এক দিন রাতে বর্ডার পুলিশ এসে তুলে নিয়ে গেল জামালুদ্দিন, হাসানুল্লা আর ময়নামতীকে। তাদের কাছে বৈধ কাগজ নেই। যে জেলখানা তৈরিতে মজুর হিসেবে কাজ করেছে তারা, সেখানেই স্থান হল তাদের। জামাল কেবলই ‘দ্যাশ’-এর সন্ধান করে, “হায় আল্লা-আ, এইডি কি তাইলে আমাগ-অ দ্যাশা না-আ... তাইলে আমাগ দ্যাস কুনডা-আ... কই গেল-অ হেই দ্যাশ..।” কুমার অজিত দত্তের ‘দ্যাশ’ গল্পে আত্মপরিচয়ের এই আকুল সন্ধান মেলে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাংলা লোকগীতি, কবিতা, উপন্যাস, গল্পে। প্রসূন বর্মন তার খোঁজ করেছেন করিমগঞ্জ, আগরপাড়া, শিলং থেকে প্রকাশিত সাময়িকীতে। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীর ‘লংতরাই আমার ঘর’ নাটকে ধরা আছে পাহাড়ের জনজাতি ও উদ্বাস্তু বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত, আলোচনা করেছেন পূর্ণিমা সাহা। ভাষাদর্শন নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনায় মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়। রয়েছে অমিয় দেব সৌরীন ভট্টাচার্য প্রসাদ সেনগুপ্তের প্রবন্ধ। চারটি ক্রোড়পত্রের একটি ভাষাবিদ সুনীতিকুমার পাঠককে নিয়ে।
অনুষ্টুপ, গ্রীষ্ম ২০২৫
সম্পা: অনিল আচার্য
৬০০.০০
সংসদ বাংলা অভিধানে ‘প্রাতিস্বিক’ শব্দটির অর্থ স্বকীয়, ব্যক্তিগত। এই নামধারী পত্রিকার আত্মপ্রকাশ সংখ্যাটি ব্যক্তিগত গণ্ডি পেরিয়ে সর্বসাধারণের কাছে কত দ্রুত পৌঁছে যাবে, তা বোঝার জন্য পত্রিকাটির আরও কিছুটা সময় প্রাপ্য। কিন্তু আত্মপ্রকাশ সংখ্যাতেই গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘বিতর্কিত’ শেষ উপন্যাস ও সদ্য নোবেলজয়ী হান কাং-এর বড়গল্পের বাংলা অনুবাদ জায়গা করে নিলে, আগামী পথ চলার সম্ভাবনা নিয়ে আশা জাগে বইকি। গল্পবীক্ষার জীবনানন্দ, শঙ্খ ঘোষের কবিতায় সমাজবাস্তবতা, ফরাসি কবিতায় প্রেম— নিবন্ধ-উপহারের তালিকাটি সমৃদ্ধ। মেধাচর্চাই পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য, বলছে সম্পাদকীয়। সেই উদ্দেশ্য পূরণই হবে পাঠকের প্রাপ্তি।
প্রাতিস্বিক, আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ২০২৫
সম্পা: অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়
৩০০.০০
বিশ শতকের চল্লিশের আন্দোলন বাঙালি সংস্কৃতিতে বামপন্থী জাগরণসূত্রে ‘মনন-জগতে এক চওড়া পলি’ দিয়ে গিয়েছিলেন যে প্রগতিশীল মানুষেরা, সম্প্রতি শতবর্ষে পা রাখা তাঁদেরই কয়েক জনের স্মরণে এই সংখ্যাটি। ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে ছ’টি লেখা; অভ্র ঘোষের প্রবন্ধটি সেই সময়ের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বয়ান ও তর্কের পরিসরে ঋত্বিক ঘটককে স্থাপনা করে বুঝিয়ে দেয়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কোন চোখে দেখতেন এই চিন্তক। সলিল চৌধুরীকে নিয়ে একটিই প্রবন্ধ: প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী তল পেতে চেয়েছেন তাঁর সতত দ্বন্দ্বময় মনন-জীবনের। মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে সাধন চট্টোপাধ্যায় গোপা দত্তভৌমিক ও নীলরতন সরকারের তিনটি লেখা তিন মেজাজের; নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় মধ্যবিত্ত বাঙালির রূপকল্প দেখেছেন হিমবন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়াও রয়েছে সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে নিবন্ধ; ছোটগল্প, কবিতা,গ্রন্থ-আলোচনা।
পরিচয়, শতবর্ষে ঋত্বিক ঘটক সলিল চৌধুরী মহাশ্বেতা দেবী নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
সম্পা: অভ্র ঘোষ
২০০.০০
ব্রাত্য বসু একাধারে নাটককার, নাট্যপরিচালক, মঞ্চ-চলচ্চিত্রের অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী। অতএব বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক, কবি, প্রকাশক, নাট্যব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্রের পরিচালক-প্রযোজকবৃন্দ থেকে অভিনেতৃ, সংস্কৃতির গুণীজন... কেউই প্রায় বাদ পড়েননি সংখ্যাটির লেখক-তালিকা থেকে। আদ্যোপান্ত ব্রাত্য বসুকে নিয়ে নির্মিত এই সংখ্যাটিতে সযত্নে সবিস্তারে সঙ্কলিত তাঁর কর্মপঞ্জি, পুরস্কারপঞ্জি ও জীবনপঞ্জির নানা খুঁটিনাটি। ব্রাত্যর বহুপ্রজ সত্তাকে বিবিধ মননে বিচিত্র অভিমুখে যে ভাবে নিরীক্ষণ ও আলোচনা করা হয়েছে গোটা পত্রটি জুড়ে, ইতিপূর্বে বোধহয় ঘটেনি। সম্পাদককৃত দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ব্রাত্য তাঁর ছেলেবেলা থেকে প্রবেশ করেছেন নিজস্ব সৃষ্টিময় জগতে, সাবলীল কথনে। বলেছেন, “আমি কোনোদিনই নিজেকে নিঃসঙ্গ আবিষ্কার করিনি। কারণ আমি একেবারেই নিঃসঙ্গ নই।”
এই অবগাহন, ব্রাত্য বসু বিশেষ সংখ্যা
সম্পা: অরীন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
১২০০.০০
১৯৭৮ সালে সত্যজিৎ চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশ পায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী স্মারক গ্রন্থ। ‘লোকসংস্কৃতি ও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী’ শিরোনামে সেখানে একটি অতি মূল্যবান প্রবন্ধ লিখেছিলেন লোকসংস্কৃতিবিদ তুষার চট্টোপাধ্যায়। এই সংখ্যাটির শুরুতে ‘পুরনো লেখা’ অংশে ছাপা হয়েছে সেটি। বাংলার লোককথা সংগ্রহের কাজে অগ্রপথিক লালবিহারী দে-র জীবনকৃতির মূল্যায়ন করেছেন সম্পাদক একটি নিবন্ধে, অপূর্বকুমার দে লিখেছেন ‘নাটকের ঋত্বিক’ ঘটককে নিয়ে। বঙ্গদর্শন-এর প্রধান স্তম্ভ বৈচিত্রময় প্রবন্ধ-নিবন্ধ। এই সংখ্যাটিও ব্যতিক্রম নয়, বিষয়গুলিই প্রমাণ: বঙ্কিমী নভেলের বাঙালি পাঠিকা, বাংলা সাময়িকপত্রে বিজ্ঞাপন, স্বল্পশ্রুত কৃষিব্রত, শিল্পিত মুখোশ, লোকনাট্য, পূর্ববঙ্গের কবিগানে দেশাত্মবোধ।
বঙ্গদর্শন ২৩
সম্পা: রতনকুমার নন্দী
৪০০.০০
অখণ্ড বঙ্গে পাবনার বিখ্যাত জমিদার ছিলেন চৌধুরীরা, এই বংশেরই আশুতোষ, যোগেশচন্দ্র ও বিশেষ করে প্রমথ চৌধুরী স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। এঁদেরই সহোদরা প্রসন্নময়ী দেবী, তাঁরই কন্যা প্রিয়ম্বদা— জন্ম যশোরে, ১৮৭০ সালে। প্রিয়ম্বদাকে নিয়ে বাংলায় বইয়ের সংখ্যা হাতে গোনা, ‘দেড়শো বছর পেরিয়েও এই কবিকে নিয়ে কোনো সাহিত্যপত্রিকা কোনো বিশেষ কাজ করেনি’, সেই অভাবই পূরণ করল এই পত্রিকা-সংখ্যাটি। তিনটি ভাগে বিন্যস্ত লেখাগুলি: ‘অনুসন্ধানের আলোয় প্রিয়ম্বদা’ অংশে রবীন্দ্রনাথ ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমথনাথ বিশী প্রমুখের কলমে প্রিয়ম্বদা-কৃতির পর্যালোচনা পুনর্মুদ্রিত। প্রথমাংশে এই সময়ের প্রবীণ-নবীন আলোচকেরা মূল্যায়ন করেছেন তাঁর কবিতার নানা দিক-আঙ্গিক, রবীন্দ্র-সংযোগও। ‘অগ্রন্থিত’ অংশে পড়া যাবে ওঁর উপন্যাস পঞ্চুলাল, আরও কবিতা, কাব্যনাটিকা, ভ্রমণকাহিনি, চিঠি।
কথাকৃতি, সার্ধশতবর্ষ পেরিয়ে উপেক্ষার অন্তরালে প্রিয়ম্বদা দেবী
অতিথি সম্পা: তপন বাগচি
৩০০.০০
স্মৃতিকথা বলতে সম্পাদক এখানে বেছেছেন মূলত আশ্রমিকদের কলমে শান্তিনিকেতনে আশ্রমজীবনের স্মৃতি-তর্পণের পুনর্মুদ্রণ। এর অনেকাংশেরই উৎস অমিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহিলাদের স্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর স্মৃতিধার্য— এক বার আশ্রমে রবীন্দ্রনাথকে গরদের ধুতি-চাদর পরতে দেখা। কী সুন্দর লাগছিল, কেন আপনি ধুতি পরেন না— এর উত্তরে কবি প্রাণখোলা হাসি হেসে বলেছিলেন, “কত ল্যাঠা— কে কোঁচায় কে পাট করে, ঐ-সব দুঃখেই তো বালিশের ওয়াড়গুলো পরে থাকি।” আশ্রমকন্যা, মাস্টারমশাইদের স্ত্রী, নানা দায়িত্বে থাকা মেয়েদের স্মৃতিকথার পাশাপাশি সুধীরঞ্জন দাস সুধাকান্ত রায়চৌধুরী প্রমুখের লেখাও ফিরে পড়া যাবে। ক্রোড়পত্রে মুদ্রিত সম্পাদকের আত্মকথা আমার না বলা বাণী-র প্রথমাংশ: বৃহত্তর ময়মনসিংহের গ্রামে শৈশব-বাল্য, দেশভাগ, শিয়ালদহ স্টেশনে উদ্বাস্তু-জীবন, পরে ট্রেনে শিলিগুড়ি জংশন, নতুন জীবন।
উত্তরধ্বনি, স্মৃতিকথা-আত্মকথা
সম্পা: বীরেন চন্দ
২৫০.০০
টেনেসি উইলিয়ামস-এর লর্ড বায়রন’স লাভ লেটার-এর স্থানীয়করণের সঙ্গে তাঁর নাটককার-জীবন নিয়ে যে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন ব্রাত্য বসু, তাতে লেখালিখির জীবন শুরুর সময় টেনেসির ভাবনার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন: “যা নিজের সম্পর্কে আমাকে সবচেয়ে বেশিবিরক্ত করে, তা হল মানুষের সঙ্গে, পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে আমার অক্ষমতা।” সাক্ষাৎকারে নাট্যনির্দেশক সোহাগ সেন জানিয়েছেন, “যত নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা... ইয়াং ব্লাড আসবে ততই আমাদের থিয়েটারের ভাল হবে।” আছে শিশিরকুমার দাশের অপ্রকাশিত নাটক, বন্দী প্রমিথিউস; নাটক, অনুবাদ-নাটক, অনুবাদ-নিবন্ধ, প্রবন্ধ। শতবার্ষিকী প্রবন্ধ লিখেছেন হাবিব তনভিরকে নিয়ে অর্ণব সাহা, তৃপ্তি মিত্রকে নিয়ে অরিন্দম ঘোষ, বাদল সরকারকে নিয়ে শোভন তরফদার।
ব্রাত্যজন নাট্যপত্র, এপ্রিল ২০২৫প্রধান
সম্পা: ব্রাত্য বসু
৩০০.০০
ছোটগল্পকার হিসেবে বিশ্বসাহিত্যে সমারসেট মম-এর সম্মানের আসনটি আজও সুস্থায়ী। পাশাপাশি বলতে হয় অব হিউম্যান বন্ডেজ-এর রচয়িতার অন্যান্য উপন্যাস আর নাটকের কথাও। মম-এর সার্ধশতবর্ষ পেরিয়েছে সম্প্রতি (জন্ম ১৮৭৪), তাঁর প্রয়াণের ষাট বছর পূর্ণ হবে ডিসেম্বরে: এই দুই স্মরণেই নিবেদিত সংখ্যাটি। একটা বড় অংশ অনুবাদ— মম-এর উনিশটি ছোটগল্প বাংলা অনুবাদে পড়তে পারবেন পাঠক; সঙ্গে উপন্যাস দ্য মুন অ্যান্ড সিক্স পেন্স-এর প্রথম ছ’টি পরিচ্ছেদেরও বঙ্গানুবাদ। একগুচ্ছ প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে তাঁর ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটকের বিষয়ভাবনা ও নানা দিক-আঙ্গিক; মম-এর আত্মজীবনী, তাঁর লেখায় উত্তর-উপনিবেশবাদী ঝোঁক, সিনেমা-সংযোগ। রয়েছে লেখকের জীবন ও গ্রন্থপঞ্জিও। সুব্রত ঘোষের প্রচ্ছদচিত্রে ফুটে ওঠে মম-এর চিন্তাসত্তা।
এবং মুশায়েরা, সমারসেট মম
সম্পা: সুবল সামন্ত
৬০০.০০
‘সিনে সাউথ’-এর মুখপত্র এই পত্রিকাটি আশির দশক থেকে নানা সময়ে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকারদের স্মরণে এক-একটি সংখ্যা প্রকাশ করেছে: চার্লি চ্যাপলিন, আইজ়েনস্টাইন, তারকভস্কি, ২০২৩-এ মৃণাল সেন। সেই প্রবাহেই এ বার ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে এই সংখ্যাটি। যদিও পুরনো ও পুনর্মুদ্রিত লেখাই বেশি— সত্যজিৎ রায় মৃণাল সেন রামানন্দ সেনগুপ্ত মহাশ্বেতা দেবী কুমার সাহনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে সফদর হাশমি— তবু ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষে এই ‘ফিরে পড়া’রও গুরুত্ব আছে, লেখক-মাহাত্ম্যেই। ঋত্বিক ঘটকের ছ’টি প্রবন্ধ, চারটি ছোটগল্প ও সাক্ষাৎকারও মুদ্রিত। ওঁর সময়, ভাবনা, আদর্শবাদ ও কৃতির বিশ্লেষণ, এই সময়ের কলমে।
অন্বীক্ষণ, ঋত্বিক ঘটক জন্মশতবর্ষ সংখ্যা
সম্পা: বিকাশ পাল
৩০০.০০
প্রাণপণে ‘পৃথিবীর জঞ্জাল’ সরানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যিনি, যিনি মুক্তকণ্ঠে নবজাতকের প্রতি অঙ্গীকার করতে পেরেছিলেন, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি’— সেই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মশতবর্ষকে তাদের এই বছরের প্রাক্-শারদ সংখ্যাটির বিষয় হিসাবে গ্রহণ করেছে এই পত্রিকা। সূচিপত্র আলো করে রেখেছে তাঁর কাব্যবৈশিষ্ট্য, গল্প, চিঠিপত্র, অরুণাচল বসুর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সম্পর্ক, তাঁকে লেখা চিঠিগুচ্ছ, কবির স্মৃতিচারণের মতো হরেক মনোজ্ঞ বিষয়, যা সুকান্তের কবিপ্রতিভার পাশাপাশি অন্য পরিচয়গুলিও সযত্নে পাঠকের সামনে তুলে ধরে। কমিউনিস্ট কবির স্বল্পকালীন লেখালিখির পর্ব জুড়ে জনতার অধিকার অর্জনের লড়াইয়ের শাণিত সুরটি ছিল স্পষ্ট। অথচ, এখনও তাঁকে ঘিরে চর্চার অভাব রয়েছে। সম্পাদকীয় দাবি, এ বার সেই অভাব যথাযথ পূরণ হবে।
কোরক, জন্মশতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য
সম্পা: তাপস ভৌমিক
২৫০.০০
প্রায় ন’শো পৃষ্ঠার বিপুলায়তন এই পত্রিকা-সংখ্যাটি ভাবতে বাধ্য করে, একুশ শতকে জীবনানন্দ-চর্চা তা হলে ঠিক খাতেই বইছে— জীবনকালে যে কবি এক রকম মরমেই মরে থাকতেন নিজের কবিতা প্রকাশ আর তাবৎ লেখালিখি নিয়ে, যাঁর প্রচারবিমুখতা ছিল কিংবদন্তিপ্রতিম, তাঁর জন্মের ১২৫ বছরে কেমন প্রাতিষ্ঠানিক আর বৌদ্ধিক চর্চাই না হচ্ছে বঙ্গদেশে! এই সংখ্যাটির বিষয়-বিন্যাস সুভাবিত: গোড়ার প্রায় তিনশো পাতায় জীবনানন্দের সাতটি গল্প ও একটি উপন্যাসের (প্রেতিনীর রূপকথা) পুনর্মুদ্রণ; তাঁকে নিবেদিত কবিতার এক দীর্ঘ সঙ্কলন— শামসুর রাহমান বিনয় মজুমদার আল মাহমুদ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে এই সময়ের কলমে; এবং বহুমূল্য স্মৃতিকথা: লাবণ্য দাশ সুচরিতা দাশ মঞ্জুশ্রী দাশ সঞ্জয় ভট্টাচার্য ভূমেন্দ্র গুহ সুরজিৎ দাশগুপ্তের। ‘মূল্যায়ন’ অংশে সাতাশটি প্রবন্ধ, তার অনেকগুলিই জীবনানন্দ-চর্চায় বহুপঠিত: অজিত দত্ত বুদ্ধদেব বসু শঙ্খ ঘোষের লেখা। সেই ধারাতেই তপোধীর ভট্টাচার্য গোপা দত্তভৌমিক জহর সেনমজুমদার গৌতম মিত্রের লেখাগুলি ধরিয়ে দেয় জীবনানন্দের দিক-দিগন্ত। জীবনানন্দ-বিষয়ক একগুচ্ছ বইয়ের জরুরি আলোচনা ছাড়াও শেষপর্বে রয়েছে কিছু চিঠিপত্র— জীবনানন্দের লেখা, জীবনানন্দকে লেখা।
দিবারাত্রির কাব্য, জীবনানন্দ দাশ ১২৫
সম্পা: আফিফ ফুয়াদ
৭০০.০০
গ্রামনির্ভর, কৃষিনির্ভর বাংলা দেশে হাটই ছিল মানুষের নানা উদ্দেশ্য সাধনের কেন্দ্র, লিখেছিলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে হাটের কথা— মঙ্গলকাব্য থেকে বিদ্যাসুন্দর, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সাক্ষী তার। অতীত-বর্তমানের পত্রপত্রিকাতেও হাট নিয়ে লেখালিখি কম নয়। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকা-সংখ্যাটিতে আবার বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে ‘উত্তরের হাট’। কোচবিহারের সিতাই হাট হয়ে উঠেছিল অসহযোগ আন্দোলনের অকুস্থল, স্বাধীনতার প্রাক্কালে দিনাজপুর রংপুর জলপাইগুড়ির বড় হাটগুলি ছিল কৃষকদের দ্রোহভূমি। উনিশ শতকে ডুয়ার্সের হাটে ও মেলায় গাঁজা মদ আফিমের স্বাভাবিক বিক্রিবাটা; প্রাচীন তরাইয়ের হাটের পরিবর্তন-বিবর্তন; মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের হাটের বৈচিত্র, বৈকুণ্ঠপুর রাজ এস্টেটের গৌরীহাট ও ভারত-ভুটান সীমান্তের চামুর্চি হাটের কথা ও কাহিনি উঠে এসেছে নানা লেখায়: ক্ষেত্রসমীক্ষার মতোই জরুরি।
উত্তর প্রসঙ্গ, উত্তরের হাট
সম্পা: দেবব্রত চাকী
৪০০.০০
তাডোবায় সাতসকালে ফোন। চটপট অকুস্থলে পৌঁছে স্বর্ণ চক্রবর্তী দেখেন, এক সাফারি বাসচালক রাতে মাটিতে শুয়ে ছিলেন, তার জামার ভিতরে একটা সাপ ঢুকে পড়েছে! সাপ ও মানবপ্রাণ, বাঁচাতে হবে দুই-ই, সেটাই বনবিভাগের ‘বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট’! কী করে সফল হল ‘অপারেশন নেমেসিস’, কথায় ছবিতে তারই রোমহর্ষক বর্ণনা পত্রিকার পাতায়। মহারাষ্ট্রের ভিগওয়ান, রাজস্থানের ডেজ়ার্ট ন্যাশনাল পার্ক, মধ্যপ্রদেশের পান্না-বান্ধবগড় বা উত্তরাখণ্ডের রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক, দক্ষিণ ভারতের পুলিকট লেকে হরেক পাখি, ইন্ডিয়ান উল্ফ, স্ট্রাইপড হায়েনা, বাঘ-দর্শনের রোমাঞ্চ উঠে এসেছে লেখক-আলোকচিত্রী যুগলবন্দিতে। মঙ্গলাজোড়িতে লাল কাঁক আর সাপের দ্বৈরথ, বাংলার বনরুই (প্যাঙ্গোলিন) নিয়ে ফিচার সুখপাঠ্য। বন্যপ্রাণ ও প্রকৃতি যে পত্রিকার উপজীব্য, তাকে তো হতেই হবে ঝকঝকে, রঙিন, লেখায়-ছবিতে আকর্ষণীয়। সব শর্তই পূরণ করেছে পত্রিকাটি।
জল জঙ্গল, বইমেলা সংখ্যা
সম্পা: হিরণ্ময় মাইতি
২৫০.০০
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)