবং এলিপসিসের উপস্থিতি নাটকগুলির অনায়াস পাঠের অন্তরায় হলেও উনিশ শতকীয় বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে অপরিচিত পাঠকের কাছে এই টীকাগুলি নাটকের ব্যঞ্জনা উপলব্ধিতে সহায়ক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy