শম্ভু মিত্র চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় ও সহ-পরিচালক হিসেবে কাজ করেন ১৯৪৫ সালে, ধরতি কে লাল ছবিতে। তত দিনে থিয়েটারের সঙ্গে তাঁর গাঁটছড়া বাঁধা হয়ে গিয়েছে, ১৯৪৪-এ বিজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের নবান্ন নাটক নির্দেশনার মধ্য দিয়ে। সেই সূত্রেই বম্বের আইপিটিএ-র সেন্ট্রাল কালচারাল স্কোয়াড থেকে আহ্বান আসে তাঁর কাছে, কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি পি সি জোশী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজনার। সে-ছবিতে কৃষক পরিবারগুলির কয়েক হাজার মানুষকে নিয়ে শুটিং করতে-করতে নিজের নতুন অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন শম্ভু মিত্র: “আমি যেন হঠাৎ করেই আমার দেশের বাস্তবতার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালাম। শহুরে আমি মুহূর্তের মধ্যে অনুভব করলাম, আমি যেন এদের কেউ না, বাইরের কেউ।... এই দেশের আত্মাকে উপলব্ধি করতে হলে আমাকে আরও গভীরে পৌঁছতে হবে... ।” তাঁর শিল্পী-জীবনে নাট্যকলা ব্যাপ্ত হয়ে থাকলেও তাতে মাঝে মাঝেই এই চলচ্চিত্রের প্রবেশ নিয়ে যে নির্মোহ তথ্যসম্ভার সাজিয়েছেন লেখক, সে বিন্যাসে যেমন কাহিনির নির্যাস, মসৃণ চলন, তেমনই ইতিহাসের নানান প্রান্তের স্পর্শ। পরাধীন থেকে স্বাধীন ভারতের রূপান্তরে কী ভাবে বদলে যাচ্ছে তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির শিল্প বিষয়ক ভূমিকা, পাশাপাশি শম্ভু মিত্র তাঁর শিল্প পরিক্রমায় কী ভাবে মুখোমুখি হচ্ছেন নতুন বোধ বা দর্শনের, তার হদিস পাবেন পাঠক। ১৯৫৬ সালের ২৪ অগস্ট কলকাতায় মুক্তি পেয়েছিল শম্ভু মিত্র পরিচালিত প্রথম ছবি একদিন রাত্রে, যুগ্ম পরিচালক ছিলেন অমিত মৈত্র। আর কে ফিল্মস-এর ব্যানারে তৈরি এ ছবির প্রযোজক ও প্রধান অভিনেতা ছিলেন রাজ কপূর। জাতীয় পুরস্কারের সম্মান পায় ছবিটি, এর হিন্দি ভার্সন জাগতে রহো কার্লোভি ভ্যারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হয়। ছবিটির চিত্রনাট্য স্থিরচিত্র পোস্টার আছে এ বইয়ে, শম্ভু মিত্র পরিচালিত ও অভিনীত চলচ্চিত্রপঞ্জিও।
ছায়াছবির শম্ভু মিত্র
শান্তনু সাহা
৫০০.০০
লা স্ত্রাদা
সমুদ্রতীরে পাশাপাশি বসে নববিবাহিত দম্পতি। দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে, স্বপ্ন-মাখা চোখে। পরনে লাল বেনারসি শাড়ি, তসরের পাঞ্জাবি, তসররঙা কোঁচানো ধুতি। সি-বিচে বেনারসি কেন? কারণ, সেই ‘অড’টাই ওই বিজ্ঞাপনের ‘ইউএসপি’। সঙ্গে মানানসই হেডলাইন, ‘বেনারসি নিয়ে যাবে ব্যাংকক’। ব্যাংকক শব্দের উপরে বসল রঙিন ছাতা, সমুদ্রতীরের পরিবেশের পাশাপাশি তাতে ধরা পড়বে ওদের একে অপরের আশ্রয় হয়ে থাকার বার্তা। ‘নিয়ে যাবে’ শব্দ দু’টি ছোট করা হল, বেনারসি ও ব্যাংককের মাঝের দূরত্ব কমাতে। অর্থাৎ, বেনারসি কেনো আর সহজেই পৌঁছে যাও ব্যাংকক। এক বিখ্যাত বস্ত্রবিপণির বিজ্ঞাপন তৈরির পিছনের এই গল্প বইয়ে তুলে ধরেছেন লেখক। গোড়াতেই স্পষ্ট জানিয়েছেন, এ বই বিজ্ঞাপন শেখার বই নয়, তার ইতিহাস বা প্রামাণ্য দলিলও নয়। বরং তা ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার, এবং একটি বিজ্ঞাপন তৈরির পিছনে ভাবনা ও শ্রমকে গল্পের ছলে পাঠকের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার। দৃষ্টিনন্দন, মন ছুঁয়ে যাওয়া বিজ্ঞাপনের আড়ালে যে গল্পগুলো চাপা পড়ে থাকে।
হাতে রইল বিজ্ঞাপনের ‘ব’
তরুণকান্তি বারিক
৩০০.০০
অক্ষরবৃত্ত
মন্বন্তরের কলকাতার রাস্তায় মরে পড়ে আছেন মা, স্তন ধরে অবোধ ক্ষুধার্ত শিশু টানছে, কাঁদছে হেঁচকি তুলে। অসহনীয় এই দৃশ্য নাড়িয়ে দিয়েছিল জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রকে। মনে হয়েছিল, ‘উই ওন্ট অ্যালাউ পিপল টু ডাই’— “মানুষের তৈরি এই দুর্ভিক্ষ মানব না, প্রতিরোধ করব, উত্তীর্ণ হব।” একটা ঘোরের মধ্যে কাগজ-কলম হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়া... তৈরি হল ‘নবজীবনের গান’। কলকাতা, বাংলা, মন্বন্তর, স্বাধীনতা সংগ্রাম, আইপিটিএ, নাটক, গান, কবিতা, কমিউনিস্ট পার্টি, সবার উপরে জীবন্মৃত ও মৃত মানুষ— এই সবই ছিল তার অন্তর্গত। গোটা ১৩৫০ বঙ্গাব্দ জুড়েই চলেছিল ‘নবজীবনের গান’ সৃষ্টির পালা; স্বরলিপি করেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। নানা সময়ে নানা পর্যায়ে গেয়েছেন বহু শিল্পী: হেমাঙ্গ বিশ্বাস, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও। কালান্তর পত্রিকায় জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র লিখেছিলেন ‘নবজীবনের গান’-এর ইতিহাস, পরে পরিমার্জিত হয়ে বেরোয় কমিউনিস্ট পার্টির অধর্শতক পূর্তি স্মারকপত্রে, সেই লেখাটি ছাপা হয়েছে এই বইয়ে। ‘নবজীবনের গান’-এর পূর্ণাঙ্গ রূপটিও মুদ্রিত, সঙ্গে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের স্বরলিপিও— মহামূল্য। চিন্মোহন সেহানবীশের লেখা জ্যোতিরিন্দ্র-জীবনকথা ছাড়াও বইয়ে আছে একটি কিউআর কোড, যা স্ক্যান করে দেখা যাবে ২০০১-এ ‘নবজীবনের গান’-এর একটি টিভি-প্রযোজনারূপ।
আমাদের নবজীবনের গান
জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র
৩০০.০০
সপ্তর্ষি প্রকাশন
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)