Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

নারীসমাজের যাপনচিত্র

লেখিকা নিজস্ব কল্পনায় উপস্থাপন করেছেন রামায়ণ-মহাভারতের বারোটি নারী চরিত্র— অহল্যা, কৈকেয়ী, সরমা, মন্দোদরী, সীতা, সত্যবতী, মাদ্রী, কুন্তী, গান্ধারী, হিড়িম্বা, সুভদ্রা ও দ্রৌপদী। কেমন ছিল এঁদের জীবন, মনন, চিন্তন, বাল্য, কৈশোর, বার্ধক্য? অহল্যা কি যথার্থই প্রাতঃস্মরণীয়া ‘পঞ্চকন্যা’র অন্যতমা হওয়ার যোগ্যা?

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০৭:৩৪
Share: Save:

মহাকাব্যে অনন্যা/ দ্বাদশ উপাখ্যান
ভারতী রায়
২৫০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স

অনেকের মতে রামায়ণ আর্যদের উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারতে কৃষি সভ্যতা বিকাশের রূপক কাহিনি। কারও মতে মহাভারত অতীতের তথ্য-ভাণ্ডার। সমাজ-বিবর্তনের ইতিহাস, প্রাচীন যুগে নদী-পর্বতের অবস্থান, রাজনৈতিক নীতি-গঠন, এমনই অজস্র তথ্য আছে এতে। কিন্তু এই দুই মহাকাব্যের আসল গুরুত্ব হল— এখানে বর্ণিত যুগের সঙ্গে আজকের দিনের পদে পদে পার্থক্য থাকলেও, দুইয়ের মধ্যে ‘নাড়ির যোগ’ বিচ্ছিন্ন হয়নি। তাই আজও রামায়ণ-মহাভারতের চরিত্রদের ব্যাখ্যা করা হয় আপন কল্পনায়। লেখিকা নিজস্ব কল্পনায় উপস্থাপন করেছেন রামায়ণ-মহাভারতের বারোটি নারী চরিত্র— অহল্যা, কৈকেয়ী, সরমা, মন্দোদরী, সীতা, সত্যবতী, মাদ্রী, কুন্তী, গান্ধারী, হিড়িম্বা, সুভদ্রা ও দ্রৌপদী। কেমন ছিল এঁদের জীবন, মনন, চিন্তন, বাল্য, কৈশোর, বার্ধক্য? অহল্যা কি যথার্থই প্রাতঃস্মরণীয়া ‘পঞ্চকন্যা’র অন্যতমা হওয়ার যোগ্যা? কৈকেয়ী কি একেবারে অসমর্থনীয়া স্বার্থপর, যেমনটি পড়তে পড়তে মনে হয়? সরমা সীতার সহচরী হিসেবে আমাদের হৃদয়ে যতখানি স্থান অধিকার করে আছেন, ততখানি কি প্রাপ্য তাঁর? মন্দোদরী কি পতিপ্রেমী পত্নী? জ্যেষ্ঠা পত্নী না হয়েও মাদ্রী কেন সহমরণে গেলেন? হিড়িম্বার সঙ্গে ভীমের বিয়ে আর্য-অনার্য বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনের বিচারে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এ বিবাহ কি আর্যরা মেনে নিয়েছিলেন? এমন হাজারো প্রশ্ন নিয়েই লেখিকা বিনি সুতোর কথামালা রচনা করেছেন।

কাঁদনাগীত/ সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত
বেবী সাউ
২৯৯.০০
সৃষ্টিসুখ প্রকাশন

‘‘যখনই ঠাকুমার মনখারাপ হত, কিংবা কোনও দুঃসংবাদ— আমাদের কড়ি-বরগায়, বাড়ির আনাচেকানাচে গুঞ্জরিত হত এক করুণ সুর। ঠাকুমা কথার মাধ্যমে, সুরের মাধ্যমে কেঁদে কেঁদে বর্ণনা করতেন তাঁর জন্ম-মৃত্যু-শোক, হাসিকান্না। তাঁর অভিমান, অভিযোগ।’’ খুব ছোট বেলার এই অভিজ্ঞতা লেখিকার মনে গেঁথে ছিল, পরে ‘কাঁদনাগীত’ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তাঁর ভাবনা পূর্ণতা পায়। কেঁদে কেঁদে কান্নার কারণ বর্ণনা করে গাওয়া গানই কাঁদনাগীত। বিয়ের পর কন্যার বিদায়কালে, শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতিতার ক্ষেত্রে কিংবা মৃতের জন্য শোকপ্রকাশের সময় গাওয়া হয় এই গান। সুর নির্দিষ্ট, কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী তাৎক্ষণিক নতুন কথা যোগ হয়। এ এক প্রবহমান সংস্কৃতি। শ্রোতার মনোরঞ্জনের জন্য এ গান নয়, নিজস্ব কষ্ট থেকে মুক্তির দাবি বা প্রার্থনাও থাকে না। কোনও ধর্মীয় প্রসঙ্গও নেই এতে, ‘কাঁদনাগীত’ সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ লোকগান। ‘রুদালি’ বা ‘মর্সিয়া’ থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। সুবর্ণরেখা নদীতীরবর্তী ওড়িশা ঝাড়খণ্ড ও ঝাড়গ্রাম জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এর সাংস্কৃতিক সীমা। নিরক্ষর নারীসমাজই এই গানগুলির রচয়িতা, সুরকার ও গায়ক, এখানে ধরা পড়ে জনজাতির আঞ্চলিক জীবনের অকৃত্রিম চিত্র। আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ফলে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ‘কাঁদনাগীত’। ২০১৪-১৮ সময়কালে লেখিকা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন, সংগ্রহ করেছেন বহু গান। বিষয় বিশ্লেষণের পাশাপাশি এই বইয়ে সঙ্কলিত হয়েছে একশোটি গান। এক দিকে ধরা রইল এক লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতির কথা, অন্য দিকে প্রান্তিক সমাজের অজানা ইতিহাস।

প্রিয়ম্বদা দেবীর গদ্যসংগ্রহ
সম্পাদক: সুবিমল মিশ্র
৫০০.০০
পৃথা মিশ্র (পরিবেশক: দে’জ)

‘‘অর্দ্ধ শতাব্দীরও ঊর্ধ্বকাল এদেশে পুরুষ-পরিচালিত স্ত্রীশিক্ষা চলিয়া আসিতেছে— ইহাতে আমাদের অনেক অভাব দূর হইলেও অনেক অভাবের দিকে তাঁহাদের দৃষ্টিমাত্র পতিত হয় নাই।’’ প্রায় একশো বছর আগে ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলের সম্পাদিকা প্রিয়ম্বদা দেবী (১৮৭১-১৯৩৫) লিখেছিলেন। সরলা দেবী চৌধুরানি প্রতিষ্ঠিত, মহিলা-পরিচালিত এই সংগঠন সে কালে নারীশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। স্বর্ণকুমারীর ‘সখী সমিতি’, তাঁর মেয়ে হিরণ্ময়ী দেবীর বিধবা শিল্পাশ্রম (পরে মহিলা শিল্পাশ্রম)-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন প্রিয়ম্বদা। আশুতোষ চৌধুরী-প্রমথ চৌধুরীর বোন প্রসন্নময়ী দেবীর কন্যা প্রিয়ম্বদা ১৮৯২-এ বেথুন কলেজ থেকে সংস্কৃতে স্নাতক হন। সেই বছরেই বিয়ে, তিন বছরের মধ্যে স্বামী এবং ১৯০৬-এ একমাত্র পুত্রের মৃত্যুর পর সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চাকেই তিনি জীবনের অবলম্বন করেন। বহু পত্রপত্রিকায় কবিতা, গল্প, নাটকের অনুবাদ, কথিকা-জাতীয় রচনা, শিশুতোষ রচনা লিখেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের লেখন কাব্যগ্রন্থে ভুলক্রমে প্রিয়ম্বদার পাঁচটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। প্রিয়ম্বদা তাঁকে সে কথা জানালে কবি ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ভুল স্বীকার করে নেন। মামা কুমুদনাথ চৌধুরীর শিকারের বইয়ের অনুবাদ (ঝিলে জঙ্গলে শিকার) তাঁরই করা। প্রিয়ম্বদার ছোটদের রচনাগুলি ২০১৪-য় সঙ্কলন করেন সুবিমল মিশ্র, এ বার তাঁর গদ্যরচনাগুলি দুর্লভ পত্রপত্রিকার পাতা থেকে উদ্ধার করে দুই মলাটে এনে দিলেন তিনি। কত বিচিত্র বিষয়ে স্বাদু গদ্যে লিখেছেন প্রিয়ম্বদা, সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করেছেন নানা লেখা, তা আজও সুখপাঠ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Review Books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE