Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রের চোখেই ‘অপর’

‘মুসলমান’-রা শুধু হিন্দুদের কাছে ‘অপর’ নয় আর, গোটা রাষ্ট্রের কাছেই তারা অপর। অর্থাৎ, খাতায়-কলমে যাই হোক না কেন, ভারতে রাজনৈতিক ভাবে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটি নরেন্দ্র মোদীর জমানা সেরে ফেলেছে।

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০

অব স্যাফ্রন ফ্ল্যাগস অ্যান্ড স্কালক্যাপস/ হিন্দুত্ব, মুসলিম আইডেন্টিটি অ্যান্ড দি আইডিয়া অব ইন্ডিয়া
জ়িয়া উস সালাম
৪৯৫.০০
সেজ পাবলিশার্স

‘অপর’ কে? যার মধ্যে ‘আমি’ নেই কোনও অর্থেই, সব দিক থেকেই যে আমার বিপ্রতীপ, আমি যা নই, যে ঠিক তাই— সেই তো অপর। জ়িয়া উস সালাম তাঁর বইয়ে আলোচনা করেছেন, ভারতে মুসলমানরা কী ভাবে ক্রমে ‘অপর’ হয়ে উঠল। এবং, কী ভাবে ক্রমে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে গণ্য হল সেই ‘অপর’-এর ওপর অত্যাচার। নরেন্দ্র মোদীর ভারতে মুসলমান-বিদ্বেষের চেহারাটা বুঝতে গেলে এই মুহূর্তটিকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। ‘মুসলমান’-রা শুধু হিন্দুদের কাছে ‘অপর’ নয় আর, গোটা রাষ্ট্রের কাছেই তারা অপর। অর্থাৎ, খাতায়-কলমে যাই হোক না কেন, ভারতে রাজনৈতিক ভাবে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটি নরেন্দ্র মোদীর জমানা সেরে ফেলেছে। বিজেপির মেজো-সেজো নেতারা ভিন্ন স্বর শুনলেই যে ভাবে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার সুপরামর্শ দেন, তাতে বোঝা যায়, ভারত নামক ভৌগোলিক-রাজনৈতিক-সামাজিক অস্তিত্বটি তাদের কাছে ‘হিন্দু’স্তান। সেই হিন্দু রাষ্ট্রে মুসলমানরা প্রায় সংজ্ঞাগত ভাবেই অপর। আর, অপর বলেই, তার ওপর অত্যাচার হলে— কখনও গোহত্যার নামে, কখনও জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার অজুহাতে, কখনও ভারত মাতা কি জয় বলতে অস্বীকার করায়— সেই অপরকে মেরে ফেলা যায়। এমনকী, তার বয়স মাত্র পনেরো বছর হলেও। জ়িয়া উস সালাম বারে বারেই ফিরিয়ে এনেছেন এই উদাহরণগুলো। পাঠককে কখনও স্বস্তিতে থাকতে দেননি।

বইটির ব্যাপ্তি অনেকখানি। ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সূচনা থেকে সেই ইতিহাস পেরিয়ে জ়িয়া পৌঁছেছেন নরেন্দ্র মোদীর জমানায়। শুধু মুসলমানদের প্রেক্ষিতেই নয়, রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদ কী ভাবে দলিতদের দেখেছে, কী ভাবে মেয়েদের অবস্থানকে দেখেছে, আলোচনা করেছেন জ়িয়া। কেন রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদের প্রতিস্পর্ধী হিসেবেই দলিত-মুসলমান রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি করার সম্ভাবনা বিপুল, বইটির বিশ্লেষণ থেকে সেই ইঙ্গিত পাওয়া সম্ভব। বইটি তিন পর্বে বিভক্ত। প্রথমটিতে হিন্দুত্বের ইতিহাস, দ্বিতীয় পর্বে মুসলমানদের অপরায়ন পেরিয়ে তৃতীয় পর্বে জ়িয়া ভারত নামক ধারণাটির কথা আলোচনা করেছেন। সেই পর্বটির নামই রেখেছেন ‘দি আইডিয়া অব ইন্ডিয়া’। সেই নামেই সুনীল খিলনানির বহুপঠিত বইটির সঙ্গে জ়িয়ার আখ্যান মিলিয়ে পড়লে পাঠক অনুভব করবেন, ভারত কোন পথে চলেছে।

বইটিতে জ়িয়ার ধর্মীয় পরিচয় প্রকট। লেখকের ব্যক্তিগত পরিচিতি লেখার মধ্যে বারে বারে ফুটে উঠলে তাতে লেখাটির ক্ষতিই হয় কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। আপাতত তাতে ঢোকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু, আবেগ এসে যুক্তির পথ আটকেছে কিছু ক্ষেত্রে। যেমন, রাজস্থানে নিহত আফরাজ়ুল খানের মৃত্যুর পর নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে ২০১২ সালে দিল্লিতে জ্যোতি সিংহের (নির্ভয়া) মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বিপুল সামাজিক বিক্ষোভের তুলনা করে লেখক নাগরিক সমাজকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তুলনাটা যথাযথ হল কি না, তিনি নিজেও ভাবতে পারেন। অথবা, টেলিভিশনের সান্ধ্য তরজা মানেই মুসলমানদের খলনায়ক হিসেবে দেখানোর পরিসর, এই ভাবনার মধ্যেও অতিসরলীকরণ রয়েছে, সবাইকে এক বর্গে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাতে শেষ অবধি উদারপন্থী রাজনীতিরই ক্ষতি।

ভগিনী নিবেদিতা/ মনীষীদের চোখে
সম্পাদক: নন্দগোপাল পাত্র
২৫০.০০
কবিতিকা (প্রাপ্তি: দে বুক স্টোর)

ভারতের নবজাগরণ-কল্পে, শিক্ষা, সেবা, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও রাজনীতির ক্ষেত্রে মার্গারেট এলিজ়াবেথ নোব্‌ল ওরফে ভগিনী নিবেদিতার (১৮৬৭-১৯১১) অবদান চিরস্মরণীয়। নিবেদিতা শুধু বিবেকানন্দই নন, শ্রীশ্রীমার ত্যাগ ও তিতিক্ষার মন্ত্রে উদ্বেলিত, আচ্ছন্ন এবং তাঁদেরই চেতনায় ঋদ্ধ ও প্রজ্জ্বলিত। ভারতবর্ষে তাঁর আগমনকাল থেকে জীবনের অন্তিমকাল পর্যন্ত চৌদ্দ বছরের ইতিহাস ভারতবাসীর মনের গভীরে দাগ কেটে গিয়েছে। এমন নিঃস্বার্থ পৃষ্ঠপোষকতা ভারত তথা বাংলা আর তেমন পায়নি। এ কথা স্বীকার করেছেন ভারতের মনীষীরা। যেমন, সরলাবালা সরকার তাঁর ‘নিবেদিতাকে যেমন দেখিয়াছি’ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘...ভারতবর্ষের কথা উঠিলেই তিনি একেবারে ভাবমগ্না হইয়া যাইতেন। মেয়েদের বলিতেন, ‘ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ! মা, মা, মা! ভারতের কন্যাগণ, তোমরা সকলে জপ করিবে— ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ! মা, মা, মা!’’ এই বলিয়া নিজের জপ-মালা হাতে লইয়া নিজেই জপ করিতে লাগিলেন, ‘মা, মা, মা!’ ভারতবর্ষ যে তাঁহার প্রাণের প্রাণস্বরূপ, কত প্রিয় ছিল, তাহা বলিয়া বুঝাইবার ভাষা খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। কে জানে তাঁহার গুরুদেব তাঁহাকে দীক্ষা দিয়া মৃন্ময়ী ভারতের ভিতর কী চিন্ময়ী প্রতিমার অধিষ্ঠান দেখাইয়াছিলেন, যাহাতে ভারতের ধূলিকণার ভিতরও তিনি আধ্যাত্মিকতারূপ অমৃতরসের সর্বদা আস্বাদ পাইতেন! সেই অমৃতপানে বিভোর হইয়া তিনি যাহা বলিতেন, তাহা শুনিয়া কত লোক তাঁহাকে পাগল বলিত। কিন্তু ধন, মান, যশঃ লইয়াই যাহারা দিবারাত্র পাগল হইয়া রহিয়াছে, তাহারা এমন পাগলের কথা বুঝিবে কিরূপে?’’ এ রকম কুড়ি জন ও নিবেদিতা-অনুজ রিচমন্ড নোব্‌ল-এর নিবেদিতার স্মৃতিচারণাই হল আলোচ্য সঙ্কলনগ্রন্থটির প্রধান উপজীব্য।

Review Books
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy